সাইফুল্লাহ সাইফ :
দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার পর এই অবসর যাপন ও বিনোদন এক অনাবিল প্রশান্তি ও আনন্দ বয়ে আনে আমাদের জীবনে। আত্মীয়তা, ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্যরে বিভায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে কয়েকটি দিন। আমাদের অবসাদক্লিষ্ট জীবনের মরা গাঙে প্রাণশক্তির জোয়ার আসে। নতুন উদ্যম ও কর্মপ্রেরণা নিয়ে আমরা আবার কাজে ফিরতে পারি। ঈদ হলো পাপ মুক্তির সফলতা ও বিজয়ের আনন্দ! এ বিজয় শয়তানের ওপর ইনসানের। মনের সব কালিমা দূর করে, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে, মান অভিমান বির্সজন দিয়ে সবাই হাতে হাতে মেলানো, বুকে বুক মেলানো, গলায় গলা মিলানো, সবার দেহ-মন এক হওয়ার আনন্দ হলো ঈদের আনন্দ। নিজের মনের হিংসা ঘৃণা, লোভ, অহঙ্কার, অহমিকা, আত্মম্ভরী, আত্মশ্লাঘা, রাগ-ক্রোধ, বিদ্বেষ যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে মুক্ত করার আনন্দ। সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ঐক্য, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির আনন্দ। ঈদুল ফিতরের জন্য ২৯ রমজান ঈদের চাঁদ দেখা সুন্নত; এদিন চাঁদ উদিত না হলে ৩০ রমজানও চাঁদ উদিত না হলে ৩০ রমজান ও চাঁদ দেখা সুন্নত; যদিও এদিন চাঁদ দেখা না গেলে পরদিন ১ শাওয়াল তথা ঈদুল ফিতর হবে। ঈদের চাঁদ তথা নতুন চাঁদ দেখে দোয়া পড়া সুন্নত। ঈদের রাত হলো ইবাদতের বিশেষ রাতগুলোর অন্যতম। ঈদের রাতে বেশি বেশি নফল ইবাদত। সারা বিশ্বের মুসলমানের সার্বজনীন আনন্দ-উৎসব ঈদুল ফিতর। বছরজুড়ে নানা প্রতিকূলতা, দুঃখ-বেদনা সব ভুলে ঈদের দিন মানুষ সবার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মিলিত হয়। ঈদগাহে কোলাকুলি সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধনে সবাইকে নতুন করে আবদ্ধ করে। ঈদ এমন এক নির্মল আনন্দের আয়োজন, যেখানে মানুষ আত্মশুদ্ধির আনন্দে পরস্পরের মেলবন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং আনন্দ সমভাগাভাগি করে।
মাহে রমজানের এক মাসের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নিজের অতীত জীবনের পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হওয়ার পবিত্র অনুভূতি ধারণ করে পরিপূর্ণতা লাভ করে ঈদের খুশি। আর আনন্দ ও পুণ্যের অনুভূতিই জগতে এমন এক দুর্লভ জিনিস, ভাগাভাগি করলে তা ক্রমেই বৃদ্ধি পায়। ঈদুল ফিতর বা রোজা ভাঙার আনন্দ-উৎসব এমন এক পরিচ্ছন্ন আনন্দ অনুভূতি জাগ্রত করে, যা মানবিক মূল্যবোধ সমুন্নত করে এবং আল্লøাহর সন্তুষ্টিও নৈকট্য লাভের পথপরিক্রমায় চলতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উদ্বুদ্ধ করে। প্রকৃত পক্ষে ঈদ দরিদ্র, সুখী-অসুখী, আবালবৃদ্ধবনিতা সব মানুষের জন্য কোনো না কোনোভাবে নিয়ে আসে নির্মল আনন্দের আয়োজন। ঈদ ধর্মীয় বিধিবিধানের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস নেয় এবং পরস্পরের জন্য ত্যাগ স্বীকারের শিক্ষা দেয়।
মহান আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে আমাদের প্রার্থনা হলো- জগতের সব মানুষের সুখ, শান্তি সমৃদ্ধি। পৃথিবী সর্বপ্রকারের হিংসা বিদ্বেষ ও হানাহানি মুক্ত হোক! সন্ত্রাসের বিভীষিকা দূর হোক! আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে বন্ধন দৃঢ়তর হোক! আগামী দিনগুলো সুন্দর ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হোক হাসিখুশি ও ইদের আনন্দে ভরে উঠুক প্রতিটি প্রাণ। ব্যক্তি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিবেশ পরিব্যাপ্তি লাভ করুক। এটাই হোক ঈদ উৎসবের ঐকান্তিক কামনা। তাই আসুন, ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিই সবার প্রাণে-মনে। বুকে মিলিয়ে আসুন সবাই সবার হয়ে যাই। সবাইকে ঈদুর ফিতরের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন- ‘ঈদ মোবারক !