আসাউজ্জামান জুয়েল
কিশোরগঞ্জে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে পিটিয়ে কোমড়ের হাড় ভেঙ্গে সড়কে ফেলে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বামী মোঃ শহীদ মিয়া ও শ্বশুর, শাশুড়ির বিরুদ্ধে। পরে ভুক্তভোগী ওই নারীকে অজ্ঞান অবস্থায় কুকুরে কামড়িয়ে জখম করেছে বলেও জানা গেছে। এ ঘটনায় বুধবার (০৩ ডিসেম্বর) কিশোরগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন ওই ভুক্তভোগী নারীর মা স্বপ্না আক্তার।
অভিযুক্ত আসামিরা হলেন, স্বামী মোঃ শহীদ মিয়া, শ্বশুড় সাবান মিয়া ও শাশুড়ি মঞ্জিলা খাতুন। তাঁরা সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের চৌধুরীহাঁটি গ্রামের বাসিন্দা। অন্যদিকে ভুক্তভোগী ওই নারী একই এলাকার বাসিন্দা। ওই নারীর মানুষের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ভুক্তভোগীর বাবা হক মিয়া শ্রমিক।
বাদী পক্ষের আইনজীবী শাহাদাত হোসেন মামুন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে কিশোরগঞ্জ মডেল থানাকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য আদেশ দেন।
মামলা সূত্রে, ২০২০ সালে ওই ভুক্তভোগী নারীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন শহীদ মিয়া। তাদের সংসারে ৪ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই শ্বশুর শাশুরির প্ররোচনায় যৌতুকের টাকার জন্য ভুক্তভোগী ওই নারীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত তাঁর স্বামী। সন্তানের ভবিষ্যত জীবনের কথা চিন্তা করে এসব সহ্য করতেন ভুক্তভোগীর পরিবার। এসব নিয়ে অনেক দরবার সালিসিও হয় এলাকায়। গত ২৬ নভেম্বর ভুক্তভোগী ওই নারীর কাছে ১ লাখ টাকা দাবি করে স্বামী, শ্বশুর ও শাশুরি। এ টাকা দিতে অস্বীকার করলে ভুক্তভোগী নারীর চুলের মুঠি ধরে টানা হেচড়া করে মাটিতে ফেলে দেয়।
পরে বাঁশ দিয়ে সারা শরীরে বেধড়ক মারপিট করে। পরে শহীদ মিয়া এসএস পাইপ দিয়ে সারা শরীরে পেটায়। মারপিটে অজ্ঞান হয়ে গেলে ওই নারীকে বাড়ির সামনের সড়কে ফেলে দেয় অভিযুক্তরা। পরে পাগলা কুকুর ওই নারীকে কামড়িয়ে জখম করে। আশপাশের লোকজন ভুক্তভোগী নারীর মাকে খবর দিলে তিনি এসে তাকে উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ভুক্তভোগী নারীর মা স্বপ্না আক্তার বলেন, আমার মেয়েকে মেরে কোমড়ের হাড় ভেঙ্গে ফেলেছে ওই পাষণ্ডরা। মারপিট করে সড়কে ফেলে রাখে আমার মেয়েকে। অজ্ঞান অবস্থায় আমার মেয়েকে পাগলা কুকুরেও কামড়িয়েছিল। আমার মেয়ে বর্তমানে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এতেও শান্ত হয়নি তারা। আমাদের রাস্তায় পেয়ে খুন জখমের হুমকি দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমরা ভয়ে আতঙ্কে কাটাচ্ছি। আমরা গরিব মানুষ কি তাহলে বিচার পাবো না।
কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, কোর্ট ছাড়া কাউকে বক্তব্য দেয়া যাবে না।
কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) তাজরীন তৈয়ব বলেন, কোমড়ে আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে অবস্থা উন্নতির দিকে। এছাড়া ডান পশ্চাদদেশে কুকুরে কামড় দিয়েছিল। সেই কামড়ের ক্ষতও এখন উন্নতির দিকে। কুকুরের কামড়ের ভ্যাক্সিন দেয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত স্বামী মোঃ শহীদ মিয়া বলেন, আমি মেরেছি কিন্তু এসএস পাইপ দিয়ে মারিনি। আমি স্ত্রীকে রাস্তায়ও ফেলে আসিনি। আমার স্ত্রী ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি থেকে নিজেই চলে যায়। আমাদের নামে যেসব বলা হয়েছে সব মিথ্যা।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আদালতের আদেশ আমাদের হাতে এসে এখনো পৌঁছায়নি। হাতে পেলেই তদন্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করব।