অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি:
দেশে মাছ সব্জি থেকে শুরু করে সকল দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়লেও ডাক বিভাগের ইডি কর্মচারীদের জীবনের দাম বাড়েনি একটুও। তারা এখনো বৃটিশ সরকারের সৃষ্টি করা বেতন কাঠামো অনুযায়ী ৪১৭৭ টাকা থেকে ৪৪৬০ টাকা সম্মানী ভাতায় চাকুরী করে যাচ্ছেন। তারা ঈদ বা পুঁজায় পাচ্ছেননা কোন উৎসব ভাতা। পরিবারের সদস্যদের আবদার মিঠানোতো দুরের কথা পারছেননা এই সামান্য বেতনে তাদের জন্য দু’বেলা ডাল ভাতের ব্যবস্থা করতে। পারছেননা ঈদে পরিবারের অতি আদরের শিশু সন্তানদের একটি নতুন জামা কিনে দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটাতে। দিতে পাছেননা ছেলে মেয়েদের লেখা-পড়ার খরচ।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হবার পর ভারত-পাকিস্তান তাদের ডাক বিভাগের অবিভাগীয় কর্মচারীদের বেতন কাঠামো পরিবর্তন করলেও বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এখনো সেই পুরুনো রীতি অনুসরণ করেই অবিভাগীয় (ইডি) কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিয়ে যাচ্ছেন। ডাক বিভাগের বিভাগীয় কর্মচারীগণ যে কাজ করে সরকারী সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন, ঠিক একই কাজ করে অবিভাগীয় (ইডি) কর্মচারীগণ সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ দেশের বৃহত্তর গ্রামীন জন গোষ্টীকে নিরলস ভাবে ডাক সেবার পাশাপাশি ডিজিটাল তথ্য সেবা ইডি কর্মচারীরাই দিয়ে যাচ্ছেন। সূত্র জানায়, দেশের ৮ হাজার গ্রামীন ডাক ঘরে কর্মরত ইডি কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ২৪ হাজারের উপরে। দুর্মূল্যের বাজারে সামান্য বেতনে কাজ করে এই বৃহত্তর জনগোষ্ঠী তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রামের সাপান্ত ডিজিটাল পোস্ট অফিসের রানার বেশমোনী দাস বলেন, আমার জীবন ডাক বিভাগে কাটিয়ে দিয়েছি। ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে এখন বেতন পাই ৪১৭৭ টাকা। এ বেতনে খেয়ে বাঁচাই মুশকিল। প্রতি বছর বিভিন্ন উৎসবে নিরবে বাচ্চাদের চোখের জল মুছে দিয়েছি, কষ্টে পুড়ে জীবন ছাঁই করেছি। কিন্তু ছেলে-মেয়েদের নতুন জামা দেওয়া কিংবা তাদের কোন আবদার পূরণ করার সৌভাগ্য আমার কখনো হয়নি।
এবিষয়ে ভৈরবের আকবর নগর ডিজিটাল শাখা ডাকঘরের পোস্ট মাষ্টার সিদ্দিকুর রহমান এ প্রতিনিধিকে জানান, আমি অসুস্থ মানুষ। চাকুরীর পাশাপাশি অন্য কিছু করার সুযোগও নেই। আমি যে বেতন পাই তাতে আমার সাতদিনও চলেনা। মাসের বাকী দিনগুলো ছেলে-মেয়েদের নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে কাটাতে হয়। আমার ৫ ছেলে-মেয়ের দু’জন অনার্স পড়ছে, দু’মেয়ে এস.এস.সি’তে জিপিএ ৫ পেলেও অর্থাভাবে তাদের লেখা-পড়া করাতে পারছিনা। তাই মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও সরকার যেন আমাদের দিকে নজর দেন।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার মুড়ারীপুর ডিজিটাল পোস্ট অফিসের শাখা পোস্ট মাস্টার ও বাংলাদেশ শাখাডাকঘর কর্মচারী সমিতির অর্থ সম্পাদক আবু তালেব মুঠোফোনে এ প্রতিনিধিকে জানান, স্বাধীনতার পর সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ভাগ্য ফিরলেও আমাদের ভাগ্য বদলে এখনো কোন ছোঁয়া লাগেনি। আমাদের ২৪ হাজার কর্মচারী এখনো সামান্য বেতনে খেয়ে না খেয়ে ডাক বিভাগের দায়িত্ব পালন করে খুবই কষ্টে জীবন-যাপন করছেন। আমাদের কোন উৎসব ভাতাও দেওয়া হয়না। যা সম্পূর্ণ অমানবিক। তাই উৎসব ভাতাসহ বেতন বৃদ্ধির জন্য আমাদের মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রীসহ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
পোস্টাল ইডি কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এম.এ. হাকিম এ প্রতিনিধিকে জানান, ২০১৮ সালের পর ৫বছর অতিক্রম হলেও এখনো পর্যন্ত উৎসব ভাতাসহ বেতন ভাতা বৃদ্ধির কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কেবল যাচাই বাছাইয়ের অজুহাতে সময় পার করা হচ্ছে। দ্রæত বেতন বৃদ্ধি ও উৎসব ভাতা চালু করা না হলে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান এইড ইন্টারন্যাশনাল এর প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ও বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক সোসাইটির কো-চেয়ারম্যান সেহ্লী পারভীন এ প্রতিনিধিকে বলেন, এই বেতনে একজন ব্যক্তি চলতি দ্রব্যমূল্যের বাজারে প্রতিদিন দুই বেলা দুই কাপ চা খেতে পারবে। এর চেয়ে বেশি কিছু করার কথা নয়। ডাক বিভাগের ব্যবস্থাপনা এই ক্ষেত্রে খুবই দুঃখজনক। ৪১ শত টাকা বেতনধারীরা অসৎ হতে বাধ্য জীবন বাঁচানোর জন্য। তাদের এমন মানবেতর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ অনতিবিলম্বে জরুরি। এভাবে চলতে থাকার কারনে ডাক বিভাগের কর্মকান্ড জনগণের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মহাপরিচালক অরুন কান্তি শিকদার মুঠোফোনে এ প্রতিনিধিকে জানান, ইডি কর্মচারীদের বেতন ভাতা তিনগুন বৃদ্ধির প্রস্তাব তিন বছর আগেই মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রস্তাবটি কেন ঝুলে আছে ? প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ রাষ্ট্রের। এখানে আমার কিছু করার নেই।