সোহেল রানা রাজশাহী বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান
সম্প্রতি র্যাব হেফাজতে ভূমি অফিসের কর্মী জেসমিন সুলতানার নিহতের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও সাংবাদিক হয়রানী বন্ধের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে রাজশাহীর বিশিষ্ঠজনরা।
শনিবার দুপুর ১২ টার দিকে রাজশাহী সাংবাদকি ইউনিয়নের হল রুমে রাজশাহীর সচেতন নগরিকদের পক্ষে হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি গবেষক মাহবুব সিদ্দিক।
সংবাদ সম্মেলনে গবেষক মাহবুব সিদ্দিক লিখিত বক্তব্য সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরে বলেন,
রাজশাহীর বিশিষ্টজনদের সম্প্রতি র্যাবের হেফাজতে নিহত সুলতানা জেসমিন এর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন এবং ঘটনার সরেজমিন অনুসন্ধানের জন্য রাজশাহীর বিশিষ্ট নাগরিকদের একটি দল গতকাল ৩১ মার্চ নওগাঁ সফর করেন।
সুলতানা জেসমিন কে জোরপূর্বক উঠিয়ে নেয়ার ঘটনাস্থল নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় এলাকা পরিদর্শন করেন এবং সেখানে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলেন। এসময় নিহতের পরিবারের সদস্য, নওগাঁর কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি, সাংবাদিক এবং নওগাঁর বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত যুব নেতৃবৃন্দ ছিলেন।
পরিদর্শন ও সাক্ষাৎকার শেষে সফরকারী রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ এই মর্মে মতামত ব্যক্ত করেন যে, সুলতানা জেসমিন এর সাথে যে ঘটনা ঘটেছে তা সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায় না। একজন নাগরিক যদি অপরাধের সাথেও সম্পৃক্ত হন তার বিচার পাবার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। সেখানে কোন রকম আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়াই এককান নাগরিককে সরকারী একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মৌখিক কথায় এবং তার উপস্থিতিতে উঠিয়ে নিয়ে এমন। পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল যার পরিণতিতে তিনি মৃত্যু স্বরণ করেন, এটি নিঃসন্দেহে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।
জেসমিন এর ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হয়েছে এদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মানবাধিকার রক্ষায় দু:খজনকভাবেউদাসীন। রাষ্ট্রযন্ত্র মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েও তা রক্ষায় বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।
নিহত জেসমিনের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে অনুসন্ধানকারী দলের ধারনা জন্মেছে যে, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে। তারা ভীত সন্ত্রস্ত এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এ বিশিষ্টজনদের মতে, জেসমিনের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার না করে সরাসরি তুলে নিয়ে যাওয়া অপহরণের শামিল। পরে সরকারী বাহিনীর হেফাজতে তাঁর মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত রহস্যময়। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমেই এর পেছনের মূল কারণ উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে।
যুগ্ম সচিব পদ মর্যাদার একজন ব্যক্তির এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার যে বর্ণনা ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তার যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার। কেননা নিহত জেসমিনও প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী ছিলেন।
সুতরাং, জেসমিন অপরাধ করে থাকলে খুব সহজেই বিভাগীয় পদক্ষেপ নেয়া যেত। তা না করে র্যাব কে নিয়ম বহিরভূত ভাবে ব্যবহার করে একজন পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা যে ভূমিকা নিয়েছেন বলে প্রকাশিত হয়েছে তা আইনের ব্যত্যয় এবং অত্যন্ত দুঃখজনক।
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহীর বিশিষ্টজনরা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে জেসমিনের নিহত হবার ঘটনার যথাযথ কারণ অনুসন্ধান এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট কলামিস্ট ও রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য প্রফেসর ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ, রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলন, রাজশাহীর আহ্বায়ক এডভোকেট হাসনাত বেগ প্রমুখ ।
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা প্রত্যাহার এবং সকল বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়।