ডেস্ক রিপোর্ট
রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক গৃহশ্রমিক দিবস ২০২৪ পালিত হয়েছে। দেশের প্রায় ৪০ লাখ গৃহকর্মীকে শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানসহ গৃহকর্মীর অধিকার রক্ষায় মোট ৯টি দাবি নিয়ে ১৫ জুলাই ২০২৪ তারিখ সোমবার রাজশাহীতে র্যালি, পথসভা, গোলটেবিল বৈঠক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি পালিত হয়।
সকাল ৯:০০ টায় রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর র্যালী ও পথ সভার উদ্বোধন করেন। পথ সভায় তিনি বলেন, গৃহকর্মীরা সমাজের বাইরের বিচ্ছিন্ন কোন অংশ নয়। আমরা দেখেছি গৃহকর্মীরা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় এবং বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হলেও অনেক সময় সঠিক বিচার পান না। আমরা প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যু দেখেছি। আমাদের গৃহকর্মীরা নিয়োগের সময় কোনো চুক্তিপত্র পান না, পান না নির্ধারিত ছুটি। মাতৃত্বকালীন ছুটিও তাদের নেই। গৃহকর্মীদের পিছিয়ে রেখে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই গৃহকর্মীদের সংবেদনশীল আচরণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক পেশায় যুক্ত করতে সকলকে কাজ করতে হবে। র্যালি ও পথসভার উদ্বোধনী পর্বে রাজশাহীর অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) তরফদার মো. আক্তার জামীল ও রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
পথসভায় গৃহকর্মী মর্জিনা সুলতানা বলেন, আমরা আপনার পরিবারের দায়িত্ব নিই বলেই, আপনারা নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারেন। কিন্তু গৃহকর্মীর প্রাপ্য আপনারা দিতে চান না। ৯৩ শতাংশ গৃহকর্মী মাতৃত্বকালীন ছুটি পান না। গৃহকর্মীর উপর নির্যাতনের আইনি কার্যক্রম সম্পন্নে এতো হয়রানি হবে? আমরা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেও নিজেদের শ্রমিক বলতে পারি না, কারণ আমরা তো শ্রম আইনেই নেই। আমাদের এক দফা এক দাবি, গৃহকর্মকে শ্রম আইনের অন্তর্ভুক্তি।
র্যালি ও পথসভা শেষে গৃহকর্মী পেশায় নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় চ্যালেঞ্জ ও করণীয় শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে মূল প্রবন্ধের উপস্থাপনায় বলা হয়, দেশের ৪০ লাখ গৃহকর্মীর কাজের মূল্য প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার। যা জিডিপির গণনায় অন্তর্ভুক্ত নয় (বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন, ২০২১)। এছাড়াও দেশের ৮৪% গৃহকর্মী দারিদ্র্য সীমার নীচে বাস করেন। ৮৭ শতাংশ অনাবাসিক/খন্ডকালীন গৃহকর্মী কোনো সাপ্তাহিক ছুটি পায় না, মাতৃত্বকালীন ছুটি পায় না ৯৩%, গৃহকর্মীর কোন নিয়োগ পত্র নেই। বৈঠকে গৃহকর্মীদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিতে উত্থাপিত দাবিগুলো হলো- শ্রম আইনে গৃহকর্ম পেশাকে অন্তর্ভূক্ত করা, গৃহকর্মীদের সামাজিক মযার্দা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নিশ্চিত করা, গৃহকর্মে শিশুশ্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা, গৃহকর্মীদের প্রতি সকল প্রকার নির্যাতন বন্ধ করা, গৃহকর্মীদের নির্ধারিত কর্মঘন্টা, সাপ্তাহিক ছুটি, ন্যূনতম মজুরী নির্ধারণ করা, গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫ এর যথাযথ বাস্তবায়ন, গৃহকর্মীদের শোভন কাজ সংক্রান্ত আইএলও কনভেনশন ১৮৯ অনুসমর্থন, গৃহকর্মীদের মর্যাদা ও অধিকার সুরক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং গৃহকর্মীর উপর নির্যাতনকারীর দ্রুত শাস্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা।
গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ফিন্যান্স) জনাব মো. রশীদুল হাসান, পিপিএম, উপস্থিত ছিলেন। তিনি গৃহকর্মীদের সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগোর পাশাপাশি নাগরিক সমাজকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
অক্সফ্যাম প্রোগ্রাম অফিসার রাজশ্রী গায়েন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানগুলোতে অতিথি হিসেবে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক এটিএম গোলাম মাহবুব, বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম, সুজনের সভাপতি সফিউদ্দিন আহমেদ, রাসিক কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কামরু, গৃহকর্মীদের পক্ষে কুলসুম খাতুন, জান্নাতুল ফেরদৌসসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর প্রতিনিধিবৃন্দ। গোলটেবিল বৈঠকের শুরুতে অক্সফ্যাম এর পক্ষে প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর তারেক আজিজ এবং এসিডি ডিরেক্টর প্রোগ্রাম শারমিন সুবরিনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কর্মসূচি তুলে ধরেন।
গ্লোবাল আফেয়ারস কানাডার সহযোগিতায় ও অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের সহায়তায় দিনব্যাপী এই আয়োজনে সাথে ছিল এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি, দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে), কর্মজীবি নারী এবং ইউসেফ বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর জুন মাসের ১৬ তারিখ গৃহকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক গৃহকর্মী দিবস পালিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর মাসব্যাপী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচারণা ও কার্যক্রম পরিচালনা করছে অক্সফ্যাম। অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ কর্তৃক দিনব্যাপী এই আয়োজনে রাজশাহী ও ঢাকার প্রায় দুই শতাধিক গৃহকর্মী অংশগ্রহণ করেন।