1. admin2@kalernatunsangbad.com : admin : Admin
  2. admin@kalernatunsangbad.com : Khairul Islam :
শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০৬ অপরাহ্ন

বাজারে তেল সিন্ডিকেট কি সরকারের চেয়েও শক্তিশালী?

  • প্রকাশ কাল সোমবার, ১৬ মে, ২০২২
  • ২১৫ বার পড়েছে

News

* রাজশাহী প্রতিনিধি :-


সরকারের তরফ থেকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে। ইতোমধ্যে আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বেআইনি তেল মজুতদারির তথ্য বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। গত সপ্তাহে শুধু রাজশাহীর তিনটি স্থান থেকে প্রায় দেড় লাখ লিটার বেআইনি তেলের মজুত খুঁজে পাওয়া গেছে। এই মজুতদারির সপক্ষে মজুতদাররা কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি বিধায় সব তেল পুলিশ জব্দ করেছে।

রাজশাহীতেই শুধু নয়, ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার লিটার তেল মজুত করে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা, যা পুলিশ এবং ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের রেইডের মাধ্যমে বেরিয়ে আসছে। এর থেকে একটি বিষয় প্রতীয়মান হচ্ছে যে দেশে ঈদের আগের দুদিন এবং পরবর্তী দুদিন যে তেলের সংকট দেখা দিয়েছিল সেই সংকট তেলের অভাবে হয়নি, বরং সেটি হয়েছিল শুধু অসাধু ব্যবসায়ীদের মুনাফাকেন্দ্রিক মানসিকতার কারণে। তারা এটি করেছিল সরকারের সাথে আলোচনা করে তেলের মূল্যবৃদ্ধি করার কারণে।

গত কয়েকদিন আগে তেল ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনায় বাণিজ্যমন্ত্রী একেবারেই হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করে তিনি ভুল করেছেন। তাদের ওপর আস্থা রাখা ঠিক হয়নি। এই বক্তব্য থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায় যে তেল ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধি করার মাধ্যমে মুনাফা করতে ব্যস্ত রয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই সিন্ডিকেট কি তাহলে সরকারের চেয়েও বেশি শক্তিশালী?

অবশ্যই এই সিন্ডিকেট সরকারের চেয়ে বেশি শক্তিশালী নয়। ফলে এই সিন্ডিকেটকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভেঙে ফেলতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সাথে র‌্যাবকে মাঠে নামিয়ে এই সিন্ডিকেটকে ভেঙে ফেলে বাজারে টিসিবির মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে স্বল্প মূল্যে উদ্ধারকৃত তেল বিক্রি করে দিতে হবে। এটি করা গেলে বাজারে অস্থিরতা কমতে শুরু করবে।

ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ী নেতারা বলা শুরু করেছেন যে পুলিশ এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ যদি এরকম রেইড কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে তাহলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হবে। এটি যেমন একদিকে ঠিক, তেমনিভাবে এটা ছাড়া সরকারের কাছে এই অসাধু ব্যবসায়ীদের সঠিক পথে নিয়ে আসার আর কোনো বিকল্প আছে বলে আমি মনে করি না।

তেলের সরবরাহ বাজারে নিশ্চিত হওয়ার সাথে সাথে আবার দেখা যাচ্ছে অন্যান্য পণ্য যেমন- পেঁয়াজ, রসুন, ময়দা ও আটার দামের ক্ষেত্রে কিছুটা ঊর্ধ্বগতি। ফলে এটা থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার ভাবে প্রতীয়মান হয় যে একটি গোষ্ঠী সুপরিকল্পিতভাবে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করার পাঁয়তারা করে চলেছে কয়েক মাস ধরে। এই গোষ্ঠীকে এখনই যদি চিহ্নিত না করা যায়, তবে সেটি আগামীতে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে।

আমরা সবাই জানি যে, ২০২৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ বিভিন্ন ধরনের প্রোপাগান্ডা প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে থেকে যেন বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করা যায় সেই জন্য বিভিন্ন রকম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। একই সাথে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।

গত ১৩ বছর বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশে ব্যাপক উন্নয়নসাধিত হয়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মানুষ অত্যন্ত শান্তিতে বসবাস করছে। কিন্তু নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসার সাথে সাথে এই বছরের শুরুর দিক থেকেই বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। এই অস্থিরতা দ্রব্যের সরবরাহের ঘাটতির কারণে খুব হচ্ছে বলে আমি মনে করি না।

অনেকেই এটির সাথে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার যুদ্ধের একটি সম্পর্ক দেখছেন। এটিকে একেবারে উড়িয়ে দেয়া ঠিক হবে না। আমরা খাদ্যে মোটামুটি ভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও বেশ কিছু খাদ্যদ্রব্য আমাদের আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে। ফলে যুদ্ধের কারণে কিছুটা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হতে পারে। কিন্তু এমন অনেক জিনিস আছে যেগুলো মূল্যবৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ আমি খুঁজে পাই না।

এ কারণেই একটি গোষ্ঠী-যাদের সাথে ব্যবসায়ীদের যোগসাজশ থাকতে পারে- চেষ্টা করে চলেছে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করার। আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে মানুষ বেশ কিছুটা হতাশ। সংসার চালাতে অনেকেই হিমশিম খাাচ্ছে। 

অতএব সরকারের উচিত সব বাহিনীকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বোচ্চ ভাবে ব্যবহার করা। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে মজুতদারদের চিহ্নিত করে শাস্তি প্রদান করা গেলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আবার বাজার মূল্য স্থিতিশীল হবে বলে বিশ্বাস করি। তবে এ বিষয়টিতে খুব বেশি সময় নেয়া উচিত নয়।

এটি ঠিক যে, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে কাজ করছে। তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের সাথে র‌্যাবকে মাঠে নামানো যেতে পারে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আমরা এর আগে র‌্যাব বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতার সাক্ষর রাখতে দেখেছি। অতএব মজুতদারদের চিহ্নিত করে যত দ্রুত সম্ভব বাজার স্থিতিশীল করা সরকারের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।

শেয়ার করুন

অন্যান্য সংবাদসমূহ


প্রযুক্তি সহায়তায় BTMAXHOST