মোহাম্মদ মাসুদ বিশেষ প্রতিনিধি
সিএমপি কাউন্টার টেরারিজম বিভাগের বিশেষ অভিযানে দেশের ৫ জেলা হতে জন্ম নিবন্ধন সনদ জালিয়াতি সংঘবদ্ধ চক্রের ৩জন হ্যাকারসহ ৫(পাঁচ) জন সদস্য গ্রেফতার।
১৮ ফেব্রুয়ারি হতে ১৬ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলা চট্টগ্রাম,নড়াইল,ঢাকা,গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জে টানা বিশেষ অভিযানে জন্ম নিবন্ধন সনদ জালিয়াতি চক্রের ৩(তিন)জন হ্যাকারসহ মোট ৫(পাঁচ),কে আটক করেছে। আটককৃত অভিযুক্ত ৫ জন হলেন ১। মোঃ সাগর আহমেদ জোভান (২৩),২। শেখ সেজান (২৩) ৩। মেহেদী হাসান (২৩)৪। মোঃ শাকিল হোসেন (২৩),৫। মোঃ মাসুদ রানা (২৭),
সিএমপি সূত্রে জানা যায়,এ সময় তাদের নিকট হতে এই জালিয়াতি কর্মকান্ডে ব্যবহৃত ২টি সিপিইউ,২টি মনিটর,৩টি ল্যাপটপ,১টি ট্যাব,১টি প্রিন্টার এবং ৬টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। জালিয়াতি চক্রের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে এ পর্যন্ত তারা জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম,ঢাকা উত্তর,ঢাকা দক্ষিণ,কুমিল্লা,সিলেট ও ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন সহ, চট্টগ্রাম,ফরিদপুর,বাগেরহাট,নরসিংদী জেলায় অসংখ্য জন্ম নিবন্ধন সনদ সৃজন করেছে। গত ০৮/০১/২০২৩খ্রি: তারিখে ৩৮নং ওয়ার্ড(বন্দর), ০৯/০১/২০২৩খ্রি: ১৩নং ওয়ার্ড(পাহাড়তলী), এবং ২১/০১/২০২৩খ্রি: তারিখে ৪০নং ওয়ার্ড(পতেঙ্গা), ২৩/০১/২০২৩খ্রি: তারিখে ১৪নং ওয়ার্ড(খুলশী), ১১/০১/২০২৩খ্রি: হতে ২২/০১/২০২৩খ্রি: তারিখে ১১নং ওয়ার্র্ড(দক্ষিণ কাট্টলী) কাউন্সিলর অফিসের সার্ভারে যথাক্রমে ৪০, ১০, ৮৪, ২৩৯ ও ৪০৯ টি ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এ সংক্রান্তে পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট থানাসমূহে সাধারণ ডায়েরি করলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ মাননীয় পুলিশ কমিশনার মহোদয়ের নির্দেশে ছায়া অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানকালে জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতি কার্যক্রমে জড়িত একাধিক চক্রের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ইতিপূর্বে এরূপ একটি চক্রের ০৬ জন সদস্যকে কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ,সিএমপি চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ১। মোঃ জহির আলম (১৬), ২। মোস্তাকিম (২২) দ্বয়ের বিজ্ঞ আদালতে প্রদত্ত ফৌ:কা:বি: ১৬৪ ধারা মোতাবেক দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৬ফেব্রুয়ারি সিএমপির পাঁচলাইশ থানাধীন মুরাদপুর এলকা হইতে মোঃ সাগর আহমেদ জোভান (২৩)কে আটক করা হয়। পরবর্তীতে তার প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে নড়াইল জেলার লোহগড়া থানা হতে হ্যাকার শেখ সেজান (২৩) কে আটক করা হয় এবং তার দেয়া তথ্যমতে তার মালিকানাধীন “আদনান কম্পিউটার এন্ড স্টুডিও” দোকান হতে জালিয়াতি কর্মকান্ডে ব্যবহৃত আলামত জব্দ করা হয়। তার প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডিএমপি, ঢাকার কলাবাগান থানা এলাকা হতে মেহেদী হাসান (২৩) কে জাল জন্ম নিবন্ধন সনদ,ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জন্ম নিবন্ধন অফিসের অফিসিয়াল সীল, অফিসের প্যাড সহ আটক করা হয়। মোঃ সাগর আহমেদ জোভান (২৩) ও শেখ সেজান (২৩) দের প্রদত্ত তথ্যেও ভিত্তিতে সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ থানা এলাকা হতে হ্যাকার মোঃ শাকিল হোসেন (২৩) দের আটক করা হয়।
তাদের নিকট হতে জন্মনিবন্ধন সনদ জালিয়াতি কর্মকান্ডে ব্যবহৃত ডিজিটাল আলামত জব্দ করা হয়। মোঃ শাকিল হোসেন (২৩) এর প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে গাজীপুর মহানগরের বাসন থানা এলাকা হতে অপর হ্যাকার মোঃ মাসুদ রানা (২৭) কে আটক করা হয় এবং নিকট হতে জন্মনিবন্ধন সনদ জালিয়াতি কর্মকান্ডে ব্যবহৃত ডিজিটাল আলামত জব্দ করা হয়।
জালিয়াতি চক্রের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, দীর্ঘদিন যাবৎ তারাসহ আরো একাধিক গ্রুপ দেশব্যাপী এ জালিয়াতি কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। জালিয়াতি চক্রের সদস্যদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, এ পর্যন্ত তারা কয়েক হাজার ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ সৃজন ও বিতরণ করেছে। তাদের মতো এরূপ আরো একাধিক চক্র এ অবৈধ কার্যক্রমে সারাদেশ ব্যাপী জড়িত আছে। প্রতিটি ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরী করতে তারা ১২০০-১৫০০ টাকা গ্রহণ করে। পরবর্তীতে উক্ত ব্যক্তিদের নিকট হইতে তথ্য সংগ্রহ করে তারা সরকার নির্ধারিত ওয়েব সাইটে ঐ ব্যক্তির ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে প্রাথমিক নিবন্ধন করে এবং উক্ত তথ্যদি একজন তথাকথিত হ্যাকারকে প্রদান করে। উক্ত হ্যাকাররা অবৈধভাবে জন্মনিবন্ধন সার্ভার এ প্রবেশ করে একটি জাল জন্ম সনদ প্রস্তুত করে পুনরায় চক্রের এ সদস্যদের প্রেরণ করে। তারা হ্যাকিয়ের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন সার্ভারে প্রবেশ করে সার্ভারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরী করে তাদের অন্যান্য সদস্যেদের কাছে সরবরাহ করে থাকে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত অভিযুক্তদের নিকট হতে জব্দকৃত ডিভাইসসমূহ প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করে এ তথ্যসমূহের সত্যতা ও এ সংক্রান্তে অসংখ্য ডিজিটাল আলামত পাওয়া গিয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরের খুলশী থানায় ২টি, হালিশহর থানায় ০১ টি এবং বন্দর থানায় ১টি করে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়। চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতার করতে অভিযান ও আইনি কার্যক্রম চলমান আছে।