অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পর রাজধানীর বাজারগুলোতে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে।ডিমের দাম ডজনে ৩০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০টাকা পর্যন্ত কমেছে।
জ্বালানি তেল কেরোসিন,ডিজেল,পেট্রল ও অকটেনের মূল্যবৃদ্ধির পর দফায় দফায় বাড়ে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম।এতে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০টাকা হয়ে যায়।এছাড়া ডিমের ডজন ওঠে ১৬০টাকায়।দেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো এত বেশি দামে ডিম বিক্রি হয়নি।
ডিমের এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় চাহিদায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।বিক্রি কমে যাওয়ায় দামও কমেছে।শুক্রবার(১৯ আগস্ট)রাজধানীর বাজারগুলোতে এক ডজন ডিম ১৩০ থেকে ১৩৫টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।আর মুদি দোকানে প্রতিটি ডিম ১১-১২টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কয়েকদিন আগে মুদি দোকানে প্রতিটি ডিম ১৬টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
ডিমের এই দাম কমে যাওয়ার বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো:জাহাঙ্গীর বলেন,হুট করে ডিমের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল।এতে অনেকেই ডিম কেনা কমিয়ে দেন।দুইদিন ধরে ডিমের বাজার পড়তি।মনে হচ্ছে সামনে ডিমের দাম আরও কমবে।
রামপুরার ব্যবসায়ী মো:হাসান বলেন,যেভাবে ডিমের দাম বেড়েছিল,তাতে বোঝা যায় সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হয়েছিল।বিক্রি কমে যাওয়ায় ঠিকই দাম কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।এখন আর দাম বাড়বে বলে মনে হয় না।কারণ যা বাড়ার তাতো বাড়ানো হয়েই গেছে।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী খায়রুল হোসেন বলেন,গত দুইদিনে ডিমের দাম ডজনে ৩০টাকা কমেছে।আমাদের হিসাবে দাম আরও কমা উচিত।আসলে ডিমের দাম পুরোপুরি নির্ভর করে গাজীপুরের ব্যবসায়ীদের ওপর।গাজীপুরে অভিযান চালালে কয়েকদিনের মধ্যে ডিমের দাম আরও কমে যাবে।
এদিকে,গত সপ্তাহে ২০০টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগির দাম কমে আজ ১৮০টাকা বিক্রি হচ্ছে।ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দামও কিছুটা কমেছে।সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০থেকে ৩০০ টাকা,যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০০থেকে ৩২০টাকা।
দাম কমলেও ব্রয়ালর মুরগি যে দামে বিক্রি হচ্ছে তাকে স্বাভাবিক বলছেন না ক্রেতারা।রামপুরা বাজারে ব্রয়লার মুরগি কিনতে আসা ফাতেমা বলেন,ব্রয়ালার মুরগির কেজি ১৮০টাকা চাচ্ছে।এই দাম কিছুতেই স্বাভাবিক না।ব্রয়ালর মুরগি কেজি দেড়শ টাকার ওপরে হওয়া উচিত না।
তিনি বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি।দুইশ টাকা নিয়ে বাজারে গেলে তেমন কিছুই কেনা যায় না।সবকিছুর দাম বাড়ায় আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষ খুব কষ্টে আছে। আমাদের কষ্ট কেউ দেখতে পায় না।মুরগির দামের বিষয়ে কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ী মিজানুর বলেন,কাপ্তান বাজার মুরগির বাজারের জন্য পরিচিত হলেও, মুরগির দাম এখানকার ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভর করে না। মুরগির দাম নির্ভর করে গাজীপুরের ব্যবসায়ীদের ওপর।
তিনি বলেন,যখন চাহিদা বাড়ে তখন খামারিরা হুট করে মুরগির দাম বাড়িয়ে দেয়।আবার চাহিদা কমলে দাম কমিয়ে দেয়।এখানে কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ীদের কিছু করার নেই। এখন মুরগির চাহিদা কিছুটা কমায় দামও কমে গেছে। আমাদের ধারণা সামনে আরও কমবে।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে,বাজারে সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শিম।২৫০গ্রাম শিম বিক্রি হচ্ছে ৫০টাকা। তবে কেউ এককেজি নিলে ১৯০টাকা রাখা হচ্ছে।সপ্তাহের ব্যবধানে শিমের দামে পরিবর্তন আসেনি।
শিমের মতো দাম অপরিবর্তিত রয়েছে পাকা টমেটোর। এক কেজি পাকা টমেটো বিক্রি বিক্রি হচ্ছে ১০০থেকে ১৩০টাকা। গাজর বিক্রি হচ্ছে ১২০থেকে ১৩০টাকা কেজি।বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০থেকে ৮০টাকা।সপ্তাহের ব্যবধানে এ দুটি সবজির দামেও পরিবর্তন আসেনি।
দামি এই সবজিগুলোর পাশাপাশি দাম অপরিবর্তিত রয়েছে অন্যান্য সবজির। বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০থেকে ৭০ টাকা,কাঁকরোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০থেকে ৭০টাকা,কাঁচা পেঁপের কেজি ২০থেকে ২৫টাকা,পটল ৪০থেকে ৫০টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।কচুর লতি,ঝিঙে,চিচিঙ্গার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০থেকে ৫০টাকা।করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০থেকে ৮০টাকা।
সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন,জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় গত সপ্তাহে সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ১০থেকে ২০টাকা বেড়ে যায়।এ সপ্তাহে সবজির দাম তেমন পরিবর্তন আসেনি। সব সবজিই গত সপ্তাহের দামে বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজ ও আলুর।পেঁয়াজ গত সপ্তাহের মতো ৪৫থেকে ৫০টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০টাকা।তবে কাঁচা মরিচের দাম কমেছে।গত সপ্তাহে ২৫০গ্রাম ৬০টাকা বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচ এখন ৩০থেকে ৪০টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে,রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০থেকে ৪৫০টাকা।তেলাপিয়া,পাঙাস মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০থেকে ১৯০টাকা।শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০থেকে ৪৬০টাকা।কৈ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০টাকা।পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০থেকে ৫০০টাকা।সপ্তাহের ব্যবধানে এসব মাছের দামে পরিবর্তন আসেনি।
দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ইলিশ মাছের।এক কেজি ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬০০থেকে এক হাজার ৮০০টাকা।৭০০-৮০০গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০থেকে এক হাজার টাকা।আর ৪০০-৫০০গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০থেকে ৮০০টাকা।