মোহাম্মদ মাসুদ
চট্টগ্রামে দুরন্ত বাজারে ষষ্ঠ বারের মতো এবারও হাজার মানুষ গোস্ত নিতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ক্রেতা সাধারণ। তবে দীর্ঘ ৫/৬ ঘন্টা সময় অপেক্ষা করে দিনভর দীর্ঘ লাইন ধরে গোস্ত সংগ্রহ করা ছিল খুবই কষ্টকর ভোগান্তি ও অস্বস্তিদায়ক। তবে কমদামে গোস্ত পেয়ে খুবই খুশি ক্রেতা সাধারণ।
দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির বাজারে সবকিছুতেই মানুষের আহাকার। গোস্ত খাওয়া এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাহিরে। দীর্ঘদিন ধরে গরুর মাংসের দাম ছিল মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। ৭৮০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি মাংস কেনা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হচ্ছিল না। কিন্তু দুরন্ত বাজারের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ প্রশংসিত আলোচিত হয়েছে হালিশহর এলাকাবাসী, আশপাশ অঞ্চল, নগরবাসী সহ দেশজুড়ে।
আজ ৬,এপ্রিল (শনিবার) ভোর সকাল থেকে
দুরন্ত বাজার সুপার শপে হালিশহর পোর্ট কানেক্টিং রোড় খান বাড়ির বিপরীতে নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত সাধারণ হাজার মানুষের উপচে পড়া ভীড় ও দীর্ঘ লম্বা লাইনে সম পরিমানে নারী পুরুষের অপেক্ষাকৃত ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল দেখার মতো।
তবে, উপস্থিত ক্রেতাদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ছিল খুবই বিরক্তিকর কষ্টকর অস্বস্তিদায়ক। উপস্থিত ক্রেতাদের বক্তব্যে বিরক্ত কষ্টকর স্পর্শকাতর চিত্রে উঠে আসে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় অনেকের আপত্তি থাকলেও। অনেকেই ধৈর্যধারণ ও কমদামে গোস্ত পেয়েই তাঁরা সন্তুষ্ট স্বস্তি প্রকাশ করেন। তবে,দুরন্ত বাজারের পূর্ব ঘোষণার জেরে কমদামে গরু মহিষের গোস্ত ক্রয়ে ভোর সকাল থেকে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন রয়েছে বলে উপস্থিত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ক্রেতারা জানান । ৬৪০ টাকা কেজি দরে গোস্ত বিক্রির ষষ্ঠ ধাপের এবারও গোস্ত বিক্রি করছে হাজারো ব্যাথা দিনভর।
গেল ৫বারের মতো এবার ৬এপ্রিল ৬ষ্ট বারের মতো। ৫ম বারে ৪০টি গরু ১০টি মহিষ,৪র্থ বরে ১৯টি গরু ৬টি মহিষ, কি করে হাজার হাজার গ্রাহক ক্রেতাদের মাঝে। ঝড় বৃষ্টি বাঁধা তীব্র গরম উপেক্ষা করে গোস্ত সংগ্রহ করছে ক্রেতা সাধারণ। এবং আলোচিত হয় গণমাধ্যম সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইনে।
লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ক্রেতা বলেন,আমরা পাচ্ছিনা গোস্ত এটা তাদের আকর্ষণ পাবলিসিটি। ১৫০০টাকা মালের সাথে সাপ্লাই দিচ্ছে, প্রথমে ১০টায় এখন ১টায় কেন,? সময় নষ্ট হচ্ছে। তীব্র রোদে। ১টা বাজে দিবে তা আগে থেকে বলতো? ৬টা বাজে এসেছি ১০টায় দিবে আসতে বলছে এখন ১টা বাজে। দীর্ঘক্ষন সিরিয়ালে আছি ।
লাইনে দাঁড়ানো আর একটা কথা বলেন,প্রথমে ১০টায় এখন ১টায়। তুই কেজির জায়গায় কেন অযুহাতে ১কেজি। বাজার করলে গোসত দেওয়া হবে। আজকে বিশেষ পর্বের দিন পবিত্র শবে কদর । কিছুই বলার নেই। ৫ঘন্টা দাঁড় করিয়ে বলছে ২কেজি দিবেনা।
আরেক ক্রেতা বলেন, ৮টা বাজে আসছি। কিন্তু ২ কেজি দিবেনা না দিলে না বলতেন কিন্তু এখন অর্ধেক দিবে বলছে। তথ্য ইনফরমেশন মিসিং শৃংখলার অবনতি নানা অভিযোগে ক্রেতাদের বিভ্রান্তি অস্বস্তি অস্থিরতায় হয়রানিতে অভিযোগ তুলতে দেখা যায়।
লাইনে দাঁড়িয়ে থাকানারী ক্রেতা বলেন, এখন প্রায় ১টা বাজে। ভোর সকাল থেকে লাইনে ধরেছি। ১নম্বরে অনারা আছেন আমি ৪নম্বেরে।লাইনে হাজার মানুষের ভীড়। ভোগান্তি এটা মিছ মেনেজমেন্ট মিস কমিনিউকেশন হয়েছে।
লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একাধিক আরো প্রত্যক্ষদর্শীদের জানান,সকাল ছয়টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু ১০ টা বাজে দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো দুপুর ১টা বাজে গোস্ত দিবে বলছে। এতে দীর্ঘ ৬/৭ ঘন্টা তীব্র রোদে দাঁড়িয়ে থাকা খুবই কষ্টকর । দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করে গোস্ত পাওয়া না পাওয়ার চেয়ে রাস্তায় রোদে অপেক্ষা করা ভোগান্তি হয়রানি যা খুবই আপত্তিকর ও মেনে নেওয়ার মতো নয়।
কম দামে গোস্ত বিক্রি করতে গিয়ে গ্রাহকের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, “দুরন্ত বাজার” এর পরিচালক মোঃ সাহেদ চৌধুরী বলেন, আমরা দুরন্ত বাজারের পক্ষ থেকে এই পর্যন্ত পাঁচ বার কমদামে গোস্ত বিক্রি করেছি। সকাল থেকে এ পর্যন্ত আমরা দুরন্ত বাজার থেকে ৩৫শত মানুষের মতো গোস্ত নিতে এসেছে। এখন এ পর্যন্ত ১৫টি গরু ও ৭টি মহিষ অলরেডি জবাই হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে দুই হাজার মানুষকে আমরা গোস্ত দিতে সক্ষম হয়েছি।
আজকে মোট ২৫টি গরু ১০টি মহিষ জবাই হবে। রাত ৮টা পর্যন্ত আমাদের কার্যক্রম চলবে। যারা দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করছে সবাইকে আমরা গোস্ত দিতে পারবো। চট্টগ্রামের আমরাই সর্বপ্রথম সবচেয়ে ব্যাপকভাবে বেশি মানুষের মাঝে ৬৪০টাকা কেজি গরু গোস্ত বিক্রি করতেছি। এছাড়াও আমাদের সুপার শপে রয়েছে ভ্যাটমুক্ত পন্য ক্রয় ও অন্যান্য সকল পণ্যে ৫% ছাড়’সহ ক্রেতাদের সেবায় সুবিধায় নানান সুযোগ রয়েছে।
পরিচালক নূর মোহাম্মদ সাহেদ চৌধুরী আরো বলেন, কোন বিশৃঙ্খলা হলে শৃংখলার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি। কিছু ক্রেতা অভিযোগও করেছে। তাঁদের ২ কেজির জাগায় এক কেজি করে মাংস কম দিচ্ছি। আপনারা জানেন, এটা আমাদের লাভ মুনাফা ব্যবসার উদ্দেশ্য না। সাধারণ ক্রেতার উদ্দেশ্যে আমরা চালু করেছি। সাধারণ মানুষ যাতে কমদামে গোস্ত খেতে পারে।
সাধারণ মানুষ যাতে সুবিধা ভোগ করতে পারে। গোস্ত কিনে দামেও মানে স্বস্তি পেতে পারে।সাধারণ একটা মানুষের পরিবারে এক কেজির বেশি গোস্তর প্রয়োজন হয় না। ক্রেতাদের দীর্ঘলাইনও হয় না। একজন যদি ২ কেজি মাংস কিনে ফ্রিজে রেখে দেন। বাকি যারা লাইনে আছে ১০০ জন পাওয়ার পর ২০০ জন পাওয়ার পর বাকিরা পাবে না। না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যাবে। ঐগুলো আমাদের দেখতে খুব কষ্ট হবে। তাই আমাদের কর্তৃপক্ষ আমরা সরজমিনে বাস্তব পরিস্থিতিতে সমাধানে সবাই মিলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কেউ যেন খালি হাতে ফিরে না যায়। সবাই যেন গোস্ত পায়। সবাই যেন ১ কেজি গোস্ত নিয়ে ফিরে যাই। ফ্যামিলি নিয়ে একবেলা ভাত সুন্দরভাবে খেতে পারে।
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে পরিচালক সাহেব চৌধুরী বলেন, মিস ম্যানেজমেন্ট নাকি মিস কমিউনিকেশন হয়েছে কিনা? সকাল থেকে এসে ১টা বাজেও গোস্ত পারছে না। উত্তরে বলেন,আমরা কাউকে লাইনে দাঁড়াতে বলিনি ১০টার পর থেকে আমাদের প্রসেসিং শুরু হয়েছে। এখানে অনেক কাজ আছে কার্যক্রম আছে। গ্রাহকরা চাচ্ছে তাড়াতাড়ি করে দিয়ে দেন। গ্রাহকদেরকে যদি কাজ করতে/বাস্ততা দেখতে পাঠায় অথবা গ্রাহকদের আসলে বাস্তব ভিতরে হচ্ছে যখন দেখবে এটা কি হচ্ছে তখন তারা বুঝবে।
৫-১০ টা গরু সকাল থেকে জবাই করে এগুলোর কাজ করতে কতটুকু সময় লাগে? এই কাজগুলো করার জন্য ২০জন মানুষ যারা কাজ করতেছে এরা তো কম্পিউটার মেশিন না। এদেরও তো কাজ করতে সময় তো দিতে হবে। আমরা বারবার মাইকিং করেছি আপনারা লাইনে দাঁড়াবেন না দুপুর ১টা বাজে আসবেন। উনারা নিজ থেকে দাঁড়িয়ে আছে কেউ-ই যাচ্ছে না। ক্রেতারা মনে করছেন উনারা যদি চলে যান তাহলে সামনে এসে হয়তো আর একজন এসে দাঁড়িয়ে যাবেন। তাই সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন কেউই যাচ্ছেন না।
আমরা কাউকে লাইনে দাঁড়াতে বলিনি। দুপুর ১টার পর আমরা মাংস বিতরণ শুরু করবো।ক্রেতা আপনারা যদি লাইন ধরে গ্রহণ না করেন।তবে ৪ হাজার ৫ হাজার মানুষকে আমরা কিভাবে ডিস্ট্রিবিউশন করবো। উল্টো সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি প্রশ্ন করেন। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন এটা যে আপনার কাছে কষ্ট লেগেছে তা নয়, আমাদের কাছেও কষ্ট লেগেছে।
আমাদের চেষ্টার কমতি নেই ক্রেতা গ্রাহকসেবায় তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য।
অতি দ্রুত কার্যক্রম চালানোর জন্য আমরা কি করছি আমাদের দ্রুত কার্যক্রমের সক্রিয়তায় ভিতরের ফুটেজ চিত্রটা দেখেন। এখন বুঝতে পারবেন। রোজার দিন আমাদের স্টাফটা রোজা রেখে এভাবে কষ্ট করছে। কিন্তু গ্রাহকরা ধৈর্য ও সুন্দর ভাবে ব্যাপারটা গ্রহণ করে নেওয়া উচিত। মাংসের সুবিধা ক্রেতাদের জন্যই দেওয়া হয়েছে। মাংসগুলো আমি আমার বাসায় নিব না। প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা কর্মচারীদের বাসায় নিবে না। ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে এই সেবাটা।
আর লাইন ধরে মাংস গ্রহণ করতে যদি কারো কাছে বিরক্ত অপ্রয়োজন মনে হয়। তাদের জন্য যেদোকানগুলোতে ৮০০শো ১০০০ হাজার টাকা করে বিক্রি হচ্ছে সেখান থেকে তারা কিনে নিতে পারেন। কষ্ট করার দরকার কি? আমাদের তো চেষ্টার কমতি নেই। আমাদের দুরন্ত বাজার থেকে সেটার জন্য কোন মানা নেই। আমাদের ব্যানারে লেখা আছে শৃঙ্খলাবদ্ধ লাইনে এভাবে দাঁড়িয়ে মাংসের সংগ্রহ করতে হবে। আমরা আমাদের ব্যানারে স্পষ্টভাবে লিখে দিয়েছি। ক্রেতা গ্রাহকসেবা সবার জন্য সমান ও সার্বজনীন।
প্রসংঙ্গঃ
চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকায় দুরন্ত বাজার সুপার শপের যাত্রা শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট মুক্ত ও প্যণের দামের উপর ৫ শতাংশ ছাড় দেওয়ায় ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতা সাধারণ।
বুধবার ১৪ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় হালিশহর পোর্ট কানেক্টিং রোড় খান বাড়ির বিপরীতে দুরন্ত বাজার সুপার শপের ফিতা কেটে ও দোয়া মোনাজাত এর মাধ্যমে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুর মোহাম্মদ শাহেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন, মিরসরাই এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা লায়ন তাহের আহমেদ, বেওয়ারিশ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মানবিক শওকত
অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, খায়রুল উম্মা মাদ্রাসার সাধারণ সম্পাদক শেখ মাহবুব আলম, আব্দুল হান্নান মিরন, লায়ন মিজান উদ্দিন ভূঁইয়া, আরিফ মঈনুদ্দিন, সাবের হোসেন নিজামী।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, নুর নবী ভূঁইয়া, আরশাদুল রহমান, রাসেল মাহমুদ ও সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।