সঞ্জিত চন্দ্র শীল
,হোসেনপুর(কিশোরগঞ্জ): প্রতিনিধি:
কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য,আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ(বুধবার)। গত ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এ উপলক্ষে মরহুমের নির্বাচনী এলাকা হোসেনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিস সহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে মিলাদ,দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগ এর সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ জহিরুল ইসলাম নুরু, সাধারণ সম্পাদক এম এ হালিম সহ দলীয় নেতা কর্মীরা। এছাড়া সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে স্থানীয় মসজিদে কোরআনখানি,দোয়া মাহফিল,তবারক বিতরণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বলে জানান ওই স্মৃতি সংসদের সভাপতি প্রভাষক মোঃ হাকিম তানিম ও স্থানীয় হাসপাতাল জামে মসজিদের খতিব হযরত মাওলানা প্রভাষক মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ মকসুদ। পাশাপাশি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দলীয় এবং সহযোগী সংগঠন,বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন স্মরণসভা,মরহুমের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নানা কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানান সৈয়দ আশরাফের ছোট বোন কিশোরগঞ্জ-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নৌকার প্রার্থী ডা: সৈয়দা জাকিয়া নুর লিপির ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান।
উল্লেখ্য,১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহে সৈয়দ আশরাফ জন্ম গ্রহণ করেন। তৎকালীন ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের জৈষ্ঠ্য সন্তান সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পর পর দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।সেসময় বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সহপ্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও বিগত ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে সৈয়দ আশরাফ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর বিগত ২০০৯ সালে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১২ সালের সম্মেলনে তিনি টানা দ্বিতীয়বার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এরপর ২০১৬ সালের সম্মেলনে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এ ছাড়া বহুল আলোচিত ওয়ান-ইলেভেন ও হেফাজত ইসলামের শাপলা চত্বরের ঘটনার মতো সংকটকালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সৈয়দ আশরাফ দলের মধ্যে সুখ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হন।কেন্দ্রীয় কারাগারে তার পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের পর পরই গত ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর সৈয়দ আশরাফ যুক্তরাজ্য চলে যান। দীর্ঘ প্রবাস জীবনে তিনি যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পরে ১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে এসে কিশোরগঞ্জ-৩ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় তিনি এমপি নির্বাচিত হন এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই জনপ্রশাসনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন অবস্থায় অসুস্থ হয়ে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। তবে শপথ নেওয়ার আগেই তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। সৈয়দ আশরাফ একমাত্র কন্যা সন্তান রেখে গেছেন। তার স্ত্রী শিলা ইসলাম গত ২০১৭ সালের অক্টোবরে মৃত্যু বরণ করেন । দৃশ্যত জননেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রয়াত হলেও এলাকার সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাঝে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে আজো তিনি বেঁচে আছেন বলে জানান তার ভক্তরা।