অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামে প্রায় শত একর জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কাউছারুল আলম কাউছ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত কাউসারুল আলম উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং সেকেরহাটি গ্রামের বাসিন্দা মৃত আবদুল ওয়াদুদের পুত্র।
ভূক্তভোগী কৃষকরা জানায়, অভিযুক্ত কাউছারুল আলম ও তার পবিারের সদস্যরা প্রায় ৪০ বছর ধরে উপজেলার চরপ্রতাপ মৌজার ওতিয়ারচরে এলাকার হতদরিদ্র বিভিন্ন মানুষের নামে সরকারী খাস জমি লিজ নিয়ে নিজেই দখল করে চাষাবাদ শুরু করেন। তারা জানায়, বছরের পর বছর নদীতে চর পড়লে চরের প্রায় শত একর জমি তিনি তার লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে দখল নেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, যাদের নামে লিজ নেওয়া হয়েছে তাদের অনেকেই লিজের বিষয়টি জানতোনা। অনেকে লিজের বিষয়টি জানলেও চেয়ারম্যানের লাঠিয়াল বাহিনীর ভয়ে কৃষকরা তাদের জমিতে যাওয়ার সাহস পেতনা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হলে সম্প্রতি অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন। কৃষক আলী আজগর এ প্রতিনিধিকে জনান, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকে কাউছ চেয়ারম্যান তার লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আমার তিন একর জমি দখল করে রেখেছেন।
পূর্ব অষ্টগ্রামের কৃষক এলিম খান এ প্রতিনিধিকে জানান, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকা কালীন তারা আমার তিন একর জমি দখল করে নেয়। তার লাঠিয়াল বাহিনীর ভয়ে আমরা এখনো জমিতে যেতে পারছিনা।
কৃষক নয়ন মিয়া বলেন, আমার তিন একর জমি ও খাস জমিসহ কাউছ চেয়ারম্যান ও তার ভাই ভাতিজাগণ প্রায় শত একর জমি দখল করে রেখেছেন। কিন্তু জমির বৈধ কাগজ-পত্র থাকা সত্বেও তার লাঠিয়াল বাহিনীর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা। আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর আমরা জমি আবাদ করতে গেলে তার লাঠিয়াল বাহিনী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করে দেয়। এ বিষয়ে আমি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাঈদ আহমেদ এ প্রতিনিধিকে জানান, কাউছ চেয়ারম্যানের বাবা আবদুল ওয়াদুদ ৭১এর স্বাধীনতা যুদ্ধে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি সুদের ব্যবসা করতেন সাধারণ মানুষ বিপদে পড়ে তার কাছে টাকার জন্য গেলে খালি স্ট্যাম্পে সই নিয়ে টাকা দিতেন। পরে টাকা ফেরত দেওয়ার পরেও তিনি স্ট্যাম্প ফেরত না দিয়ে স্ট্যাম্পে কৃষকের জমি লিখে দখল করে নিতেন। তখন হিন্দুদের উপর নির্যাতন চালিয়ে অনেকের সম্পদ দখল করে নিয়ে দলিল ছাড়াই নিজ নামে রেকর্ড করে নিয়েছিলেন। এখন তার সন্তানরাও সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদে বিশ্বাসী। তারা ভূমিদস্যু। ভূমিহীনদের নামে বরাদ্ধকৃত জমি আওয়ামী লীগের দাপট ও মামলা হামলার ভয় দেখিয়ে তাদের লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে তারা দখল করে রেখেছে।
আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কাউছারুল আলম কাউছের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে জমির মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি মুঠোফোনে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে অষ্টগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রুহুল আমিন এ প্রতিনিধিকে জানান, জমির কোন কাগজ-পত্র না থাকলেও
কাউছারুল আলম কাউছ ও তার আত্মীয়-স্বজন চরের এসব জমি দখল করে রেখেছেন। এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথাও স্বীকার করেন এই কর্মকর্তা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলশাদ জাহানের সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি জানান, আমি কাউছারুল আলম কাউছের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে কথা বলতে আমি তাকে ডেকে পাঠিয়েছি। তার সাথে কথা বলে বিস্তারিত জেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।