অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগম
জননেত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু কন্যা,মানবতার মা, বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ এ আমাদেরকে গনভবনে লাল গোলাপ সম্বোর্ধনা দিয়েছেন।নেত্রী তার পরিবারের দুঃখ শোক মিশ্রিত বেদনা, জনগণের প্রতি ভালোবাসার মুক্তাদানা ব্যাক্ত করেন বক্তব্যের শুরুতেই।তার বাবা জন্মেছিলো শোষিত বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য,মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্টা,বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য।কাঁদো কঁদো ভাষায় শেখ হাসিনা বলেছিলেন, খুব কাছের স্বঘোষিত ঘাতকরা ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট আমার ছোট তিন ভাই,দুই ভাইের বউ, বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা (আমার মা, বাবা) কে হত্যা করে ৩২ নম্বর বাড়িতে। কি অপরাধ করেছিলো তারা?।আমরা তন্ময় হয়ে নেত্রীর কন্ঠ নিশ্রিত মুখের বাণী শুনছিলাম।আশে পাশে তাকিয়ে দেখি, আমার মত অনেকের চোখ ভিজে ওঠেছে।।বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা, দুই এতিম বোন রিফিউজির মত বেঁচে ছিলেন পিতৃ মাতৃর পরিচয় চাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। হায় সেলুকাস জাতির পিতা , দেশের রাষ্ট্রপতির সন্তাদের কি অসন্মান ও অমর্যদা করলো জাতি।
জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সনে ১৭ মে দেশে ফিরে এসে দেশের রাজনীতির হাল ধরেন।তিনি অত্যান্ত দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেন – দেশের মানুষের সুখ শান্তির প্রয়োজনে বাবার মতো নিজেও জীবন দিতে প্রস্তুত। আমি মনে মনে বলছিলাম সত্যি তিনি মানবতার মা। দেশের মানুষ ধন্য ও স্বার্থক, বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা শেখ হাসিনাকে পেয়ে। বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ, শেখ হাসিনা মানে মানবতার মা,বাংলাদেশের উন্নয়নের কাড়িগর।
আমরা হলাম ১৫ শত ৫৩ জন বাংলাদেশের ভিবিন্ন প্রান্তে জেগে ওঠা নারী জাগরিত ফুটন্ত ফুল।আমরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন প্রাথী ছিলাম। আমিও কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে একজন প্রাথী ছিলাম। এই আসনে জনগনের ভোটে নির্বাচন হয় না।দলের প্রধান তাদের দলীয় বিজয়ী পদের শত করা হারে যাদের নির্বাচন দিবেন, তারাই এমপি হবেন ও জাতীয় সংসদের নীতি নির্ধারনীতে অংশ গ্রহন করবেন। । জাতীয় সংসদের ৩০০ টি আসনে জনগন ভোট দিতে পারলেও,এখানে ৫০ টি সংরক্ষিত নারী আসনে সে সুযোগ নেই। নানা তদবির, প্রার্থীদের ঘুরাঘুরি নেতাদের দ্ধারে দ্বারে। কেউ কোন সহায়তা করতে পারে বলে মনে হয়না। বাংলাদেশ ২০২৪ এ আওয়ামীলীগের ৪৮ টি আসন ছিলো।একটি নির্বাচনী বোর্ডের সহায়তায় শেখা হাসিনা একাই সকল মনোনয়ন দিয়েছেন বলে আমার ধারনা। সেলুট জানাই জন নেত্রীকে সুচারু ভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করায়। তবে এই পদে জনগনের ভোটে সরাসরি নির্বাচন দিতে বিপত্তিটা কোথায়?
আমি ছিলাম অসুস্থ,সরকারের বিধি বিধান মেনে গনভবনের দক্ষিন গেইট ক্রস করে লালগ্লোলাপ কার্পেট পেড়িয়ে, পেন্ডেলের ভেতরে প্রায় পেছনের দিকের চেয়ারে গিয়ে বসি, শেখ হাসিনার মুখ দেখতে পারছিলাম না । ঢোকার পথে একটি খাবারের পুটলা হাতে ধরিয়ে দেয় কতৃপক্ষ।সে পুটলায় ছিলো — কয়েকটা বড়ই, ম্যাংগো জুস, একটা রসগোল্লা,ম্যাংগো বার, পানি,সেভেনআপ ও এক বাটি বিরিআনি। পুটলাটি পায়ের কাছে রেখে, প্রোগ্রাম উপভোগ করার চেস্টা করি।আমার প্রত্যাশা ছিলো পুটলা ঝুলিয়ে না দিয়ে চেয়ার টেবিলে বসিয়ে খাওয়াবে।
আমার আরো ধারনা ছিলো কয়েকটা নিবার্চনী বোর্ড গঠন করে, মনোনয়ন প্রাথীদের মেধা যাচাই করার জন্য আমাদের সবার সাক্ষাৎকার নিবেন।কিন্তু ভাষণে নেত্রী তার অপরাগতা প্রকাশ করেন।এতো প্রাথীর সাক্ষাৎকার নেয়া সম্ভব নয়। আমি তো জানি জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ডায়রীতে অপারগতা বলে কোন শব্দ নাই।তিনি বলেন আমি তো সবাইকে চিনি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কি ভাবে? আমার সাথে তো কোনদিন দেখা হয় নাই।দুরদুরান্ত থেকে আসা তাদেরও দেখা হয় না। যাক সে প্রসঙ্গ।
সাক্ষাতকার হবে ভেবে নারীরা পার্লার থেকে সেজেগুজে নতুন শাড়ী পড়ে অনেকেই নায়িকার সাজে সেজে আছঁল উড়াতে উড়াতে এসেছিল। তাদের রুপের ঝলসানির সব স্বপ্নই ভেস্তে গেলো।
এই সভার কোন সভাপতি বা একাধিক বক্তা ছিলো না।শুরু করেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর সহকারী ড. গোলাপ ভাই, প্রথমেই সভাটিকে ওয়ার্ম আপ করার জন্য কিছু হাস্য রসাত্বক কথা বলেন। সব প্রাথীদের অবহিত করলেন, আজ ১৪ ফ্রেরুয়ারী, বিশ্ব ভেলেডাইন ডে উদযাপন করা হচ্ছে।আমরাও প্রধানমন্ত্রীকে গোলাপ ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়ে দিবসটি উদযাপন করবো। তিনি যখন অল্প কিছু ক্ষণের মধ্যে ষ্টেইজে ঢোকবেন, আপনারা ওঠে দাঁড়িয়ে জয়বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু, ভেলেডাইনদের গোলাপ ফুলের শুভেচ্ছা জানাবেন। তিনি স্লোগানগুলোর রিহারসাল করালেন।
প্রধানমন্তী মিষ্টি হাসি ঠোটে তুলে, ধীর পায়ে হেঁটে এসে মাইকের সামনে দাঁড়ালেন।তিনি জাতির পিতাকে, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের , জাতীয় চার নেতা, পচাত্তরে নিহতদে শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য শুবূ করেন।তিনি কথা প্রসঙ্গে বলেন — স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের গ্রেফার করে নিয়ে গিয়েছিলো।রাত্রি যাপনের জন্য একটি মাত্র কম্বল দিয়েছিলো।দুই দিন তাদের তেমন খাবার পানি দেয় নাই।আমরা এও জানি — বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিলো ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর।কিন্তু বঙ্গবন্ধুর পরিবার মুক্তি পেয়েছিলো ১৭ ডিসেম্বর। মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথে বঙ্গমাতা দৌড়ে ছাদে ওঠে পাকিস্তানী পতাকা সরিয়ে বাংলাদেশের পাতাকা উত্তোলন করেন।হায় মা, তুমি সেই পাতাকার স্বাধ ভুগ করতে প।রছিলে কি?
প্রধান মন্ত্রী বললেন – আজ আমার গণ ভবন ফুলে ফুলে ভরে গেছে। আমার বাবা জাতীয় সংসদে ১৯৭২ সালে ১০টি সংরক্ষিত আসনের সৃষ্টি করে নারী জাতিকে সামনে আসার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।আজ তা বেড়ে ৫০ এ এসে দাঁড়িয়েছে।।আমি ক্ষমতায় আসার পর কর্মের প্রায় প্রত্যেক স্তরে
নারীর জন্য জায়গা করে দিয়েছি।প্রথমেই এসপি এবং ডিসি পদে নারী নিয়োগ দিতে গিয়ে বাঁধার সন্মুখীন হয়েছিলাম । তারপরও দিয়েছি। মুন্সিগঞ্জে নিযুক্ত এস পি তো বেশ সাফল্যজনক অবদান রেখেছিলো। প্রশাসনে সকল স্তরে, বিমান বাহিনী, সৈন্যবাহিনী সহ তৃণমুলেও মহিলাদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করে দিয়েছি। শুধু বিচার পতি পদে যোগ্য মহিলা পাচ্ছি না। তিনি আরো বলেন মেয়েরাই সর্ব প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছিলো।হযরত খাদিজার প্রচুর ধন সম্পদ ছিলো।তা দিয়ে নবী করিম (সাঃ)কে ধর্ম প্রচারে সহায়তা করছিলেন।
শেখ হাসিনা যতদিন ক্ষমতায় থাকবেন ততদিন নারী সমাজের ভয় নাই। বরং উত্তোরোত্তর নারীর পায়ের নীচের মাটি শক্ত হবে। এ কারণেই অনুপ্রেরণার পাথর ঘষে লিখেছি “নারী কথা কও,” নারী তুমি পারবেই” নামে দুইটি গ্রন্থ।নারীরা পারে না, পারবে না এর দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়ার জন্য সর্বদা চোখ কান রাখি খোলা।
২০০৮, ২০১৪,২০১৮,২০২৪ চার বার সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন চেয়ে, বড় একটা রসগোল্লা নিয়ে ঘরে ফিরেছি। অথচ নৌকা প্রতীক নিয়ে ফেল করেছে, পূর্বে মন্ত্রী ছিলেন, তাদেরকেও সংরক্ষিত আসনে জায়গা করে দিয়েছে, আমাদেরকে বঞ্চিত করে,তা ঠিক হয়নি।
যে যা বলে বলুক, আমি যে একদম নিবোর্ধ তা বলবো না। ২২ বছর চেষ্টা করে অজ পাড়াগায়ে বিরুপ পরিবেশের সাথে লড়াই করে অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে অনার্স পর্যায়ের একটি কলেজ করেছি। প্রায় ৬২ জন শিক্ষক / কমর্চারি নিয়োগ দিয়েছি, এক কাপ চা ও খাইনি।আমার ইচ্ছা ছিলো এমপি হতে পারলে সততার স্বচ্চ কৃষ্টাল জননেত্রীর হাতে তুলে দিতে।সব ইচ্ছা তো আর পূরণ হয় না।ব্যর্থ হলেও মুজিব আদর্শ থেকে কক্ষচূত্য হবো না।জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। লাল গোলাপ সুভেচ্ছা নিয়ে ঘরে ফিরে গেলাম।
লেখকঃ উপদেষ্ঠমন্ডলির সদস্য,বাংলাদেশ কৃষক লীগ,কেন্দ্রীয় কমিটি। ০১৭১৭৭৬২৭৪৫