কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি।।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট খাদ্য গুদামে ব্যবসায়ীর ধান ট্রাকে যাওয়া শুরু হলেও কৃষকের ধান ভ্যান গাড়ীতেও যাচ্ছে না। সরকারি খাদ্য গুদামে ধান সংগ্রহ অভিযানের শুরুতেই এমনি নানা অভিযোগ তুলেছেন কৃষকরা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শরিফ আহমেদের অপসারণ ও নতুন তালিকা করে ধান সংগ্রহের দাবিতে মানববন্ধন করেন কৃষকগণ। পরে শতাধিক কৃষকের স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর প্রেরণ করেন তারা।
অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ছোট, বড় ও মাঝারি আকারের ৩৮ হাজার ৮৫৩জন কৃষি কার্ডধারী কৃষক রয়েছেন। চলতি অর্থ বছর রাজারহাট উপজেলা খাদ্য গুদামে ৩২টাকা কেজি দরে ১হাজার ২৮০ মেট্রিক টন ইরি- বোরো ধান ক্রয়ের বরাদ্দ দেয় খাদ্য অধিদপ্তর। গত ১৩মে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শরিফ আহমেদ কৃষকদের অনুপস্থিতিতে মোবাইল এ্যাপসে লটারি দেখিয়ে তালিকা প্রনয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তালিকায় উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৪১৬জন ছোট, বড় ও মাঝারি কৃষকের নামে ৩২টাকা কেজি দরে তিন মেট্রিক টন হিসেবে ধান সংগ্রহের কথা উল্লেখ করা হয়। ফলে যার এক মেট্রিক টন ধানও চাষাবাদ হয় না এমন কৃষকের কাছ থেকেও তিন মেট্রিক টন হিসেবে ধান সংগ্রহের সুযোগ করা হয়েছে। আবার যে কৃষক ১০/২০মেট্রিক টন ধান চাষাবাদ করেন তার কাছ থেকেও কোন ধান ক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়নি। এতে উপজেলার ৩৮ হাজার ৮৫৩জন কৃষি কার্ডধারী কৃষকের মধ্যে মাত্র ৪১৬জন তালিকায় স্থান পেয়েছেন। অথচ কৃষকদের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে লটারির মাধ্যমে একজন কৃষকের কাছ থেকে তিন মেট্রিক টনের পরিবর্তে এক মেট্রিক টন হিসেবে ক্রয় করা হলে অন্তত ১হাজার ২৮০জন কৃষক ন্যায্য মূল্যে ধান বিক্রির সুবিধা পেতেন। এতে করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের নির্দেশ থাকলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
এসময় তারা ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারনা ছাড়াই কৃষকদের অনুপস্থিতিতে লটারি দেখিয়ে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহকারি কৃষকের নামের তালিকা বাতিল এবং খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন।
এছাড়া ২৫দিন পূর্বে লটারি দেখানো হলেও ৪/৫ দিন পূর্বে নামের আংশিক তালিকা খাদ্য গুদামে টাঙ্গিয়ে দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। এরআগে তালিকা গোপন করে ওসিএলএসডি দু’জন খাদ্য ব্যবসায়ির সাথে যোগসাজস করে তাদের মাধ্যমে তালিকাভূক্ত অধিকাংশ কৃষকদের কৃষি কার্ডগুলো সংগ্রহ করে নিজেরাই ধান সরবরাহের পায়তারা করছেন বলে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন তারা। এরআগে গত ২০২৩ সনেও রাজারহাট ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ধান সংগ্রহ অভিযানে ব্যাপক অনিয়ম করায় প্রকৃত কৃষকগণ সুবিধা বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে ।
স্মারকলিপি প্রদানকারী কৃষকগন বলেন, তালিকায় প্রকৃত কৃষকের নাম বাদ পড়ায় এপর্যন্ত ধান সংগ্রহের পরিমান শুন্যের কোঠায় রয়েছে। এই তালিকা অনুযায়ী ধান ক্রয় করা হলে প্রকৃত কৃষকরা সুবিধা বঞ্চিত হবেন এবং সরকারের মূল উদ্দেশ্য ভেস্তে যাবে।
এদিকে বুধবার খাদ্য গুদামে ট্রাকে করে ধান ঢোকানোর ঘটনায় এলাকায় নানা গুঞ্জন চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেছেন, এসব ধান ব্যবসায়ীদের। কৃষক ধান দিতে পারছেন না।
এবিষয়ে জানার জন্য মুঠে ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শরিফ আহমেদ মোবাইল রিসিভ করেননি।
এমনকি দুপুরে খাদ্য গুদামে গিয়েও সাংবাদিকগণ তাকে উপস্থিত পাননি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (চলতি দায়িত্ব) মিসবাহুল হোসাইন বলেন, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় এ্যাপসের মাধমে লটারি করা হয়েছে।
উপজেলা ধান ক্রয় কমিটির সদস্য ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুন্নাহার সাথী বলেন, ওই দিনের মিটিংয়ে থাকতে পারিনি, তারা লটারিতে সুবিধাভোগী কৃষকের তালিকা আমাকে দেয়নি বলেো জানান।
এরআগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ খাদিজা বেগম বলেন,তারা আমার অফিসে মোবাইল এ্যাপসের মাধ্যমে লটারি করেছিল । অনিয়ম হয়নি,তবে তাৎক্ষণিকভাবে কৃষকদের কোন তালিকা আমাকে সরবরাহ করেননি। ধান সংগ্রহে যেন অনিয়ম না হয় সে বিষয়ে নজরদারি করবো।