মাইনুল হক মেনু, স্টাফ রিপোর্টার :
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে সারা দেশের ন্যায় বাংলাদেশ এক্সট্রা মোহরার (নকল নবীশ) এসোসিয়েশনের কলম বিরতি পালন উপলক্ষে উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের নকল নবিশদের কলম বিরতিতে চরম ভোগন্তিতে পড়েছে সেবা গ্রহিতাগণ।
মঙ্গলবার কটিয়াদী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দেখা যায় সারা বাংলাদেশের ৫১৬ টি সাব-রেজিস্ট্রী অফিসে কর্মরত বৈষম্যের স্বীকার নকল নবিশদের চাকুরী জাতীয়করনের ১ দফা ১ দাবী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কলম বিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করছে এ অফিসে কর্মরত ২৮ জন নকল নবীশ। তারা সবাই একত্রিত হয়ে অফিসের সামনে মানববন্ধন করেছে। এতে করে দলিলের নকল নিতে আসা ব্যক্তিরাপড়ছে ভোগান্তিতে।
কটিয়াদী সাব রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের নকল নিতে আসা মোছাঃ মাকসুদা আক্তার মুক্তি জানান, গত ২/৩ বছর আগে একটি জায়গা রেজিস্ট্রি করেছি। জমি খারিজ করার জন্য দলিলের নকলের আবেদন করেছি। কিন্তু নকল নবীশদের আন্দোলন চলমান থাকায় দলিলের নকল পাচ্ছি না। জমা খারিজও করতে পারছিনা। জানিনা কতদিন পরে দলিলের নকল পাবো, অফিসের কেহ তা বলতে পারছেননা। শুধু আমি নয়, সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। নকল না পাওয়ায় মানুষ নানা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছে। দাবী বাস্তবায়ন সমন্বয়ক কমিটি ও বাংলাদেশ এক্সট্রা মোহরার (নকল নবীশ) এসোসিয়েশনের কটিয়াদী উপজেলা শাখার সভাপতি শফিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, বৃটিশ আমল থেকেই সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে নকল নবীশরা কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিটি সরকারই আমাদের চাকুরী স্থায়ীকরণের আশ্বাস দিয়ে বছরের পর বছর কালক্ষেপন করেছেন। কিন্তু কেউ আমাদের সাথে কথা রাখেন নি। তাই আমাদের যুক্তিসংগত দাবী আদায়ের লক্ষে সারাদেশে কর্মরত নকল নবীশরা দাবী আদায়ে রাজপথে নেমেছে । আমরা আর কোন আশ্বাস চাই না। এবার দাবী বাস্তবায়ন না হলে আমরা আর ঘরে ফিরবো না। বিগত ৩০ দিন যাবৎ ঢাকা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে দেশজুড়ে কলম বিরতি চালিয়ে আসছি। দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।
দাবী বাস্তবায়ন সমন্বয়ক কমিটির সদস্য সচিব সালমা আক্তার টুটুল বলেন, আমাদের চাকুরী স্থায়ী করনের দাবীতে সারা দেশে কর্মরত বৈষম্যের স্বীকার নকল নবিশগণ কলম বিরতি পালন করছে। আমাদের দাবী না মানা পর্যন্ত কলম বিরতি পালন করবো।
কলম বিরতি পালন ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ এক্সট্রা মোহরার (নকল নবীশ) এসোসিয়েশনের কটিয়াদী উপজেলা শাখার সভাপতি শফিকুল ইসলাম দুলাল, সাধারন সম্পাদক সালমা আক্তার টুটুল, মোঃ কবীর উদ্দিন, মোঃ নজরুল ইসলাম, নাজমা আক্তার, শরীফা আক্তার, পারভীন আক্তার, রফিকুর ইসলাম, খাদিজা আক্তার, জবা কুসুম, মনিরা পারভীন মুন্নী,নাহিদা আক্তার, শারমিন সুলতানা, ছালমা আক্তার-২, লুৎফুনিছা, তাহিরা বেগম, তাহমিনা আক্তার, মোমেনা আক্তার-২, ফাইজুন্নাহার, মরিয়মনেছা, সামসুন্নাহার মরিয়ম আক্তার শামসুন্নাহার জরিনা প্রমুখ।
কটিয়াদী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস দলিল লিখক সমিতির সাবেক সভাপতি বলেন, নকল নবীশগণের চাকুরী স্থায়ী করণের যে দাবী তাহা অবশ্যই যুক্তিসংগত। কিন্তু এই আন্দোলন দীর্ঘদিন হয়ে যাওয়ার কারনে জনসাধারন ভোগান্তির স্বীকার হইতেছে। এ অবস্থায় মহাময়িম সরকারের আশু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী।
কটিয়াদী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস দলিল লিখক সমিতির সাবেক সাধারন সম্পাদক মাইনুল হক মেনু বলেন, কটিয়াদী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসসহ সারাদেশে চলমান নকল নবিশদের চাকুরী স্থায়ী করনের দাবীর সাথে একমত পোষন করছি। তাদের দাবীর বিষয়ে দ্রুত সমাধানের জন্য বর্তমান সরকারের নিকট জোরদাবী জানাচ্ছি।
কটিয়াদী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস দলিল লিখক সমিতির আহবায়ক গোলাম ফারুক চাষী বলেন, সারাদেশে সাব-রেজিস্ট্রী অফিসগুলোতে কর্মরত নকল নবিশগণ বৈষম্যের স্বীকার। তাদের চাকুরী জাতীয় করণের যে দাবী তা যৌক্তিক। নকল নবিশদের চাকুরী জাতীয়করনের যৌক্তিক দাবীর সাথে আমি একমত।
কটিয়াদী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাবরেজিস্ট্রার এস.এম রুবেল পারভেজ বলেন, সারা দেশের ন্যায় কটিয়াদীতেও নকল নবিশগণ তাদের চাকুরী স্থায়ী করনের দাবীতে কলম বিরতি পালন করছে এতে সেবা গ্রহিতাগণ তাদের কাঙ্খিত নকল সম্পর্কিত সেবা পেতে ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে। দলিলের নকল না পাওয়ায় অনেকে জমি খারিজ করতে পারছেন না। খারিজ না করতে পারায় জরুরী প্রয়োজনে বিক্রয় করা জমি রেজিস্ট্রি দিতে পারছেন না অনেকেই। যে কারণে উক্ত বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে সরকারের দ্রুত উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করা জরুরী।