মোঃ সোহেল রানা রাজশাহী বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান
রাজশাহীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন। ছবি:দৈনিক ঘোষণা পএিকা
রাজশাহীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন। ছবি: দৈনিক ঘোষণা পত্রিকা
অন্তর্বর্তী সরকার হুকুম মতো কাজ করাতে চাইলে চেয়ারে থাকবেন না বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। আজ শনিবার সকাল ১০টায় রাজশাহী আঞ্চলিক লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বিগত নির্বাচনগুলোতে ভোট জালিয়াতিতে জড়িত নির্বাচন কর্মকর্তারা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্বে থাকবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘ভাই, আমার তো ৫ হাজার ৭০০ কর্মকর্তা। কোথায় পাঠিয়ে দেব এদের! তাদের মধ্যে যারা স্বপ্রণোদিত হয়ে স্ব-উদ্যোগে ভোট জালিয়াতিতে জড়িত ছিল, তাদের তো অবশ্যই দায়িত্বে রাখব না।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা যতটুকু চিন্তা করছেন, তার চেয়ে বেশি সজাগ আছি আমরা। আমি বিশ্বাস করি, কর্তার ইচ্ছায় কীর্তন করে তো তারা দেখেছে কর্তা কোন দিকে যায়। আমাদের অফিসাররা জানে যে, এখনকার নির্বাচন কমিশন কোনো পক্ষপাতিত্ব করছে না। তারা আইন অনুযায়ী নিউট্রালি কাজ করতে চায়। আগে করেছে, যেহেতু আগের নির্বাচন কমিশন থেকে অনেকে চেয়েছে, আগের সরকার চেয়েছে। আমাদের তো সে রকম কোনো সমস্যা নেই।’
বর্তমান সরকারের অবস্থান কী—এমন প্রশ্নে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এই সরকার তো এ পর্যন্ত চায়নি। আমাদের বলতে দ্বিধা নাই। যেদিন সরকার চাইবে, সেদিন নাসির উদ্দিন এই চেয়ারে থাকবে না। এটা ধরে রাখেন। যদি সরকার চায় তার হুকুমমতো কাজ করাতে, আমাকে এই চেয়ারে দেখবেন না আপনারা। সেই গ্যারান্টি আমি দিতে পারি।’
যারা ভোটকেন্দ্র দখল করতে চান, তাঁদের কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে সিইসি বলেন, ‘শুধু একটা দুঃসংবাদ দিতে চাই—যারা ভোটকেন্দ্র দখল করার জন্য নিয়ত করে বসে আছেন, বাক্স দখল করার জন্য নিয়ত করে আছেন, তাঁদের স্বপ্ন ভঙ্গ হবে। আপনারা এই ইতিহাস ভুলে যান। ভোটকেন্দ্র দখলের ইতিহাস ভুলে যান। ভোটের বাক্স দখলের নিয়ত যদি থেকে থাকে, দয়া করে সরে আসুন এই নিয়ত থেকে। আমরা অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে থাকব এবার, ইনশাআল্লাহ।’
তিনি বলেন, ‘দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে। তারা ঘুঘু দেখেছে, ফাঁদ দেখে নাই। এবার ফাঁদ দেখবে তারা, যারা মনে করবে কেন্দ্র দখল করে জিতব, বাক্স দখল করে জিতব। সেই সুযোগ ইনশাআল্লাহ তারা পাবে না। এখানে আমরা দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় এবং আপনাদের (গণমাধ্যমকর্মী) সঙ্গে নিয়ে আমরা এই কাজটা সারব, ইনশাআল্লাহ।’
‘আমরা সেভাবেই কাজ করছি। প্রত্যেক অফিসারকে সেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছি। আগে যে ধরনের হুকুম যেত; আমাদের হুকুম যাবে অ্যাজ পার ল, আমাদের হুকুম যাবে অ্যাজ পার রুল। একদম নিরপেক্ষভাবে যাতে আমাদের অফিসাররা কাজ করেন, সেই নির্দেশনা থাকবে। অন্যায় কোনো হুকুম আমাদের তরফ থেকে যাবে না। অন্যায় কোনো আবদার আমরা কারও কাছ থেকে শুনব না।’ যোগ করেন সিইসি।
অবৈধ অস্ত্রধারীদেরও হুঁশিয়ারি দিয়ে সিইসি বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান চলমান প্রক্রিয়া। অভিযান এখনো চলছে, ভোটের আগে জোরেশোরে চলবে। যারা অস্ত্রবাজি করার নিয়ত করেছেন, আপনাদের জন্য অত্যন্ত দুঃসংবাদ। যারা অস্ত্রবাজি করে ভোটে জিততে চাইবেন, তাঁদের জন্য দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে। অস্ত্র উদ্ধারের একটা অভিযান চলবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এবার সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি। আগে যে স্ট্রাইকিং ফোর্স ছিল, উইদাউট স্ট্রাইক। প্রয়োজনের সময় নাম দিয়েছিল স্ট্রাইকিং ফোর্স। আগে আমরা তিনটা নির্বাচনে দেখেছি তো। দে আর নেভার স্ট্রাইক, দেখানোর জন্য করেছে। কিন্তু এবার স্ট্রাইক করা হবে। আমাদের সেনাবাহিনী যাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞার ভেতরে অন্তর্ভুক্ত হয়, সে উদ্যোগ নিয়েছি। সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী, কোস্ট গার্ড—সবাইকে আমরা ইনভলভ করব। সব বাহিনী সম্পৃক্ত থাকবে।’
ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা হলে পুরো আসনেরই ভোট বাতিলের সিদ্ধান্ত হবে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘আপনারা তো জানেন যে, পুরো আসনের ভোট ক্যানসেল করার জন্য বিধান আমরা করছি। ক্যানসেল করে দেব, যদি অনিয়ম দেখি। যদি দেখি কেউ কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছে, পুরা আসনের ভোট ক্যানসেল করে দেব। সুতরাং, একটা সুষ্ঠু, সুন্দর, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য জাতিকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, যতক্ষণ আমাদের সেন্স আছে, সর্বশক্তি দিয়ে নিরপেক্ষভাবে এবং পেশাগত দক্ষতার সাথে আমরা এটা মোকাবিলা করব।’
ভোটের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে—এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উইল নট বি অ্যা প্রবলেম। সরকার এ ক্ষেত্রে খুব সজাগ আছে। সরকারের যে সমস্ত এজেন্সি ও বিভাগ ইলেকশনের সঙ্গে জড়িত থাকবে, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা তাদের সমস্ত প্রস্তুতি ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছেন। আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নের জন্য।’
ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ প্রসঙ্গে এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচনে সব দল আসবে কি না, সেটা তো সময় বলে দেবে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো দেশের মঙ্গল চায়। এন্ড অব দ্য ডে, আমাদের দলগুলো একটা অবস্থানে আসবে। আওয়ামী লীগের তো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত। বিচারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বিচারের রায় কী আসে, সেটা আমাদের দেখতে হবে। সে পর্যন্ত তো তারা রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে পারবে না।’
পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে রাজশাহী অঞ্চলের নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতিবিনিময় করেন সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন। আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় এ সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন।