★ বিপুল ইসলাম আকাশ,সুন্দরগঞ্জ(গাইবান্ধা)প্রতিনিধিঃ-
ছোট্ট শিশু বোরহান মিয়া বয়স মাত্র চার বছর।সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-মা কে হারিয়েছে বোরহান।একই দুর্ঘটনায় আহত হয় সে নিজেও চিকিৎসাধীন ছিলেন।তবে বোরহান জানে না-সে এখন এতিম।
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে নিজ বাড়িতে ফিরে বারবার মা আর বাবাকে খুঁজছে ছোট্ট শিশু বোরহান।প্রতিনিয়ত যেতে চাইছে বাবা-মায়ের কাছে।পাশে বসে থাকা মামা-মামি,দাদি,জেঠা-জেঠি ও আত্নীয়-স্বজনরা তাকে প্রবোধ দিচ্ছেন-বাবা-মা ওর খালার বাসায়,সুস্থ হলেই সে তাদের কাছে যেতে পারবে।
গত ১৫ই জুন শুক্রবার দুর্ঘটনায় শিশুটির পিতা মশিউর রহমান(৩০)মা বিলকিস বেগম(২৭)দুজনেই মারা গেছেন, আহত হয়েছে শিশু বোরহান।তাদের গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পুর্ব হাতিয়া গ্রামে।মৃত মশিউর রহমান পেশায় ছিলেন পোশাকশ্রমিক।তিনি গাজিপুরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন।পবিত্র ঈদ-উল-আযহার ছুটিতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়িতে মা ও বড় ভাইয়ের সাথে ঈদ করতে আসেন তিনি।ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থল ঢাকায় নওগাঁ ট্রাভেলসে যাচ্ছিলেন স্ত্রী সন্তানসহ।শুক্রবার(১৫জুলাই)বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে শেরপুরে উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ঘোগা ব্রিজ নামক স্থানে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে কালিয়াকৈর পরিবহনের একটি যাত্রীবাস ও নওগাঁ ট্রাভেলস নামের আরেকটি বাসের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
এতে ঐ ঘটনাস্থলেই বাসচালক সুজন মিয়া ও যাত্রী ফেন্সি বেগম নিহত হন।গুরুতর আহত উভয় বাসের আরও ১০ যাত্রী।আহতদের মধ্যে মশিউর ও তার স্ত্রী বিলকিস সহ ছোট্ট শিশু বোরহান ছিল।তবে মশিউর রহমান কে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান আর তার স্ত্রী বিলকিস বেগম ঐদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় বাবার কোলে থাকা ছোট্ট শিশু বোরহান।
ছোট্ট বোরহানের পাশে থাকা মামা,খালু,চাচা,চাচী,দাদী সহ অনেকেই বলেন,কোনো মতো তাকে(বোরহান)সান্ত্বনা দিয়ে বাড়িতে রাখছি।একটু পর পর বোরহান তার মা বাবার কথা বলে মা-বাবার কাছে যেতে চায়।মা-বাবা কে কাছে না পেয়ে কান্নাকাটি করে অনেক সময় অস্থির হয়ে যায় মা-বাবার জন্য।এমন করে কতক্ষণ,কী জবাব দেব তাকে,বুঝতে পারছি না আমরা।এ ঘটনায় শেরপুর হাইওয়ে থানায় সড়ক দূর্ঘটনার একটি মামলা হয়েছে বলে জানান তারা।
মা-বাবাকে হারিয়ে ছোট্ট শিশু বোরহান এখন অসহায় হয়ে পড়েছে।বোরহানের কান্না যেন আর থামছে না।অবুঝ এই ছোট্ট শিশু বোরহান কে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও নেই স্বজন-প্রতিবেশীদের।এই ছোট্ট শিশু এখন কীভাবে কোথায় থাকবে,কিভাবে জীবনের প্রতিটি সময় অতিবাহিত করবেন, ভবিষ্যৎ কী হবে-এ নিয়ে এখন তার স্বজন-প্রতিবেশীরা চিন্তিত।ছোট্ট শিশু বোরহানের কান্নায় চোখ ভিজে উঠছে স্বজন ও প্রতিবেশিদের ভারী হয়ে উঠেছে চারপাশের পরিবেশ।
নিহত মশিউর রহমানের বড় ভাই মিজানুর রহমান কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন,আমি আমার ভাই ও ভাইয়ের বউকে হারানোর বেদনা সহ্য করতে পারছিনা আর তার চেয়ে বড় কষ্টের জায়গা হলো আমার ছোট্ট ভাতিজা কে নিয়ে।আমার ভাতিজা মা-বাবার জন্য পাগল হয়ে গেছে সব সময় সব জায়গাতেই মা-বাবাকে খুঁজছে সে।কি জবাব দিব তাকে কি বুঝ দিব তাকে কোন ভাষা নাই আমার কাছে।আমি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি আপনারা সড়ক দূর্ঘটনা রোধকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।আর যেন কোন মা-বাবার কোল খালি না হয় কোন ভাই বোন যেন তার কোন ভাইকে না হারায় কোন সন্তান যেন তার বাবা-মাকে না হারায়।যে হারায় সে বুঝে আপনজন হারানোর যন্ত্রণা কত।সড়ক দূর্ঘটনায় আর যেন কোন নিষ্পাপ প্রাণ না ঝরে সে বিষয়ে খুব দ্রুতই ব্যবস্থা নিবেন বলে আশা করছি।
জরুরি হটলাইন :-