নিজস্ব প্রতিবেদক
হবিগঞ্জে দুর্নীতির ও অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে আজ সোমবার এক গণশোনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুদক আয়োজিত এ গণশোনাণিতে স্থানীয় নাগরিকরা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা না পেয়ে নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন।
এ অভিযোগগুলো অধিকাংশই ছিল, প্রশাসন বিভাগ, পুলিশ বিভাগ, ভূমি অফিস, স্বাস্থ্য বিভাগ, শিক্ষা অফিস, প্রকৌশল বিভাগ, বনবিভাগ ও পৌরসভার ওপর।
দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন উপস্থিতিতে মোট ৮১টি অভিযোাগের ওপর এ শোনানি অনুষ্ঠিত হয়। ৩টি অভিযোগ সরাসরি আমলে নিয়ে দুদকে মামলা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
আজ সোমবার সকাল ১০ টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে স্থানীয় জনগনের অভিযোগের ওপর গণশোনাণির আয়োজন করে দুর্নীতি দমন কমিশন ও হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, একই বিভাগের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবর, দুদক সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম। এতে সভাপত্বি করেন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন।
এর আগে শহরের গুরুত্বপুর্ণ দুটি স্থানে দুদকের পক্ষ থেকে অভিযোগ বুথ বসিয়ে জনগন থেকে অভিযোগ গ্রহন করা হয়। প্রায় ২০০ অভিযোগ জমা হয়। তাঁর মধ্যে আজ ৮১টি অভিযোগের ওপর শোনাণি অনুষ্ঠিত হয় আজ। এ সময় অভিযোগকারী ও অভিযুক্তদের এ শোনাণিতে উপস্থিত রাখা হয়। প্রায় ৪ ঘন্টা সময় নিয়ে চলে এ অভিযোগগুলোর শোনানি।
শহরের রাজনগর এলাকার বাসিন্দা কবীর আহমেদ অভিযোগ আনেন জেলা গণপূর্ত অধিদপ্তরে একটি দরপত্রে তিনি অংশ নেন। কিন্তু প্রকৌশলী সঠিক ভাবে দরপত্র না করে তাঁর পছন্দের ঠিকাদার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমানকে কাজ দেন। পরে শোনানিতে এ বিষয়টিতদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয় গণপূর্তের বর্তমান প্রকৌশলীকে।
শহরের জামিল আহমেদ নামে এক তরুণ অভিযোগ করেন একজন নারী গত শুক্রবার হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কাযালয়ের গেটের কাছে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলেন। এ সময় আশপাশের লোকজন এ নারীকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা এ নারীর পরিচয় ও পুলিশের অনুমোদন ছাড়া চিকিৎসা দিতে অনীহা প্রকাশ করেন। পরে ওই লোকজন হবিগঞ্জসদর থানায় গিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চাইলে থানার কোন পুলিশ এগিয়ে আসেননি। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ শোনানিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও হবিগঞ্জসদর থানাকে ভৎসনা করা হয়। বলা হয়, একজন মানুষকে চিকিৎসা দিয়ে বাঁচানোর প্রথম কাজ ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। পরে তাঁর পরিচয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যেমন কাজটি ভাল করেনি। তেমনি পুলিশ সহযোগিতায় এগিয়ে আনা আসায় তাঁরাও একই অপরাধ করেছেন। পরে দুই প্রতিষ্ঠানকে প্রধানদের ডেকে এ বিষয়টি তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয় সভা থেকে।
একজন অভিযোগ আনেন, আজমিরীগঞ্জ উপজেলা পোষ্টমাস্টার ননী গোপাল একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়েও তিনি দায়িত্ব পালন না করে সাংবাদিকতা করেন। তিনি সম্প্রতি আজমেরীগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচন করেন। কর্মক্ষেত্রে তাঁর অনুপস্থিতির কারণে মানুষ সেবা পাননা। এমন অভিযোগ উঠায় বিষয়টি জেলা পোস্ট মাস্টারকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় সভা থেকে।
এবি ব্যাংক হবিগঞ্জ শাখার গ্রাহক সরোয়ার তালুকদার অভিযোগ করেন, তার ব্যাংক একান্ট থেকে সম্প্রতি ৫ লাখ টাকা গায়েব হয়ে গেছে। এবিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব না তাঁকে হয়রানি করছে। এর উত্তরে ব্যাংক ব্যবস্থাপক জিয়াউর রহমান জানান, অনলাইন টেকিং করে এ টাকা নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তাঁরা প্রতিষঠানের প্রধান দপ্তরকে অবহিত করেছেন। এ নিয়ে কাজ করছেন তাঁরা।
এ শোনানি শেষে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমারা আজকের এ শোনানিতে অনেকগুলো অভিযোগ সমাধান করেছি। কিছু সমাধান দেওয়া সম্ভব হয়নি অভিযোগ নিয়ে আদালতে মামলা চলামান থাকায়। তিনি রাজনৈতিক নেতাদের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সামনের নির্বাচনে যাঁরা অংশ নিবেন। তাঁদের প্রত্যেকের সম্পদের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। সাংবাদিকরা যেন কিছু গোপন না করে তা তুলে ধরেন। প্রত্যেককে সম্পদের বিবরণ দিতেই হবে।