নিজস্ব প্রতিবেদক
করিমগঞ্জের ভোলা ডুবা হাওরে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতায় দেড় হাজার একর বোরো ধানের জমি ক্ষতির মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক একর বোরো ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক পরিবারে চলছে কান্নার রোল ও হাহাকার। কৃষকরা দ্রæত জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা আলী জানিয়েছে, এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সরেজমিনে জানা গেছে, জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার গুনধর ইউনিয়নের ভোলাডুবা হাওরে সম্প্রতি বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বিলের পানি নদীতে নামার খালের মুখ ভরাট করায় এ অবস্থার সুষ্ঠি হয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে দেড় হাজার একর বোরো জমি। কৃষকরা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক একর বোরো জমি পানির নিচে তলিয়ে বিনস্ট হয়েছে। আরো এক হাজার একর বোরো জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। যেখানে শুকনো থাকার কথা সেখানে এখন ৬ থেকে ৭ ফুট পানি রয়েছে। কয়েকদিন পরেই যেখানে কৃষকের স্বপ্নের বোরো ফসল ঘরে তোলার কথা কথা। সেখানে জলাবদ্ধতায় চোখের সামনে স্বপ্নের বোরো ধানের জমি বিনস্ট হচ্ছে। দেখার যেনো কেউ নেই।
এতে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। একমাত্র বোরো ফসল জলাবদ্ধতার কারণে বিনস্ট হওয়ায় অনেক কৃষক পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তারা আগামী দিনে পরিবার পরিজন নিয়ে কিভাবে চলবেন। আবার ধার-দেনা কিভাবে পরিশোধ করবেন সে চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্থ অনেক কৃষক পরিবার নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
কৃষকরা আরো জানিয়েছেন, ভোলাডুবা হাওর থেকে খাল দিয়ে বৃষ্টির পানি নিস্কাশন হয়ে সে পানি ধনু নদীতে গিয়ে পড়ার কথা। কিন্তু খালের মুখসহ অন্তত তিন কিলোমিটার খাল ভূমিদস্যুরা অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে। যেখানে খাল ছিল সেখানে বোরো ফসল করেছে অবৈধ দখলদাররা। এই খাল ভরাট করার কারণে বিলের পানি খাল দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে না। ফলে প্রতিবছর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। গত বছরেও ভোলাডুবা হাওরে জলাবদ্ধতায় বোরো ফসলের ক্ষতি হয়েছিল। তবে এবার গত বছরের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ বেশী। খাল খনন না করায় প্রতিবছর বোরো ধান সময় মতো রোপন করতে পারেন না কৃষকরা। পানি সরতে দেরী হয়। আবার বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা হয়ে উঠতি বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। এ যেন এ হাওরের কৃষকদের নির্মম নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষকরা ১০ বছর ধরে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেনা বলে কৃষকরা অভিযোগ করেছেন। সুধী গ্রামের কৃষক গোলাম রাব্বানী জানান, তিনি দুই একর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। কাঁচা জমি এখনো পেকেনি। বৃষ্টির পানিতে পুরো জমিটাই পানির নিচে। এই জমি আর কাটার কোনো সুযোগ নেই। এখন কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না বলে তিনি জানান। একই গ্রামের কৃষক মরাজ উদ্দিন জানান, আর কয়েকদিন পরে আমাদের জমির ধানের কাটার কথা। পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এখন কাঁচা ধানের জমিতে এখন সাঁতার পানি। কৃষক জমিতে না এসে এখন ঘরে বসে কান্নাকাটি করছে বলে তিনি জানান। কৃষক রুবেল ভূঁইয়া জানান, ভোলাডুবি হাওর থেকে পানি নামার খালটি দিয়ে এক সময় পণ্যবাহী বড় বড় নৌকা চলাচল করতো। এখন খালটির মুখসহ বিভিন্ন জায়গা ভরাট করায় খালের অস্থিত্ব নেই। তিনি জরুরি খাল খনন করে কৃষকদেরকে ভয়াবহ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার জোর দাবি জানান। ।
গুনধর ইউপি চেয়ারম্যান আবু ছায়েম রাসেল জানান, কৃষকদের স্বপ্নের বোরো ধান বিনস্ট হওয়ায় কৃষকরা কান্নাকাটি করছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে আগামী উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় তিনি বিষয়টি তুলে ধরবেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নুকেও বিষয়টি অবগত করাবেন বলে তিনি জানান।
করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা আলী জানান, এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি করা হবে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, কৃষকদের ক্ষতি হাত থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।