আতাউর রহমান বাচ্চু
নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি-
ঈদের ছুটিতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাড়িতে ফেরার কথা ছিল সাভার থানার এসআই ফজলুর রহমান কবিরের। কিন্তু লাশ হয়ে লাশবাহী গাড়িতে করে শুক্রবার নান্দাইল উপজেলার মেরেঙ্গা গ্রামে ফিরে আসলো তাঁর মরদেহ। সঙ্গে ছিল তাঁর মা, স্ত্রী ও ছোট্ট দুই সন্তান। লাশ বাড়িতে পৌঁছলে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
পবিত্র ২৭ রমজান শুক্রবার বাদ জুমা জানাজা শেষে তাঁর লাশ দাফন করা হয় পারিবারিক কবরস্থানে।
মুশুলী ইউনিয়নের মেরেঙ্গা গ্রামের (নিজামপুর ভূঁইয়া বাড়ি) মৃত শুনু ভূঁইয়ার তিন ছেলের মধ্যে কনিষ্ঠ ফজলুর রহমান কবির (৩৯)। স্থানীয় আব্দুল জব্বার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং নান্দাইল সরকারি শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এর পর এলএলবি পাস করেন তিনি। ২০০৬ সালে পুলিশের কনস্টেবল পদে যোগদান করেন। পদোন্নতি পেয়ে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ও ৬ বছর আগে উপপরিদর্শক (এসআই) হন। সর্বশেষ সাভার থানায় কর্মরত ছিলেন। তাঁর সঙ্গে সাভারে বসবাস করতেন স্ত্রী মেঘলা, ৩ বছরের মেয়ে আয়াত, ১৮ মাস বয়সী ছেলে আলভী ও মা শরবানু।
বৃহস্পতিবার সাভার থানা এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতে সহায়তা করেন এসআই কবির। এর পর দুপুর ২টার দিকে স্থানীয় একটি পেট্রোল পাম্পে রাখা তাঁর মটরসাইকেল নিয়ে থানায় ফেরার পথে তাঁকে চাপা দেয় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বালুবাহী ট্রাক। রাজধানীর একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। পরে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাভার থানার পাঁচজন পুলিশ একটি ফ্রিজিং গাড়িতে করে লাশ নিয়ে কবিরে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান শুক্রবার ভোরে।
কবিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, লোকজনের ভিড়। বাড়ির সামনেই লাশবাহী গাড়ি। ঘরের ভেতর থেকে আসছে স্বজনের কান্নার শব্দ। নিহত কবিরের বড় ভাই হারুন অর রশিদ সিভিল এভিয়েশন ঢাকায় কর্মরত। তাঁর ভাষ্য, সাভার থানা পুলিশ সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাটি জানিয়েছে তাদের। তিনি বলেন, ‘মা কবিরের কাছেই ছিলেন। কথা ছিল ঈদের ছুটিতে শুক্রবারে সবাই একসঙ্গে বাড়িতে আসবেন। সবাই এসেছে, তবে আমার আদরের ছোট ভাইটি লাশ হয়ে ফ্রিজিং গাড়িতে করে।’ এটুকু বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
প্রতিবেশী ফাইজুল মাষ্টার, জালাল উদ্দিন, ফরিদ মিয়া, দুলাল ফকির জানান, কবির ছিলেন তাদের গ্রামের গর্ব। কোনো ধরনের হিংসা-বিদ্বেষ ছিল না তাঁর ভেতর। সবার সঙ্গেই সবসময় হাসিমুখে কথা বলতেন।
লাশের সঙ্গে আসা সাভার থানার এএসআই নেসার উদ্দিনের ভাষ্য, কবিরকে চাপা দেওয়া ট্রাকটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে চালকসহ আটক করা হয়েছে।
নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, জানাজায় অংশ গ্রহণসহ সব ধরনের সহযোগিতা করতে এসআই সালামের নেতৃত্বে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।