মুফতি সুলাইমান আহমদ
ঘুমন্ত মানুষকে ডাকা – কথাটি সহজ হলেও ইসলামী আদবের দৃষ্টিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যেকোনো মানুষকেই ঘুম থেকে জাগাতে গেলে তার প্রতি সম্মান, কোমলতা ও সহমর্মিতা দেখানো উচিত। ইসলাম এমন একটি দ্বীন, যেখানে ঘরের দরজা খোলার সময়ও আদব শিখিয়েছে। তাই ঘুমন্ত মানুষকে ডাকার ক্ষেত্রেও রয়েছে সূক্ষ্ম নীতিমালা।
১. শান্ত ও কোমল কণ্ঠে ডাকা
ঘুমন্ত ব্যক্তিকে ডাকার সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ পদ্ধতি হচ্ছে—নরম ও মধুর কণ্ঠে, তার নাম ধরে ডাক দেওয়া। চিৎকার, রুক্ষতা বা জোরে ধমক Islam সমর্থন করে না।
রাসূল (সা.)-এর আচরণ:
তিনি সাহাবীদের ঘুম থেকে ডাকার সময় বলতেন:
“الصلاة خير من النوم”
অর্থাৎ: “নামায নিদ্রা থেকে উত্তম।” (তিরমিযী)
এই বাক্যটি আজও ফজরের আজানের অংশ হয়ে রয়েছে।
২. আলতোভাবে স্পর্শ করা
চোখে আলো ফেলা বা জোরে টান দেওয়া নয়, বরং কাঁধে কিংবা হাতে হালকা ছোঁয়া দিয়ে ডাকা উত্তম। এটি নবীজীর সুন্নাত।
সহীহ বুখারীতে এসেছে:
“তিনি (সা.) আলী (রাঃ) ও ফাতিমা (রাঃ)-কে ঘুমন্ত দেখে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললেন, ‘তোমরা নামাজ পড়ো না?’”
(সহীহ বুখারী: ১১২৭)
৩. কল্যাণের কথা বলে জাগানো
ঘুমন্ত ব্যক্তিকে যদি উত্তম বাক্য, দুআ বা কল্যাণের কথা বলে জাগানো হয়, তবে সে বিরক্ত না হয়ে আনন্দ অনুভব করবে।
যেমন বলা যেতে পারে:
“ভাই, আপনি নামাজের সময় হয়ে গেছে”, “আল্লাহ যেন আপনার দিনটি বরকতময় করেন।”
৪. চিৎকার, ধমক বা অপমান থেকে বিরত থাকা
ঘুমন্ত মানুষকে জোরে চিৎকার করে, ধমক দিয়ে, বা অপমান করে জাগানো ইসলাম বিরোধী। এতে তার মন খারাপ হয়, সম্পর্ক নষ্ট হয় এবং ঘুম থেকে উঠেই সে বিরক্ত হয়ে পড়ে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন:
“ভদ্রতা ঈমানের অংশ।”
(সহীহ মুসলিম: ৩৫)
৫. ঘুম থেকে ওঠানোর পেছনে সদিচ্ছা থাকা উচিত
কেবল বিরক্তি বা কাজ করানোর উদ্দেশ্যে নয়, বরং নামাজ, কুরআন পাঠ, দায়িত্ব পালনের জন্য জাগানো হলে তা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত হয়।
উপসংহার:
ঘুমন্ত মানুষকে জাগানোর বিষয়টি যতটা সাধারণ, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করে কোমলতা ও সহানুভূতির সঙ্গে ডাক দিই, তবে ঘুমন্ত ব্যক্তি শান্তচিত্তে জেগে উঠবে, সম্পর্ক মজবুত হবে এবং তা আমাদের দ্বীনি শিষ্টাচারের পরিচয় বহন করবে।
লেখক: ইমাম ও খতিব, পশ্চিম মাথিয়া কেন্দ্রীয় বড় মসজিদ, কিশোরগঞ্জ সদর।