মোহাম্মদ মাসুদ বিশেষ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম বিশ্বর সবচেয়ে বড় জুলুস। জশনে জুলুস আজ অর্থাৎ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের আয়োজনে গাউসিয়া কমিটির সার্বিক সহযোগিতায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ঐতিহাসিক ৫১ তম জশনে জুলুস নানা আয়োজনের জমকালো অনুষ্ঠানিকতায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এ জুলুসে নেতৃত্ব দেবেন দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোটের সাজ্জাদানশীন আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ। প্রধান অতিথি থাকবেন আল্লামা পীর সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ ও বিশেষ অতিথি সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ।
জশনে জুলুস র্যালী চলাচলের সড়ক।
সকাল ৮টায় নগরীর ষোলশহর আলমগীর খানকাহ-এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে শুরু হবে। এরপর বিবিরহাট, মুরাদপুর, মির্জারপুল, কাতালগঞ্জ, অলিখাঁ মসজিদ, চট্টগ্রাম কলেজ, গণি বেকারী (ডানে মোড়), খাস্তগীর স্কুল (ডানে মোড়), আসকারদীঘি, কাজির দেউড়ি (ডানে মোড়), আলমাস (বামে মোড়), ওয়াসা (ডানে মোড়), জিইসি,২নম্বর গেইট হয়ে পুনরায় মুরাদপুর (বামে মোড়), বিবিরহাট প্রদক্ষিণ শেষে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা সংলগ্ন জুলুস ময়দানে শেষ হবে। সেখানে মাহফিল নামাজে যোহর শেষে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। শহরের ১৭ টি পয়েন্ট এবং দশটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় পদক্ষিন করবে।
চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ এ জুলুসের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনে মহানগরীকে সাজানো হয়েছে বর্ণাঢ্য সাজে। নগরীর মোড়ে মোড়ে কালেমাখচিত বর্ণিল পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন, তোড়ন নির্মাণ করা হয়েছে। আলোকসজ্জা করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ মোড়, সড়ক ও সড়কদ্বীপে। জশনে জুলুসের রুটগুলোকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। জুলুসের সার্বিক শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবেন আনজুমানের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকরা।
আয়োজকরা আশা করছেন, প্রতিবারের মত এবারো এ বর্ণাঢ্য র্যালিতে অর্ধ কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষের সমাগম ঘটবে।
আনজুমান ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মহসিন ও সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন পবিত্র মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আয়োজিত জশনে জুলুস সর্বাত্মক সফল করতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। চট্টগ্রামে প্রতি বছরের মতো এবারও পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে জশনে জুলুস আজ বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে। এবার ৫১ তম জুলুসে নেতৃত্ব দেবেন দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরিফের হুজুর কেবলা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ। উপস্থিত থাকবেন সাজ্জাদানশিন পীর আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ (মজিআ) ও শাহজাদা আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ কাসেম শাহ।
প্রতি বছর জুলুসে অর্ধকোটি মানুষের সমাগম হয়ে থাকে। এটি এখন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। মানুষ চায় জুলুস বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্থান পাবে। গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ডে স্থান পেলে চট্টগ্রামকেও সম্মানিত করবে। গেল বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে সংবাদ সম্মেলনে জুলুস আয়োজনে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। এবার জুলুস জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকাহ-এ কাদেরিয়া সৈয়দিয়া তৈয়বিয়া থেকে সকাল ৮টায় শুরু হবে।
এদিকে দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরীফের সাজ্জাদানশীন আওলাদে রাসূল হযরতুল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ (মা.জি.আ.), আল্লামা পীর সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ (মা.জি.আ.) ও সাহেবজাদা সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ্ (মা.জি.আ.) মঙ্গলবার চট্টগ্রাম এসে পৌঁছেছেন। আনজুমান এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে ঐতিহাসিক জশ্নে জুলুস নেতৃত্ব দেবেন তিনি। মঙ্গলবার ঢাকা থেকে বিকালে বাংলাদেশ বিমানযোগে শাহ্ আমানত (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছেন তিনি। তার সফর সঙ্গী ছিলেন পিএইচপি ফ্যামেলির চেয়ারম্যান সুফি মুহাম্মদ মিজানুর রহমান ও আনজুমান ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মহসিন’সহ প্রমুখ। বিমানবন্দরে ও চট্টগ্রাম ষোলশহরস্থ আলমগীর খানকাহ্-এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়ায় ফুলেল শুভেচ্ছাসহ লাল গালিচা সংবর্ধনা দেন আনজুমান ট্রাস্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ কিউ আই চৌধুরী, সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, এডিশনাল জেনারেল সেক্রেটারী মুহাম্মদ সামশুদ্দিন, জয়েন্ট জেনারেল সেক্রেটারী মুহাম্মদ সিরাজুল হক, এসিসটেন্ট জেনারেল সেক্রেটারী এস এম গিয়াস উদ্দিন শাকের, ফাইন্যান্স সেক্রেটারী মুহাম্মদ এনামুল হক বাচ্চু প্রমুখ।
এদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে ঈদ এ মিলাদুন্নবীর (সা.) জশনে জুলুস (আনন্দ র্যালি) উপলক্ষে সড়কে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ উপলক্ষে সিএমপি ট্রাফিক বিভাগ একটি রুট ম্যাপ দিয়েছে। সকাল আটটা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত জশনে জুলুসের রুটসমূহ হলো–নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন জামেয়া আহম্মদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা–বিবিরহাট (বামে মোড়)- মুরাদপুর– মির্জারপুল–পাঁচলাইশ থানার মোড় (বামে মোড়)-কাতালগঞ্জ–অলিখাঁ মোড়– কেয়ারী মোড়, চট্টগ্রাম কলেজ– গণি বেকারি (ডানে মোড়)-খাস্তগীর স্কুল (ডানে মোড়)-আসকার দিঘী– কাজির দেউড়ি (ডানে মোড়)-আলমাস (বামে মোড়)-ওয়াসা (ডানে মোড়)- জিইসি মোড়– ২নং গেট মুরাদপুর (বামে মোড়)-বিবিরহাট জামেয়া আহম্মদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গন।
ডাইভারশন পয়েন্ট গুলো হচ্ছে জশনে জুলুস চলাকালে নগরীর বিবিরহাট, মুরাদপুর, মির্জারপুল, পাঁচলাইশ থানার মোড়, মেডিকেল হতে অলিখাঁ মসজিদের মুখ, তেলিপট্টি মোড়, চকবাজার থানা রোডের মুখ, সিজিএস স্কুল মোড়, প্যারেড কর্নার, গণি বেকারী মোড়, জামালখান মোড়, চেরাগী পাহাড় মোড়, সার্সন রোডের মুখ, নেভাল এভিনিউ, স্টেডিয়াম গোল চত্বর, আলমাস সিনেমা মোড়, চট্টেশ্বরী মোড়, এসএইচ খান ফিলিং স্টেশন (ওয়াসা), জিইসি মোড়, ষোলশহর ২নং গেট, মুরাদপুর রোডের মুখে রোড ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ডাইভারশন করা হবে।
উল্লেখ্য: ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে চট্টগ্রামে আয়োজিত জশনে জুলুসকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জুলুস হিসেবে রেকর্ড বইয়ে নাম তুলতে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছে জুলুস আয়োজনকারী সংস্থা আনজুমান-এর রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট।
গত ৯অক্টোবর-২৩ চট্টগ্রামে জশনে জুলুস পর্যবেক্ষণ করবে গিনেজ বুক অফ ওয়াল্ড রেকর্ডের ম্যানেজমেন্ট টিম, এমনটাই জানিয়েছেন ট্রাস্টের মহাসচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্মদিন তথা ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে পৃথিবীতে যত জুলুস আয়োজিত হয় তারমধ্যে চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে আয়োজিত হওয়া জুলুসটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় জুলুস।
১৯৭৪ সালে চট্টগ্রামে বলুয়ারদিঘী খানকা-এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম জুলসটি বের করে আঞ্জুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট।
১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত এ জুলুসে নেতৃত্ব দেন পাকিস্তানের ছিরিকোট দরবার শরীফের পীর সৈয়দ মোহাম্মদ তৈয়ব শাহ (রা.)।
সৈয়দ মোহাম্মদ তৈয়ব শাহের পর ১৯৮৬ সালের পর থেকে তার সন্তান সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ এ জুলুসে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।
জশনে জুলুস শুরু হয় ১৯৭৪ সালে, দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরিফের তৈয়্যব শাহের নির্দেশ ও রূপরেখা অনুসরণে।
১৯৭৪ সালের ১২ রবিউল আউয়াল (১৩৯৪ হিজরি) সকালে আনজুমান ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নূর মুহাম্মদ আল কাদেরীর নেতৃত্বে কোরবানীগঞ্জের বলুয়ারদীঘি পাড় খানকাহ্-এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া হতে শুরু হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে এসে শেষ হয়েছিল জুলুসটি।
১৯৭৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত এই জুলুসের নেতৃত্বে ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা তৈয়্যব শাহ। ১৯৮৭ থেকে অন্তত ৩২ বারের অধিক জুলুসের নেতৃত্ব দিয়েছেন তারই পুত্র সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ। চট্টগ্রাম থেকে শুরু হলেও বর্তমানে এটি দেশের বিভিন্ন জেলায় পালিত হয়।
ইসলামের শেষ নবি মুহাম্মাদের জন্মদিন তথা ঈদে মিলাদুন্নবীকে কেন্দ্র করে আনন্দ মিছিল বা শোভাযাত্রার মাধ্যমে উদযাপনই জশনে জুলুস নামে পরিচিত৷১৯৭৪ সালে দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরিফের তৈয়্যব শাহের নির্দেশ ও রূপরেখা অনুসরণে বাংলাদেশে জশনে জুলুস শুরু হয়। পরবর্তীতে সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ’র নেতৃত্বে জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।
সম্প্রতি জশনে জুলুসের আয়োজক সংস্থা আনজুমান ট্রাস্ট এটিকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় জুলুস’ দাবি করে স্বীকৃতি পেতে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে আবেদন করেছে।
জশনে জুলুস বা জশনে জুলুছ এর জশন “جشن” শব্দটি (فارسی, ফার্সি, fɒːɾˈsiː) ভাষার যার আভিধানিক অর্থ খুশি/উৎসব বা আনন্দ উদযাপন; জুলুস “جلوس” শব্দটি (العَرَبِيَّة al ʕaraˈbijːaআরবি জলসা শব্দের বহুবচন যার অর্থ বসা, উপবেশন, পদযাত্রা, মিছিল ইত্যাদি। সুতরাং জশনে জুলুসের অর্থ আনন্দ মিছিল বা আনন্দ শোভাযাত্রা।