মাসুদ মিয়া:
কিশোরগঞ্জে “উচ্চ ফলনশীল বিজেআরআই তোষা পাট ৯ (সবুজ সোনা) এর আঁশ ও বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি কৃষক পর্যায়ে জনপ্রিয়করণ ও সম্প্রসারণ” বিষয়ক মাঠ দিবস পালন করা হয়েছে।
পাট গবেষণা আঞ্চলিক কেন্দ্র, কিশোরগঞ্জ কর্তৃক আয়োজিত অদ্য ১৬/০৭/২০২৫ তারিখ বুধবার দুপুরে মহিনন্দ, মাইজপাড়া, কিশোরগঞ্জ সদর, কিশোরগঞ্জে পাটের নতুন জাতের জনপ্রিয়করণ ও সম্প্রসারণ বিষয়ক মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়। মাঠ দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিবিদ ড. মোঃ গোলাম মোস্তফা, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, প্রজনন বিভাগ, বিজেআরআই। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিবিদ ড. বোরহান আহমেদ, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, জেনোম গবেষণা দপ্তর, বিজেআরআই। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন কৃষিবিদ ড. মোয় ইউনুছ আলী, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বিজেআরআই, কিশোরগঞ্জ। এছাড়াও জুট ফামিং সিস্টেমস বিভাগ, বিজেআরআই এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনাব মোঃ সাখাওয়াত হোসেন, অত্র প্রতিষ্ঠানের ২ জন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাসহ মহিনন্দ এবং কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার ৭০ জন পাট চাষী অংশগ্রহণ করেন। উক্ত মাঠ দিবসে সার্বিক আনুষ্ঠানিকতা পরিচালনা করেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনাব মোঃ রাশেদ খান মিলন। বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনাব তাসনুফা করিম ঝুমুর তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন পাট শুধু একটি কৃষি পণ্য নয়, এটি বাঙালির ঐতিহ্য, ইতিহাস, অর্থনীতি এবং পরিবেশের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এক সোনালী সম্ভাবনার নাম। বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিকের পরিবর্তে পরিবেশ বান্ধব পাট জাত পন্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তাই পাট চাষে আধুনিক প্রযুক্তি উন্নত জাত, সঠিক সার ব্যবহার ও পরিবেশ সম্মত ব্যবস্থাপনা এখন সময়ের দাবী বলে উল্লেখ করেন। বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনাব মোঃ সাখাওয়াত হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, পাট একটি লাভজনক ফসল। তিনি কৃষকদের মাঝে পাট ভিত্তিক বিভিন্ন শস্য বিন্যাস সম্পর্কে আলোকপাত করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে ড. বোরহান আহমেদ বলেন, যেহেতু পাটের পরই আমন লাগাতে হয় তাই স্বল্পমেয়াদী পাটের জাত উন্নয়ন একটি জাতীয় চাহিদা। অন্যান্য পাট ফসল ১২০ দিনে কাটা হলেও সবুজ সোনা ৯০-১০০ দিনে কেটে ফেলা যায়। গুচ্ছমূলযুক্ত ফসলের পর প্রধানমূলযুক্ত ফসল চাষ করলে গাছ মাটির সর্বস্তরের পুষ্টিগুণ নিতে পারে। এর ফলে মাটিতে খাদ্য ও পুষ্টির সাম্যবস্থা বজায় থাকে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, দুই ফসলী জমিতে ইউরিয়া ২ ধাপে প্রয়োগ করা হয় কারণ ইউরিয়া অতি উদ্বায়ী হওয়ায় এটি বাষ্প হয়ে উড়ে যায় এবং মাটিতে থাকলে পারকোলেশন লস হয়। এজন্য ইউরিয়া ২ ধাপে প্রয়োগ করা হয়। যেন মাটিতে প্রতিনিয়ত নাইট্রোজেনের সরবরাহ অব্যাহত থাকে। প্রধান অতিথি কৃষিবিদ ড. মোঃ গোলাম মোস্তফা সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার বক্তব্য শুরু করেন। বিজেআরআই তোষা পাট ৯ কে সবুজ সোনা নামকরণের ব্যাপারে ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তিনি বলেন পাটের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিটা হচ্ছে নতুন একটি জাত। তিনি আরও বলেন প্রযুক্তি জনপ্রিয়করণের মাধ্যমে সম্প্রসারণ করতে হয় এবং এ প্রযুক্তি জনপ্রিয়করণ ও সম্প্রসারণে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসাবে কাজ করেন। তিনি পাট আঁশ ও বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেন। উক্ত মাঠ দিবসে সভাপতি ড. মোঃ ইউনুছ আলী, পাট উৎপাদনের বিভিন্ন কলাকৌশল সম্পর্কে কৃষকদের অবহিত করেন। বর্তমান পাট চাষ পদ্ধতি এবং অতীতের পাট চাষের পদ্ধতি নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করেন। ভবিষ্যতে আরও উচ্চ ফলনশীল পাটের জাত উদ্ভাবনের ব্যাপারে কৃষকদের অবহিত করেন। তিনি পাটের পোকামাকড়, রোগবালাই এবং দমন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেন। পরিশেষে উন্নত পাট আঁশ ও বীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কৃষকদের উৎসাহিত করে উক্ত মাঠ দিবসের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।