অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগম
১৭/৫/২৩
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের ৫৩ বছর পার হয়ে গেলো।মুক্তিযোদ্ধা সূর্য সন্তানেরা, যারা অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধে নেমেছিলো ও একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর লাল সবুজের পতাকা হাতে বিজয় চিনিয়ে এনেছিলো। তারা একে একে না ফেরার দেশে চলে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের প্রত্যাশিত আকাঙ্খার বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছে না। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আপামর জনগণ মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিলো, সে গনতন্ত্র আজো প্রাণ খুলে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে কি?
পচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর কখনও স্বৈর শাসক,কখনওবা সেনা শাসক,স্বাধীনতা বিরুধী জোট শাসক গণতন্ত্রকে লক্ষচুত্য,আদর্শ বর্হিভূত অবস্থানে পৌঁছে দেয়ার জন্য করেছে গভীর ষঢ়যন্ত্র,আজো যার ধারাবাহিকতা রয়েছে অব্যহত। ফলে গণতন্ত্রের একটি শক্ত ভীত গড়ে ওঠেনি।
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসার সাড়ে তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুকে পরিবারের সদস্যসহ নিমর্ম ভাবে হত্যা করে।সেই ষঢ়যন্ত্রকারীরা হত্যাকারী ঘাতকদের রাস্ট্রীয় ভাবে পুরস্কৃত করে,এমন কি সাংবিধানিক আইন করে ঘাতকদের দায়মুক্তির রাস্তা তৈরীর মাধ্যমে ইতিহাসে নজিরবিহীন কলংকজনক অধ্যায়ের জন্ম দেয়। যে শাহ আজিজ পাকিস্তানের পক্ষে সাফাই গাইতে জাতি সংঘ পর্যন্ত গিয়েছিলো, সেই তাকেই প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসিয়ে প্রবিত্র জাতীয় সংসদকে করে বিতর্কিত। প্রশ্ন রেখে বলতে চাই এ দেশের জনগণ ১৯৭১এ মুক্তিযুদ্ধ করেছিলো কি এই দুঃখজনক দৃশ্য দেখার জন্য?
ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তে লিখা জাতীয় সংবিধানে থেকে ধর্মীয় নিরপেক্ষতা শব্দটি ঝেরে ফেলে দিয়ে সাম্প্রদায়িক চেতনাকে উস্কে দেয়। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত অবস্থানে ছিলো তাদেরকে করে মূল্যবান অবস্থানে পদায়ন।তদসঙ্গে রাজনীতি করার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। আমরা অভাগা বলেই এতোসব যন্ত্রণা, অপমান সহ্য করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে বুকে লালন করে বেঁচে আছি।
একটি কথা জেনে রাখা ভালো -পাকিস্তান শাসনামলে কমিউনিস্ট পার্টি ছিলো নিষিদ্ধ।কেউ মার্কস-এঙ্গেলস এর নাম উচ্চারণ করতে পারতো না।স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বামপন্থীদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়।সেই তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঘাতকদের সাথে মিশে বিজয় উল্লাস করেছিলো।যোগ দিয়েছিলো মন্ত্রী সভায়,গ্রহন করেছিলো হাসিনা হঠাও কর্মসূচি। হায় বিস্ময়কর রাজনীতির হালচাল।
মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর বৈরী পরিবেশে পরে বহু চড়াই উৎরাইয়ের রাস্তা পাড়ি দিয়েছিলো।সে দলের প্রধান নেতৃত্বকারী বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের তেইশ বছরের শাসনামলে তের বছরই কাটিয়েছেন কারাগারে। দুই বার ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন। তারপরও দল ও দল নেতা ষঢ়যন্ত্রকারীদের কাছে মাথা নত করেনি। বরং পূর্বপাকিস্তানের জনগণকে শোষণ মুক্ত,স্বাধীন,উন্নত জাতিতে পরিণত করার আন্দোলন ছিলো ধারাবাহিক স্রোতধারায় প্রবাহিত।
১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্টাতা রাষ্টপ্রতি জিয়া্উর রহমান সাংবিধানিক নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে রাষ্ট্রপতি,সেনা প্রধান ও সেনা প্রশাসক তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ মর্যাদার দায়িত্ব একাই পালন করে। তখন থেকে রাজনীতির যে মেরুদন্ড ভেঙ্গেছিলো সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের হাল ধরেন,তৎপরবর্তী ১৯৬৯ ও ১৯৮৬ এর জাতীয় নির্বাচনে স্বতস্ফুর্ত ভাবে অংশ গ্রহন করেছিলো।হেরে যাওয়ার ভয়ে কখনও নির্বাচন ভয়কট করেনি। নব্বইয়ে গণ আন্দোলনে স্বৈর শাসকের পতনের পর নির্বাচনে জয় লাভ করে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় বসে। দেশটাকে মিনি পাকিস্তান বানানোর চর্চা করে।কিন্তু না, অতন্দ্র প্রহরী আওয়ামী রাজনীতি তা হতে দেয়নি।
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় এসে জেলারেল এরশাদ ও খালেদা জিয়ার রেখে যাওয়া বৈরী পরিবেশ মুখাবেলা করতে হয়।সে সময় বঙ্গবন্ধু হত্যা, জাতীয় চার নেতার খুনীদের বিচারের আওতায় ও সংবিধানকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনে। ২০০১ এর নির্বাচনে খালেদা জিয়া জয় লাভের পর দেশের আনাচে কানাচে সন্ত্রাস,জঙ্গীবাদ,সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিষবৃক্ষ রুপন করে ও অপরাজনীতির জন্ম দেয়।কেন না বিএনপিতে যুক্ত ছিলো সাম্প্রদায়িক অপশক্তি,কালো টাকার মালিক,অসৎব্যবসায়ী,দূর্নীতিবাজ,ক্ষমতালোভী, সামরিক, বেসামরিক স্বার্থবাদীরা।
যাদের উদ্দেশ্য ছিলো ক্ষতার কাছাকাছি অবস্থানে থেকে স্বার্থের হালুয়া রুটি ভক্ষণ করা।
২০০৮ এর নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিএনপি জিকজাক পথে হাঁটতে থাকে।দেশে নৈরাজ্যবাদ সৃস্টি করার তৎপরতা চালায়।অতঃপর রাজনৈতিক দুরদর্শিতার অভাবে ও মিথ্যা অজুহাত তুলে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে। প্রথিতযশা আইনজীবী যিনি বঙ্গবন্ধুর ছায়াতলে রাজনীতি করতেন ড.কামাল হোসেনকে জোটের দল নেতা নির্বাচন করে সঙ্গে কয়েকটি ছোট দলকে নিয়ে বিএনপি ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে।জোটের কাঠামোগত দূর্বলতার কারণে,একই আসনে একাধিক প্রার্থীর কাছে মনোনয়ন পত্র বিক্রি করায় বিএনপি মাত্র সাতটি আসনে জয় লাভ করতে সক্ষম হয়।তখন থেকেই তাদের রাজনীতিতে তৈরী হয় বিশৃঙ্খলা, আস্থাহীনতা,আভ্যন্তরিন কোন্দল,বলিষ্ট নেতৃত্বের শুন্যতা।
চলতি বছর ২০২৩ সালের শেষের দিকে
অথবা ২০২৪ এর প্রারম্ভে জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে।ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ পর্যায় ক্রমে গ্রহন করা হচ্ছে। একদিকে বিএনপি ও তার জোটবদ্ধ দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন ও সে সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবী রাখছে।অন্যথায় তারা নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবে না।তারা ঘোস্সা করে অস্থিতিশীল পরিস্থির জন্ম দেয়ার চেস্টা করছে। বলছে হাসিনা সরকারকে ক্ষমতা থেকে টেনে হিছরে ফেলে দিবে।এই তো সে দিন বলছে — ১০ ডিসেম্বর থেকে দেশ চলবে খালেদা জিয়ার নেতৃত্তে। কিন্তু কি ভাবে, তার ব্যাখা দেয়নি। বিএনপিকে বলতে চাই –এটা কি মগের মুল্লুক না কি।
অপরপক্ষে সরকার বলছে সাংবিধানিক নিয়মে জনগণকে একট স্বচ্ছ,সুষ্ঠু,পরিমার্জিত, নিরপেক্ষ নির্বাচন উপরহার দিবে।এ নিয়ে চলছে নির্বাচনের পক্ষে বিপক্ষে কাদা ছুড়াছুড়ি। দেখা যাক, নির্বাচনী পতাকা নিয়ে কোন দল বা জোট কত গতিবেগে দৌড়াতে পারে। বিজয়ের শ্রেষ্ট গোল দাতা কে হয়।
এ দিকে রাজনীতি করবে না মর্মে লিখিত দিয়ে ফৌজধারী মামলায় সাজা প্রাপ্ত আসামী বিএনপির দল নেতা তারেক রহমান লন্ডনে বসে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে,জনমণে আগত নির্বাচন সম্পর্কে আতংকের জন্ম দিয়ে ধুম্রজাল তৈরী করার চেষ্টা করছে।বিদেশে লবিষ্ট নিয়োগ দিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার ও আগামী নির্বাচনকে বিতর্কিত করার জন্য। তারা স্বপ্ন দেখছে বিদেশী ব্রাদারর্সদের কাঁধে ভর করে ক্ষমতায় যাওয়ার।
প্রত্যাশা রাখি জনগণ বাংল ভাইয়ের উত্থান, একুশে গ্রেনেড হামলা, জজ মিয়া নাটকের জন্ম, দশ ট্রাক অস্ত্রমামলা,শিরিজ বোমা হামলা, আগুন সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদের বিস্তার ইত্যাদি অপকর্ম কোন দল করেছিলো, তা মনে রেখে ভোট প্রয়োগ করবে।
এ হেন অবস্থায় নিকট ভবিষ্যতে নির্বাচন মুখী জনগণ কি সিদ্ধান্ত নিবে, সেটাই দেখার বিষয়।তবে জাতীয় নির্বাচন যে ডিজিটাল ফিতার মাপেই হউক না কেন, জনগণ এখন নির্বাচন মুখী।
লেখকঃ উপদেষ্টা,বাংলাদেশ কৃষকলীগ।
০১৭১৭৭৬২৭৪৫.