অধ্যক্ষ ড.গোলসান আরা বেগম
সৃষ্টির এ কি লিলা-খেলা,কারুকার্য, ভয়- আতঙ্ক,চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য, জয়,ক্ষয়,মহাবিপর্যয়, দুঃখ, ব্যথা,বেদনা, মানবতা, সহনশীলতা, দানবতা, কষ্ট,পৈশাচিকতা ইত্যাদি বহুবিধ টক ঝাল মিষ্টি তথ্যের সংমিশ্রণের পৃথিবী। প্রতিটা সৃষ্টিই হাবু ডুবু খায় বোবা বধির পৃথিবীর অপার গোলক ধাঁধার খেলায়। জল, স্থল, বায়ুমন্ডল,গহীন মহসাগরের অতলান্তে, দুর্গম পাহাড়, বনজঙ্গলে, মহাশূণ্যে, প্রসারিত রয়েছে জীবজগতের বিচরণ। গুহাবাসী মানুষ তার বুদ্ধি মেধা কাজে লাগিয়ে অজেয় দুর্গম জীবন যাত্রা কে করছে জয়, ফুটিয়েছে ফুল। জীবজগতকে পৌঁছে দিয়েছে আয়েশী উপভোগ্য জৌলুষে। ঘুরে বেড়াছে সৌরজগতের গ্রহ, উপগ্রহ, গেলাস্কি, নক্ষত্র, কৃষ্ণ গহ্বরে আরো আরো অজানা তথ্য উদঘাটন করতে। মানুষের জানার আগ্রহ, অজানা রহস্য উদঘাটনে পিপাসার অন্ত নেই। যত জানে তত বেশী জানার আগ্রহে রহস্যময় কল্পনার সাগরে ঘুরে বেড়ায়।, জানাতে চায় কল্প রহস্য আরো। জানার আগ্রহ থেকেই জন্ম নিয়েছে আলো ঝলমল সভ্যতা, গ্লোবাল বিশ্ব। পাশাপাশি জন্ম নিয়েছে হিংসা প্রতিহিংলা, জয় পরাজয়ের মহা আতাঙ্ক। বধির পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে সহ্য করে সুখ দুঃখের ভেতর জীবন বাজী রেখে বহুবিধ ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার দহন তাপ, ঘাত প্রতিঘাত।
আমরা অর্থ্যাৎ বিশ্ব বাসিরা সর্বদা ভয় আতংকের মধ্যে ডুবে থাকি।হঠাৎ কে কার মাথায় ভাংগে কাঁঠাল।দু’পা ডুবিয়ে দেয় রক্ত গঙ্গায়। নারী তো মহা আতংকের মাঝে বসবাস করে। সারাক্ষণ অবহেলা, অত্যাচার, আবমূল্যায়ন, অমানুসিক যন্ত্রণা কাতর জীবন যাপন করে। কেন আতংকগ্রস্থ থাকতে হয়, আমরা সবাই জানি। চোখ খুলে হাত বাড়িয়ে সচারাচর কেউ দাঁড়াই না নারীর পাশে। কতো নারীকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাস রোদ্ধ করে, ধর্ষণের পর মেরে ফেলে। এমন কি এসিড ঢেলে বা আগুনে পুড়িয়ে ফেলার মতো ভয়ংকর আতংকে থেকেও সংসার, সন্তানকে আগলে রাখে নারী। এ সব ভয় আতংক মাথায় তুলে, নারী টুকটুকে বউ সেজে লাল গোলাপের বাসর সাজায়। সোনার টুকরো সন্তানের মুখে তুলে দেয় দুধ ভাত, ভালবাসার রং মাখে ঠোঁটে মুখে।
রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়। পৃথিবী নামক ভূগোলকটি আচমকা কেঁপে ওঠে।রিকটার স্কেলে ভূমিকম্পের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে সভ্যতার পর সভ্যতা বিলিন হয়ে যায়।পাল্টে যায় ভূ- আকৃতি।প্রাণী,উদ্ভিদ, জড় পদার্থ সবই এই আতংকে মহান সৃষ্টি কর্তার রহমতের দিকে তাকিয়ে থাকে। কখন কি ভাবে হবে ভূমিকম্প, কেই বলতে পারে না। ঘূর্ণঝড়, জলোচ্চ্বাস প্রচন্ড বাতাসের টানে তুলে নিয়ে যায় ঘর বাড়ি, মানুষসহ জীবজন্তু।লন্ডভন্ড করে দেয় জীবন যাত্রা। মেঘবৃস্টি হলে আকাশে গড়াগড়ি করে পানির জলরাশি।মেঘের ঘর্ষনে তৈরী হয় বিদ্যুত,গর্জন।সেই বিদ্যুতের ঝলকানি থেকে ছিটকে পড়ে বর্জ হিসেবে আগুনের ফুলকি। এই বর্জপাতের বিদ্যুতের আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় প্রণী উদ্ভিদে, ও যেখানে পরে সে জায়টাও ঝলসে যায়। এর হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জোড়ালো কোন আগাম সংকেত নেই। তারপরও মানুষ বর্জ্যপাতের ভয়কে উপেক্ষা করে মাঠে ঘাটে কাজ করে বেড়ায়।
মৃত্যু অনিবার্য সত্য।জন্মিলে মরিতে হবে। রতি মহারতি যেই হউক, মৃত্যকে এড়িয়ে বাঁতে পারবে না। এটাই দুনিয়ার নিষ্ঠুর খেলা। মৃত্যু কানের দ’পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মৃত্যু নামক যমদূত জিবাইল যখন দড়িধরে টান দেবে,তখনই বিনা বাক্য ব্যয়ে উ আ করতে করতে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে।ডাক্তার, ঔষধ, পানিপড়া, তাবিজ, কবজ কোন পথ্যই যমদুতকে ফিরিয়ে দিতে পারবে না। উ- কি ভয়ানক অন্ধকারের হাতছনিকে সামনে নিয়ে বেঁচে আছি। এ দিকে ফেরেস্তা ঈসরাফিল মুখের সামনে শিঙ্গা নিয়ে দাড়িয়ে আছে, যখনই ফু দিবেন, পৃথিবী ভেঙ্গে চুরে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।সে কেয়ামতের দিন, তারিখ কারো জানা নেই।তারপরও ভয়ঙ্কর কেয়ামতের কথা মনে হল প্রাণীকূল ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে।
সৃষ্ঠির ঊষা লগ্ন থেকে উর্গ্র প্রকৃতি, হিংস্র অভয়ারণ্র্যের হিংস্রতার সাথে লড়াই করে আজকের আলোঝলমল সভ্যতার উন্মেষ ঘটে। বরর্বর,আন্ধকার যুগ পাড়ি দিয়ে, গুহা জীবন পরিহার করে, ১৮০০ সালেআধুনিক সভ্য যুগে পা রেখেছে পৃথিবী।মানুষ ধর্ম, বর্ণ, শ্রণি ভেদ,আচার, আচরণ, শিল্প সংস্কৃতি ইত্যাদি বৈষম্যে বিভাজিত হয়ে সৃষ্ঠি করেছে নিজস্ব খন্ড খন্ড ভূ-ভাগ। মাত্র এক জোড়া মানব- মানবী( বিবি হাওয়া ও আদম)র জঠর থেকে জন্ম নিয়ে আজকের বিশ্বে দাঁড়িয়েছে আট শত কোটির জন বসতি।আমাদের বাংলাদেশে ২০২৪ সালে জন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটিতে । অধিক জন সংখ্যার চাপে ও ভারে শান্তির সুবাতাস বেরিয়ে যাচ্ছে পকেট কেটে। নেমে আসছে পৃথিবী জুড়ে অশান্তির লু-হাওয়া। দুইটা বিশ্বযুদ্ধ পারি দিযে পারমানবিক বিপ্লবের বিশ্বে পদার্পন করেছি আমরা।পৃথবীর বিভিন্ন প্রান্তে লাগিয়ে রেখেছি হত্যাযঞ্জ ও যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা ।ড্রোন,আনবিক অস্র ব্যবহার করে মানুষকে, দেশকে ধ্বংস করার মহোৎসব। উৎপাদন ও ব্যবহার করছি মরণঘাতি যুদ্ধাস্র।
পৃথিবীর উন্নত দেশ গুলো তাদের নিজস্ব আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্য একে আপরের দিকে তাক করে রেখেছে পারমানবিক অস্র সম্ভার। করছে কূনৈতিক গুটি চালাচালি।যে কোন মহূর্তে লেগে যেতে পারে পৃথিবী ধ্বংসী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।তখন মানুষকে শাসন ও শোষণ করার জন্য কেউ থাকবে না। পৃথিবী পরিণত হবে জনমানবহীন শূন্য ধ্বংসস্তুুপে।
মানুষ শুধু মানুষের শক্রু নয়,পৃথিবীরও শক্রু।নিজের আয়েশের বিস্তার ঘটাতে গিয়ে পরিবেশ দূষণের মতো মারাত্বক ব্যাধি ডেকে আনছে। পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধিকারী ক্লোর ফ্লোর ক্লরিন, কার্বনডাই অক্সাউড,সালফার ডাই অক্সাইড,কার্বন মনোক্সাইডসহ নানা প্রকার বিষাক্ত গ্যাসের জন্ম দিচ্ছে শিল্প কারখানায় বর্জ্র পদার্থ হিসেবে।একদিকে সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধি করছে।অপর দিকে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলীয় বেষ্টনী ওজনস্তর ক্ষয় করে ফলছে। ২০৫০ সাল বা তার আশে পাশের সময়ে মহাবিপর্যয় যুক্ত পৃথিবীর চেহারা কোথায় দাঁড়াবে, সে ভয়ে বিশ্ববাসি আতংকগ্রস্থ দিন পাড় করছে, মহাশূণ্যের দিকে থাকিয়ে ও মাথায় রেখে হাত। পানির সংকট,তেল গ্যাসের অভাব,বায়ুমন্ডলীয় পরিবেশ দূষণে কারণে, মানুষের নাভিশ্বাস ওঠে যাবে বলে বৈঞ্জানিকরা আগাম সংকেত দিচ্ছে।কিন্তু সমাধাসেন উপায় খোঁজে পাচ্ছে না।
আমরা যারা মুসলমান, তাদের রয়েছে পারকালে দোযকের আগুনের শাস্তির ভয়।।যারা আল্লাহর নির্দেশিত বিধি বিধান মেন চলে, তাদের ভয় নেই।হয়তো বা চলে যাবে বেহেশতে। কিন্তু কেউ জানে কে বেহেশে বা দোযকে যাবে। আল্লাহর বন্ধু হওয়া সত্বেও আমরা সারা বিশ্ববাসি প্রতিক্ষণ নবীজী করিম ( সাঃ) কে বেহেশতে নেয়ার জন্য আল্লাহ র কাছে সুপারিশ করছি।ভালো কাজ করলে নবীজি আল্লাহ কাছে কিয়ামতের দিন সুপািরিশ করবেন আমাদের বেহেশতে যাওয়া জন্য। রয়েছে জীন,পরী, ভূতের খৌতিকতার ভয়।
পরিশেষে বলবো –হাজারো ভয় আতংকের পরও জীবন মধুময়।আল্লাহ র নিয়ামতে ভরপুর।কেউ পৃথিবী ছেড়ে যেতে চায় না। শত দুঃখ ব্যথা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে পৃথিবীর আলো বাতাসে বেঁচে থাকতে চায়। হে মায়ার পৃথিবী শান্ত হও।তোমার সৃষ্টিকে ফুলের বাগান সাজাও।
লেখকঃ উপদেষ্ঠামন্ডলির সদস্য।বাংলাদেশ কৃষকলীগ। ০১৭১৭৭৬২৭৪৫
চলমান