1. admin2@kalernatunsangbad.com : admin : Admin
  2. admin@kalernatunsangbad.com : Khairul Islam :
শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১২:৫১ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
শিরোনাম

প্রভাতী প্রকল্পে হতদরিদ্রদের টাকা নয়ছয় রাজারহাটে

  • প্রকাশ কাল শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২২
  • ২২০ বার পড়েছে


রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি \ রাজারহাট উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী সোহেল রানার বিরুদ্ধে অফিসে বসে চাকুরী ও ব্যবসা দুটো’ই করার অভিযোগ করেছেন ঠিকাদার ও সচেতন এলাকাবাসী। এছাড়া বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে এলাকাবাসী এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী সহ বিভিন্ন দপ্তরে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে জানা গেছে,রাজারহাট উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী সোহেল রানা কর্মস্থলে থেকেও রংপুর শহরে তার ব্যবসার প্রচার-প্রচারনা করেন। গত অর্থবছরে রাজারহাট উপজেলার ৫৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই লাখ টাকা
করে ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্দ আসে। বরাদ্দ পাওয়া অধিকাংশ বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে টাইলস লাগানোর কাজ করা হয়। কিন্তু
এসব কাজের জন্য প্রয়োজনীয় টাইসল রংপুরের দেওয়ানবাড়ী রোডে আজহার প্লাজার নীচতলায় অবস্থিত উপজেলা প্রকৌশলীর মালিকানাধীন গোল্ডেন স্যানেটারী থেকে কিনতে প্রধান শিক্ষকদের বাধ্য করা হয়। কেউ ওই দোকান থেকে
টাইলস না কিনলে কাজ শেষে তার ক্লিয়ারেন্স নিতে ঝামেলা হবে বলে হুমকী দেয়া হয়। আর যারা তার দোকান থেকে কেনাকাটা করবেন তাদের ক্লিয়ারেন্সে কোন টাকা দিতে হবে না বলেও প্রকৌশলীর পক্ষ থেকে বলা হয়।
একারণে অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানরা রংপুরে ওই দোকান থেকে টাইলস আনেন। শুধু প্রধান শিক্ষক নয় তার দপ্তরের বেশির ভাগ কাজে তার দোকানের মালামাল ব্যবহার না করলে তিনি ঠিকাদারদের দাপট দেখার অভিযোগ করা
হয়েছে। অনেক সময় বিল দিতেও ঝামেলা করেন তিনি। মোট কথা তিনি চাকুরী ও ব্যবসা দুটো করে যাচ্ছেন অফিসে বসে। এমন নানা অভিযোগ করা হয়েছে উক্ত প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানা রংপুর শহরের মিনি
মার্কেট প্রধান গেটের সাথে নুর মার্কেটের “নর্থ বেঙ্গল হার্ডওয়ার” ও গোল্ডেন স্যানেটারী, দোকান দু’টি পরিচালনা করেন। চাকুরীর পাশাপাশি দু’টি দোকান নিয়ে ব্যস্ত থাকায় অফিসে প্রায় অনুপস্থিত থাকেন। আসলেও সময়ের আগে চলে যান বলে জানা যায়।
উপজেলার চাকিরপশার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃঞ্চ কমল রায় বলেন,রতিরাম সরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হরিষ চন্দ্র রায়,নীলেরকুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম সহ
আমরা ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উপজেলা প্রকৌশলীর মালিকানাধীন গোল্ডেন স্যানেটারী থেকে সরকারি ছুটির দিন প্রকৌশলী সোহেল রানার উপস্থিতিতে প্রায় ৪লক্ষ টাকার টাইলস ক্রয় করেছিলাম।
ধলগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হবিবর রহমান,বৈদ্যের বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোমনাথ চক্রবতর্ী,আলহাজ্ব তাজুল ইসলাম চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক
শৈলেন্দ্র নাথ অনেক প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে তাদের বিদ্যালয়ের কাজে উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানার দোকান
থেকে টাইলস ক্রয়ের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে ক্লিয়ারেন্সে সুবিধার্থে উপজেলা প্রকৌশলীর দোকান থেকে টাইলস ক্রয় অভিযোগের বিষয়ে কেউ কথা বলতে রাজী হননি।
গোল্ডেন স্যানেটারী দোকানের ম্যানেজার মোঃ ফয়েজ উদ্দিনের সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি ওই দোকান থেকে রাজারহাট উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ টাইলস ক্রয়ের সত্যতা স্বীকার করেন। কথা
পঁ্রসঙ্গে এটি রাজারহাট উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানার দোকান বলে স্বীকার করেন। নর্থ বেঙ্গল হার্ডওয়ার নামে অপর দোকানটিও উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানার পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত বলে জানা গেছে। উপজেলা এলজিইডি’র
একাধিক কর্মচারীও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগকারীরা বলেন,তিনি অফিসে বসে দোকানের প্রচার করেন। শিক্ষকদের তার দোকান থেকে টাইলস ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ করে সেখান থেকে মালামাল ক্রয় করিয়েছেন। তারা বলেন,কতর্ৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করেছি আমরা চাই তার দ্রুত তদন্ত হোক।
অপরদিকে প্রভাতী (অবকাঠামোগত দক্ষতা উন্নয়ন ও তথ্যের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠির সহনশীলতা বৃদ্ধি প্রকল্প) প্রকল্পের খোঁজ নিতে গিয়ে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। পাকা
সড়ক নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এলসিএস মহিলা কমর্ী নিয়োগে অনিয়ম, ঠিকাদারদের হয়রানী, অসাদাচরনসহ
বিভিন্ন অনিয়ম ও দুনর্ীতির বিষয়ে কয়েকজন তালিকাভূক্ত ঠিকাদারসহ ভুক্তভোগী স্থানীয়রা এলজিইডির প্রধান
প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগকারীরা এসব দূর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৌশলী সোহেল রানার অপসারণ চেয়েছেন।
তথ্য মতে,উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের চওড়াহাটে এলসিএস প্রকল্পে তিনটি হাট সেড নির্মাণ করা হচ্ছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৯১৫ টাকা। মূলত স্থানীয় হতদরিদ্রদের আত্ম-কর্মসংস্থান ও স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে
প্রভাতী প্রকল্পের আওতায় এ কাজটি নেয়া হয়।
প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী বরাদ্দকৃত অর্থ প্রকল্পের সুবিধাভোগিরা (দু’টি দলে ৪০জন হত-দরিদ্র নারী-পুরুষ) নিজেরাই শ্রমিক হিসেবে কাজ করবেন। একই সাথে হাট শেড নির্মানের সকল কেনাকাটা তারাই করবেন। এসব
তদারকি করবেন উপজেলা প্রকৌশলী এবং প্রভাতী প্রকল্পের কর্মী। হাট সেড কাজ শেষ হলে প্রকল্পে বরাদ্দের অর্থ অবশিষ্ঠ
থাকলে তা দলভুক্ত সুবিধাভোগীদের মাঝে বন্টন করা হবে।
সরেজমিনে পাওয়া গেছে উল্টো চিত্র। চওড়া বাজার হাট সেড ঘর নিমার্ণ প্রকল্পের ২নং দলের এলসিএস সভাপতি সাজেদা বেগম বলেন, টাকা তোলার দিন করে আমরা কুড়িগ্রাম এলজিইডি অফিস থেকে চেক এনে উপজেলা থেকে
পাশ করে ব্যাংকে গিয়ে টাকা তুলে ইঞ্জিনিয়ার এবং ম্যাডামকে দেই। টাকা তুলে দেয়ার জন্য গেলে ম্যাডামরা আমাকে কুড়িগ্রাম যাওয়া আসার জন্য ১শ টাকা করে গাড়ি ভাড়া দেয়। প্রথমদিন ২০০টাকা দিয়েছিল। টাকা তুলে নিয়ে আমাদের নাস্তা খাওয়ায় পাঠিয়ে দেয়। এখন পর্যন্ত কোথা থেকে কত টাকার কি পরিমান মালামাল ক্রয় করেছেন আমরা জানি না। চওড়াহাট বাজার ১নং প্রকল্পের সভাপতি ও এলসিএস (লেবার কন্ট্রাক্টিং সোসাইটি) সভাপতি জোলেখা বেগম বলেন, ব্যাংক থেকে টাকা তুলে দেই ইঞ্জিনিয়ারের হাতে। উনি মালামাল ক্রয় করেন। হিসাব নিকাশ সব
ইঞ্জিনিয়ার ও ম্যাডামের কাছে। নিমার্ণ সামগ্রী ক্রয়ের সমস্ত রশিদ ও হিসাব নিকাশ একমাত্র ইঞ্জিনিয়ার ও তার লোকজন জানেন। কতটুকু মালামাল কেনা হয় তাও আমাদের দেখানো হয়না। একই কথা বলেন ২টি প্রকল্প ভূক্ত এলসিএস
সদস্যগণ।এলসিএস সদস্যরা জানান,আমাদের দিন দুই’শো টাকা মজুরি পাই। বাকি টাকা কাজ শেষে দেবার কথা।
ইঞ্জিনিয়ার ও তাদের লোকজন নিমার্ণ সামগ্রী ইচ্ছা মাফিক ক্রয় করার কারণে প্রকল্পের কাজ শেষে ভাগে টাকা টাকা পাবো কিনা জানিনা।
এবিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানার সাথে একাধিকবার মুঠো ফোনে যোগাযোগের করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে উপজেলা প্রকৌশলীর অফিসে গিয়ে তার কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি
বলেন,এগুলো অভিযোগ ভিত্তিহীন। এরপর এবিষয়ে তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।

শেয়ার করুন

অন্যান্য সংবাদসমূহ


প্রযুক্তি সহায়তায় BTMAXHOST