সোহেল রানা রাজশাহী বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান
উত্তর জনপদের শষ্য ভান্ডার খ্যাত নওগাঁর আত্রাইয়ে বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকারী ফসল ‘সোনালী আঁশ’ নামে খ্যাত পাট চাষে দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক।
চৈত্র থেকে আষাঢ় মাস পাট চাষের উপযুক্ত সময় হলেও বৈরী আবহাওয়া, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, সময়মতো মাঠে পানি না থাকা, বাড়তি খরচসহ নানা সমস্যার কারণে পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন এমটিই বলছেন উপজেলার প্রান্তিক কৃষকেরা।
এক সময় এ উপজেলায় ব্যাপক পাটের চাষ হলেও নানা কারনে পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কৃষক। এক যুগ আগেও এ অঞ্চলে দুই ও তিন ফসলী জমিতে ধান, গম, আলু, সরিষাসহ বিভিন্ন ফসল তোলার পর পাটের চাষাবাদ করা হত। কিন্তু এখন আর এমন চিত্র চোখে পড়েনা।
জানা যায়, ৬০ এর দশকে দেশের খ্যাতমান পাটক্রয় কেন্দ্র ছিলো নওগাঁর আত্রাইয়ে। এক সময় উপজেলার র্যালী বার্দ্রাস নামে বিখ্যাত সেই পাট কেন্দ্রে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকারেরা পাট ক্রয় করে তা আবার নৌপথে পাঠাতো দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের বিভিন্ন জুটমিলে। সে সময় সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রতিদিন শত শত টন পাট ক্রয় করা হতো চাষিদের কাছ থেকে। নায্যমূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা নিয়ে প্রান্তিক কৃষকেরাও ঝুকে পড়তো ব্যাপকহারে পাটচাষে। আত্রাই থেকে এ পাটগুলো দেশের দক্ষিণঅঞ্চলের জেলা খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন জুটমিলে নৌপথে ও রেল পথে নিয়ে যাওয়া হতো। জনশ্রুতি আছে আত্রাইয়ের পাট শুধু দেশেই নয় বরং দেশের চাহিদা মিটিয়ে আকাশ পথে উড়জাহাজ যোগে পাঠানো হতো ইংল্যান্ডে। আবার এক সময় বর্ষার ভরা মৌসুমে স্থানীয় হাট-বাজার সংলগ্ন নদীর ঘাটে পাট বোঝায় অসংখ্য নৌকার দেখা মিললেও এখন আর দেখা মিলছে না। এখন গ্রামীন জীবনে সেই দৃশ্য এখন শুধুই অতীত। কালের বিবর্তনে পাট চাষ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এখনও কিছু কিছু জমিতে পাটের চাষ করতে দেখা যাচ্ছে।
তবে পাট চাষে আবারও কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে প্রণোদনাসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। এছাড়া পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব হলে পাটের আবাদ আবারও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে আত্রাই উপজেলায় ২৫৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্র নিধারণ করা হলেও পাট চাষ করা হয়েছে ১৮৫ হেক্টর জমিতে।
এ ব্যাপারে উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের কৃষক ওয়াজেদ আলী প্রামানিক বলেন, গত বছর ১বিঘা জমিতে পাট চাষ করে আমি বিপাকে পড়েছিলাম। একে তো পাট জাগ দেয়ার জায়গা পাওয়া যায়না। লেবার খরচও অনেক বেশি। তাই এ বছর আমি পাট চাষ করিনি।
উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের তারাটিয়া ছোটডাঙ্গা গ্রামের আদর্শ কৃষক আব্দুস ছামাদ প্রামানিক বলেন, পাট চাষে অনেক শ্রম দিতে হয়। উৎপাদন খরচও বেশি। তাই আমি এখন পাটের বিপরিতে ভ’ট্টা চাষ করে থাকি।
এ বিষয়ে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদ হাসান বলেন, কয়েক বছর থেকে এ উপজেলায় বন্যা কম ফলে পাট জাগ দিতে কৃষককে বিপাকে পড়তে হয়। পাট কাটতেও খরচ বেশি লাগে। সেই তুলনায় ভ’ট্টাতে খরচ কম হয়। ফলে কৃষকেরা এখন ভুট্টা চাষে ঝুঁকছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাপশ কুমারের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, উত্তর জনপদের জেলা নওগাঁর আত্রাইয়ে এক সময় পাটের ব্যাপক চাষ করা হত। কিন্তু বর্তমানে পাট থেকে আঁশ ছাড়ানো যে প্রক্রিয়ায় জাগ দেয়া। এ জাগ দেওয়া পানি স্বল্পতার কারণে পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক এমনটিই জানালেন তিনি।