সোহেল রানা রাজশাহী বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান
রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে পুরোদমে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটা ও মাড়াই। জেলায় এবার ঝড়-ঝাপটা তেমন না থাকায় ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আর ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় খুশি চাষিরা। তবে শ্রমিক সংকট দেখা দেওয়ায় বাম্পার ফলনের আনন্দ বিলীন হচ্ছে। কৃষকরা বলছেন অতিরিক্ত অর্থ দিয়েও মিলছে না শ্রমিক।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, জেলায় এবার বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৬৫ হাজার ৩০০ হেক্টর জমি। তবে তা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ৬৮ হাজার ৬০০ হেক্টর। শুধু তাই নয়, জেলার সব উপজেলায় এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে নতুন ধান ঘরে তুলতে মাঠে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কৃষকরা জানান, এবার শুরুতে বোরো ধান রোপণে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে দামও ভালো থাকায় ব্যাপক খুশি তারা। তবে বরেন্দ্র অঞ্চলে ধান লাগানো থেকে কাটা-মাড়াইয়ের বেশিরভাগ শ্রমিকই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর। গত কয়েকবছর ধরে তারা শহরে গিয়ে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। ফলে গ্রামে ধান কাটার শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে।
জেলার দুর্গাপুর উপজেলার কৃষক সবুর আলী বলেন, এবার পাঁচ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। জমিতে ভালোই ধান হয়েছে। ধান কাটা শুরু করেছি। তবে শ্রমিক পাচ্ছি না। জনপ্রতি শ্রমিক মজুরি চাচ্ছে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা।
তিনি বলেন, প্রতিবছর চাঁপাইনবাবগঞ্জের শ্রমিকরা দলে দলে এসে রাজশাহী অঞ্চলে ধান কাটেন। এবার এখন পর্যন্ত তারাও আসেননি। ফলে অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিয়েও ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষকরা বলেন, চলতি বোরো মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ভালো ফলন হয়েছে। এখন বোরো ধান কাটার ভর মৌসুম। কিন্তু শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় যারা আছেন তারা পারিশ্রমিক হাঁকাচ্ছেন বেশি। আগে ছয়-সাতজন শ্রমিক এক বিঘা ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করে দিলে প্রায় আড়াই মণ ধান দিতে হতো। এবার শ্রমিকেরা সাড়ে চার মণ চাচ্ছেন। তাও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ধানের বদলে টাকা দিলে একজন শ্রমিককে এখন এক বেলার জন্যই দিতে হচ্ছে ৪০০-৪৫০ টাকা। গতবছর শ্রমিকের পারিশ্রমিক কম ছিল।
তিনি আরও বলেন, ঈদের আগের তাপদাহের কারণে জমিতে বেশি পরিমাণ সেচ দিতে হয়েছে। এতে আগেও অনেক খরচ হয়ে গেছে। ধানের বাম্পার ফলনের আনন্দ শ্রমিক সংকটের কারণে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
কৃষকরা জানান, সময়মতো সেচের পানি পাওয়ায় ও আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার ধানের ব্যাপক ফলন হয়েছে। আবহাওয়া এরকম থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। তবে শ্রমিক সংকটের কারণে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
পবা উপজেলার কৃষক আব্দুল গফুর বলেন, এবার ব্রি-২৮ ও জিরাশাইল জাতের ধান আবাদ করতে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে সাত থেকে আট হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি ধানের ফলন ২০-২২ মণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ধানের যে দাম তাতে তেমন লাভ হবে না। এছাড়া শেষ পর্যন্ত শ্রমিক পাওয়া না গেলে ক্ষতি হয়ে যাবে।
দাম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, গত বছরও আমন ধানের দাম ১৩০০ টাকা মণ পেয়েছি। এবার ধান আবাদে খরচ বেশি হলেও দাম ১২০০ টাকা মণ চলছে। এই দামে আমাদের চলবে না। এছাড়া শ্রমিক সংকটের কারণেও অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহী জেলায় এবার বোরো ধান আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা ছাড়িয়ে গেছে। ধানের ফলনও বেশ ভালোই হচ্ছে। এরইমধ্যে রাজশাহী জেলায় বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়ে গেছে। বাজারের বিক্রি হচ্ছে ধান। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। তিনি বলেন, এখন ধান কাটা চলছে। শ্রমিক সংকট তো রয়েছেই। কারণ, রাজশাহীর ধান কাটেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শ্রমিকরা। তারা এখনও আসেননি