মাইনুল হক মেনু, স্টাফ রিপোর্টার :
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মুমুরদিয়া ইউনিয়নের চাতল বাগহাটা স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্ধের অভিযোগের তদন্তের সময় অতর্কিত হামলার ঘটনায় চাতল গ্রামের আরব আলী খাঁ’র ছেলে মালদ্বীপ প্রবাসী আশিক খাঁ (২২) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে এবং ঢাকা শিা বোর্ডের দুই কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত অধ্য হেমায়েত হোসেনসহ সহ ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- ঢাকা শিা বোর্ডের সহকারী কলেজ পরিদর্শক মো. লোকমান মুন্সী, বোর্ডের সেকশন অফিসার মো. আহাদ খান, চাতল বাঘহাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্য হেমায়েত হোসেন, জাতীয় নাগরিক কমিটি উপজেলা শাখার সদস্য মো. রঞ্জন খাঁ, মুমুরদিয়া ইউনিয়ন কৃষকদলের সভাপতি মুহিউদ্দিন সরকার, নাগরিক কমিটির উপজেলা প্রতিনিধি রাজিব। এড. আশিকুজ্জামান নজরুলসহ সকল অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে নিহত আশিকের স্বজন ও ছাত্রদলের সমর্থকরা লাশ নিয়ে কটিয়াদী উপজেলা সদরে বিােভ মিছিল করে। এ ঘটনায় এড. আলী হায়দার বাবলু ও আব্দুল হান্নানকে আটক করেছে পুলিশ।
রবিবার আটককৃত এড. আলী হায়দার বাবুল ও আব্দুল হান্নানকে কিশোরগঞ্জ কোটে প্রেরন করা হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার চাতল বাগহাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্য হেমায়েত হোসেন নিয়মানুযায়ী এডহক কমিটিতে নুরুজ্জামান চন্দন, এড. আলী হায়দার বাবুল ও আব্দুল হান্নান সরকারকে আহবায়কের নাম প্রস্তাব করে জমা দেয়। এডহক কমিটিতে নাম আগে পরে দেওয়া নিয়ে এড. আলী হায়দার বাবুল ঢাকা বোর্ডে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার দুপুর ২টার দিকে ঢাকা বোর্ডের সহকারী কলেজ পরিদর্শক লোকমান মুন্সী ও সেকশন অফিসার আহাদ খানের নেতৃত্বে একটি তদন্ত টিম চাতল বাগহাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজে আসেন। পরে মুমুরদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলা উদ্দিন সাবেরীসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতে স্কুল মাঠে তদন্তের কাজ শুরু হয়। তদন্তকে কেন্দ্র করে স্কুল মাঠে শতশত মানুষ উপস্থিত হয়। তদন্ত চলাকালে এড. আলী হায়দার বাবলু, সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ও কটিয়াদী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আশিকুজ্জামান নজরুলের সমর্থিত লোকজন এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক নুরুজ্জামান চন্দনের লোকজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে শুরু হয় সংঘর্ষ। প্রতিপগণ চন্দন সমর্থনকারী জাতীয় নাগরিক কমিটি উপজেলা শাখার সদস্য মো. রঞ্জন খাঁ ওপর দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করলে তার চাচাত ভাই আশিক খাঁ ফিরাতে এসে খুন হয়।
ঢাকা শিা বোর্ডের সহকারী কলেজ পরিদর্শক মো. লোকমান মুন্সী বলেন, একটি অভিযোগের বিষয়ে আমরা চাতল বাগহাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজে তদন্ত করার সময় দুই পরে মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এর মধ্যে একপ দেশীয় অস্ত্রনিয়ে হামলা করে এতে আমরা আহত হয়েছি।
মুমুরদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আলা উদ্দিন সাবেরী বলেন, চাতল বাগহাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে প্রায় দেড় যুগ ধরে চলে আসছে দ্বন্ধ। এই প্রতিষ্ঠানটি আমার মুমুরদিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত। এখানে চান্দপুর ইউনিয়নের লোকজন তাদেও প্রভাব বিস্তারের জন্য পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি অপরাধীদেও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই।
মামলার বাদী নিহতের মা রিতা আক্তার বলেন, আমার ছেলে বিদেশে থাকে। কিছুদিন আগে দেশে আসে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।
কটিয়াদী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান কাঞ্চন বলেন, ‘যারা ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা যেদলেই হইক, তারা অপরাধী। কাজেই অপরাধীর কোনো মা নেই। আমরা উপজেলা বিএনপি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানাই।’
কটিয়াদী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. হাবিবুল্লাহ খান জানান, চাতল বাঘহাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজে একটি অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা শিা বোর্ডের কর্মকর্তাদের তদন্তের সময় দুপরে মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে আশিক নামে একজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন।
কটিয়াদী মডেল থানার ওসি মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় নিহতের মা রিতা আক্তার বাদী হয়ে ২৯জনের নাম উল্লেখসহ আর ১৫-২ ০জনকে অজ্ঞাত আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এ ঘটনায় বাবুল ও হান্নান নামে দুজনকে আটক করে রোববার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্য অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যহত রয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসেনপুর সার্কেলের মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, চাতল বাগহাটা স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আশিক নামের একজন মারা গেছেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে আটক করা হয়েছে।