নিজস্বপ্রতিবেদক :
বাবা প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহজাহান। ছেলে নিরাপত্তা প্রহরী আনেওয়াজ আহমেদ প্রমিস। অভিযোগ উঠেছে তাঁরা দুজনেই কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন না। কোনো রকম ছুটি ছাড়াই তারা মাসের পর মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। নিজ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলে চলছেন তাঁরা। শিমুলিয়া আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ে সরেজমিন গেলে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার রশিদাবাদ ইউনিয়নের শিমুলিয়া আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা গেছে, ৮৮ শতাংশ জায়গায় বিদ্যালয়টি ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। জীর্ণশীর্ণ বিদ্যালয়টিতে রয়েছে দুটি দোচালা টিনের ঘর। নেই বিদ্যুৎ সুবিধা, সুপেয় পানির সুবিধা। এমনকি পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা খুবি নিম্নমানের। নেই অফিস কক্ষ। ক্লাস রুমেই চলে অফিস কক্ষের কাজ। ২০১৯ সালে বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত হয়েছে। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ১ জন ও ৬ জন সহকারী শিক্ষিকের পদ রয়েছে। শিক্ষার্থী রয়েছে ১৪৫ জন। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান মোঃ শাহজাহান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাজিরা খাতায় ১৫ দিনের স্বাক্ষর রয়েছে প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহজাহানের। জানুয়ারি মাসে ৮ দিন স্বাক্ষর করেছেন। ফেব্রুয়ারী মাসে ৪ দিন ও মার্চ মাসে ৩ দিন স্বাক্ষর করেছেন। এছাড়া ৮ মাসে তার কোনো স্বাক্ষর পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে ২০২০ সালে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে বিদ্যালয়ে যোগদান করে প্রধান শিক্ষকের ছেলে আনেওয়াজ আহমেদ প্রমিস। তাঁকে বিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় কেউই দেখেনি। তবে তিনিও তাঁর বাবার মতোই নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন। এছাড়া বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র প্রধান শিক্ষক মোমোঃ শাহজাহানের বাসায় থাকে বলেও জানা গেছে।
বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষিক ফেরদৌসি বেগম, রেজাউল হক সোহাগ, হামিদা খাতুন, ফাতেমা আক্তার, আফিফা বেগম ও সাদেক ভূইয়া বলেন, স্যার নিয়মিত না থাকাতে আমাদের নিজেদের মধ্যে কোনো চেইন অফ কমাণ্ড নেই। যার যার মতো করে আমাদের কাজ করতে হয়। সেজন্য আমরা কাজ সঠিকভাবে করতে পারিনা। আমরা সবাই সহকারী শিক্ষিক কাউকে কেউ কিছু বলতে পারিনা। উনি না আসলেও কাউকে দায়িত্বও দেয়নি। দায়িত্ব না দেয়াতে সঠিক কাজ করতে সমস্যা হয়। আমরা একমত হয়ে কাজগুলো করতে হয়।
তাঁরা বলেন, উনি না থাকার ফলে নতুন শিক্ষাক্রমে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের জন্য বিদ্যুৎ নাই, ল্যাপটপ-কম্পিউটার, স্মার্ট টিভি নাই। সরকারিভাবে ল্যাপটপ বা কম্পিউটার পেলেও বিল্ডিং না থাকার কারণে চুরি হয়ে যাওয়ার ভয় আছে। নিরাপত্তা প্রহরীর চেহারা দেখেছি আমরা কিন্তু বিদ্যালয়ের কোনো কার্যক্রমে দেখিনি। আমরা চাই প্রতিষ্ঠানটি টিকে থাকুক। আমাদের সমস্যাগুলোর সমাধান হউক সেটা চাই।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, বাথরুম না থাকার কারণে খুবি সমস্যা হয়। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে গরমের মধ্যে ফ্যান ছাড়া ক্লাস করতে হচ্ছে। আইসিটি ক্লাস হয় কিন্তু কোনো ব্যবহারিক ক্লাস করতে পারি না। আমরা চাই আমাদের বিদ্যালয়টির সকল সমস্যার সমাধান।
স্থানীয়রা জানান, উনি আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী ব্যাক্তি। প্রধান শিক্ষক স্কুলে না আসলেও বিভিন্ন জায়গায় বসে আড্ডা দেন। এমনকি নিয়মিত কিশোরগঞ্জ শহরেও যাতায়াত করেন। বিদ্যালয়টির এই দৈন্যদশা তারপরও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেন না। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা নিয়ে আমরা চিন্তিত। পড়ালেখা শিকেয় উঠেছে, ঝরে পড়ছে অনেক শিক্ষার্থী। অসুস্থতার দোহাই দিয়ে তিনি দীর্ঘদিন যাবত বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। আপনারা বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতা দেখলেই বিষয়টি জানতে পারবেন।
নিরাপত্তা প্রহরী আনেওয়াজ আহমেদের মোবাইল ফোনে কল দিলে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহজাহান এসব বিষয়ে বলেন, আমি এ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান শিক্ষক। আমার স্ত্রী প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আমি অসুস্থ। ছুটি নিয়েছি। আমি জানুয়ারি থেকে অসুস্থ না ২০২৩ সাল থেকে অসুস্থ। আমার ক্যান্সার হইছে। আমি যাই না। আমি অসুস্থ মানুষ ক্লাস করাইতে পারি না। বিদ্যালয়ে শিক্ষক আছে ওরা ক্লাস করাইতে পারে। আমিতো ক্লাস করানোর উপযোগী না। উপস্থিত থাকি না এমনতো না। মাঝে মধ্যেতো যাই।
আপনার ছেলে এই বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা প্রহরী। সেও বিদ্যালয়ের কার্যক্রমে উপস্থিত থাকে না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহজাহান বলেন, থাকে। মাঝে মধ্যে থাকে না।
সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার রোকন উদ্দিন আহম্মদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে ফোন দিলে প্রথমে ফোন ঢুকলেও পরে তিনি বন্ধ করে দেন।
এসব বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) কাজী মহুয়া মমতাজের দৃষটি আর্কষণ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নাই। কোনো অভিযোগ হলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে পারি।