শিমুল তালুকদার, সদরপুর ( ফরিদপুর)
প্রতিনিধিঃ
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার পদ্মা নদীর তীর ও চরে বাস করা মানুষের মধ্যে রাসেল ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) সাপের আতঙ্কে জেঁকে বসেছে। কৃষক জমির ফসলসহ গবাদি পশুর খাবার সংগ্রহ করতেও ভয় পাচ্ছেন। একের পর এক বিষধর সাপটির দেখা মিলছে উপজেলার নদী তীরবর্তী দিয়াড়া নারিকেল বাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়। ইতিমধ্যে চরাঞ্চলে এই সাপের কামড়ে ছয় মাসে ঠান্ডু মাতুব্বর, আনোয়ার শেখ, শুভা মাতুব্বর, জাহিদ ফকির, শেখ আব্দুল্লাহর মৃত্যু হয়েছে বলেও জানা গেছে। এদের মধ্যে দুইজন শিশু ও তিনজন প্রাপ্তবয়স্ক।
স্থানীয়রা জানান, সদরপুর উপজেলার দিয়াড়া নারিকেল বাড়িয়া ইউনিয়নের পদ্মা নদী সংলগ্ন নন্দলালপুর, হাওলাদার কান্দি চুঙ্গা কান্দি, হকিয়াতপুর, বিশ্বাস কান্দি, কোটি কান্দি, হালিম মাতুব্বরের কান্দি, জব্বর শিকদার কান্দি ও কুদ্দুস মোল্লার কান্দি চর এলাকার শতাধিক কৃষক জমি চাষ করেন। দিয়াড়া নারিকেল বাড়িয়ার বেশির ভাগ জমি নদীগর্ভে বিলীন হয় প্রতিবার। তাই এই চরে কৃষকেরা ভুট্টা, বাদাম, তিল, আমন ও আউশ ধানের চাষ শুরু করেন। এরি মধ্যে ভুট্টা ঘরে তুলে তিল ও ধানের চাষ করা হয়েছে।
গত শুক্রবার সকালে দুই কৃষকে আমন ধানে কেটে রেখে দেয়। পরে দুপুরে আঁটি বাঁধা সেই ধান তুলতে গিয়ে রাসেল ভাইপার সাপের কামরে আক্রান্ত হয়। তাদের দুজনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের দুইজনকে যখন সাপে কামড় দেয় তখন অন্য শ্রমিকরা ধান রেখে চলে যায়। এমনকি ভয়ে গরুর ঘাস কাটতেও আসছেন না অনেকে।
নুরুউদ্দিন সরদার কান্দি এলকার রাজা মল্লিক জানান, গত কয়েক দিনে সে তিনটি রাসেল ভাইপার সাপ দেখতে পেয়েছেন। এছাড়া কয়েকদিন আগে ইউনিয়নের নন্দলালপুর গ্রামের শেখ খবির নামে এক কৃষকও এই সাপ দেখতে পান। রাসেল ভাইপার সাপ দেখেছেন হাওলাদার কান্দির জুয়েল হাওলাদার, নন্দলালপুরের আয়নাল ফকির এবং একই গ্রামের মোশারফ হোসেন।
দিয়াড়া নারিকেল বাড়িয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, চরাঞ্চলজুড়ে রাসেল ভাইপার সাপের কারণে কৃষকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেউ মাঠে যেতে চাচ্ছে না এবং ধান, ভুট্টা কাটতে শ্রমিকও পাচ্ছে না। মাঝেমধ্যে কৃষকরা সাপ দেখে পিটিয়ে মেরে ফেলে মাটিতে পুঁতে ফেলছেন। প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
দিয়াড়া নারিকেল বাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন বলেন, ইউনিয়নে গত কয়েক মাসে রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৭ জুন শুক্রবার সকালে আরও দুই জনকে রাসেল ভাইপার সাপে দংশন করে। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। চরাঞ্চলের আমার ইউনিয়নের, নন্দলালপুর, হাওলাদার কান্দি, কুদ্দুস মোল্লার কান্দি, হালিম মাতুব্বরের কান্দি, জব্বর শিকদার কান্দি, কাচিকাটা সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে রয়েছে। কৃষকরাও আতঙ্কে। আমি বিষয়টা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছি। এ বিষয়ে ইউনিয়নের সকল জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ ওমর ফয়সল বলেন, দিয়াড়া নারিকেল বাড়িয়া ইউনিয়নের রাসেল ভাইপারের কামড়ে যে পাঁচজন মারা গিয়েছে এমন কোন তথ্য আমি পাইনি, পাঁচজনের মধ্যে এই হাসপাতালে কেউ মারা যায়নি। আমাদের হাসপাতালে সাপে কাটা রোগীদের অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সাপে কাটা রোগী বা পরিবারের কেউ আতঙ্কিত না হয়ে রোগীকে ওঝার কাছে না নিয়ে সরাসরি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসতে হবে। সাপে কাটার পর সময়মতো চিকিৎসা দিতে পারলে রোগী বেঁচে যাবে।
সদরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিটুল রায় বলেন, দিয়াড়া নারিকেল বাড়িয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলে রাসেল ভাইপার সাপের উপদ্রবের কথা শুনেছি। এ ব্যাপারে কৃষকদের কৃষিকাজ করার সময় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছি ও রাসেল ভাইপার সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ মোরাদ আলী বলেন, জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রথম অবস্থায় চরাঞ্চলে কৃষকদের বিশেষ জুতা (গামবুট) দেওয়া হয়েছে।