সোহেল রানা রাজশাহী ব্যুরো
প্রায় ৪০ বছর ধfরে একটি গ্রামের শতভাগ কৃষক সবজি চাষ করে আসছে, যার মধ্যে শুধু করলা চাষ করছেন ৯০ ভাগ কৃষক। সপ্তাহের ৭দিনই বসে এ গ্রামে করলার বাজার বলছিলাম রাজশাহী বিভিন্ন উপজেলার কৃষক গ্রামের কথা। এ গ্রামের মাঠ জুড়ে করলার সমারোহ। যেদিকে চোখ যায় শুধু করলার জমি। রাজশাহী পবা উপজেলাসহ আশেপাশের কয়েক উপজেলায় করলার আবাদের কারণে ‘করলার গ্রাম’ হিসেবে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামটির। গ্রামের সীমানা অর্ধেক সিটি কর্পোরেশন অপর অর্ধেক বিভিন্ন উপজেলা ইউনিয়নের মধ্যে পড়েছে।
কাক ডাকা ভোর থেকে ক্ষেতের করলা তোলার উৎসব শুরু হয়ে যায়। করলা তোলার পর কৃষকরা ডালি বোঝাই করে কেউবা কাঁধে, কেউ আবার মাথায় বা অটোভ্যান যোগে স্থানীয় রাজশাহী সাহেব বাজার মাস্টার পাড়া রামচন্দ্রপুর হাট এসে হাজির হন। আর এখানেই সপ্তাহের পতিদিন করলার বিশাল হাট বাজারে বিভিন্ন জায়গার পাইকারী ব্যবসায়ীরা এখানে এসে করলা কিনে নিয়ে যায়। প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার মণ করলা এখান থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। তবে বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকায় মাঝে মধ্যেই বিপাকে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী এ গ্রামের কৃষকরা করলার আবাদের পাশাপাশি একই জমির মধ্যে পটল, কুমড়া, ঢেঁড়শ, বরবটি, বেগুন, মরিচ, লাউ আবাদ করে আসছে। করলার পাশাপাশি এগুলো আবাদ অত্যন্ত লাভজনক বলে জানিয়েছেন এ গ্রামের কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, এ বছর পবা তানোর বাগমারা উপজেলায় ১৯০ হেক্টর জমিতে করলার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে রামচন্দ্রপুর গ্রামেই ১০০ হেক্টরের বেশি জমিতে করলার আবাদ হয়েছে। এ বছর উৎপাদিত করলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৭০মেট্রিক টন। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজশাহী জেলা গ্রামের কৃষক ফিরুজ কবির জানান, এ গ্রামের প্রায় শতভাগ মানুষ সবজি চাষ করেন। এর মধ্যে করলার আবাদ করেন শতকরা ৯০জন। তিনি আরও জানান, বীজ কেনা, পরিচর্যা ও কীটনাশকসহ এক বিঘা জমিতে করলা আবাদ করতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। এখানে বেশির ভাগ সাইট্যা জাতের করলার আবাদ হয়। এই জাতের বীজ রংপুর থেকে আনা হয়। এক সপ্তাহ পর পর জমিতে ছত্রাকনাশক দিতে হয়। ভালো মানের করলা হলে এবং ন্যায্যমূল্য পাওয়া গেলে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার করলা বিক্রি করা সম্ভব। কিন্তু এখানে সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকায় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে করলা বিক্রি করতে হয় বলে মাঝে মধ্যেই আমাদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
গ্রামের পাইকারী ব্যবসায়ী কবির হোসেন জানান, সে একজন স্থানীয় পাইকারী ব্যবসায়ী। তাছাড়া বংশ পরম্পরায় তিনিও করলার আবাদ করেন। এ গ্রামের মাঠে প্রতিবছর ভালো মানের করলার আবাদ করা হয়। এখানকার কৃষকদের বাজার ব্যবস্থাপনা বলতে একমাত্র স্থানীয়পবা রামচন্দ্রপুর বায়া বাজার। সকাল ৬টা থেকে চলে বেচা-কেনা। প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথমে জমি থেকে করলা কম উত্তোলন হলে। তবে মাসের শেষে ও মার্চ মাসের শুরুতে পুরোদমে চলে করলা উত্তোলন। এসময় আমদানী অনেক বেশি হয়।
কৃষক কালাম আলী ও শাহীন জানান, প্রতি এক সপ্তাহ পরপর এক বিঘা জমি থেকে প্রায় ২০মন করলা উত্তোলন করা যায়। করলার আমদানী বেশি হওয়ার কারণে দাম তুলনামূলকভাবে কম। তবে মৌসুমের শুরুতে করলা প্রতি কেজি ৬৫-৮০টাকা দরে বিক্রি করায় আবাদের খরচ উঠে গেছে। এখন যা বিক্রি করা হবে তাই লাভ। উপজেলা কৃষি অফিসের দেয়া পরামর্শে একই জমিতে করলার পাশাপাশি আমরা পটল, কুমড়া, ঢেঁড়শ, বরবটি, বেগুন, মরিচ, লাউ আবাদ করছি। তাছাড়া আমরা বিষমুক্ত করলা উৎপাদন শুরু করেছি।
বগুড়া থেকে আগত পাইকারী ব্যবসায়ী শরিকুল ইসলাম ও নাটোরের বড়াইগ্রাম থেকে আগত পাইকারী ব্যবসায়ী আলম হোসেন জানান, এখানে করলার আমদানী ভালো। তাছাড়া ভালো মানের করলা পাওয়া যায়। আমরা এখান থেকে করলা কিনে মিনি ট্রাক/বড় ট্রাক যোগে রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, আহমেদপুর, দয়ারামপুর, রাজধানীর কারওয়ান বাজার, সাভার, চৌরাস্তার বাজার গুলোর অন্য পাইকারদের কাছে গিয়ে বিক্রি করি। এতে করে কেজি প্রতি ৪টাকা বাড়তি খরচ হয়।
বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে ঐ এলাকার গ্রামের ৯০ ভাগ কৃষক করলা আবাদ করে। এখানকার করলা মানে ভালো ও বিষমুক্ত হওয়ায় সুনাম রয়েছে। বাজার ব্যবস্থাপনা ভালো থাকলে আরও কৃষক করলা চাষে আগ্রহী হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর উপজেলায় তুলনামূলক বেশি করলার চাষ হয়েছে। বিগত বছরের মত এবারও উৎপাদিত করলার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিষমুক্ত করলা উৎপাদনের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে করলা আবাদে কৃষকরা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এই পদ্ধতিতে সবজি আবাদ করলে খরচ অনেকটা কম হবে। সবজি আবাদে কৃষি বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
সোহেল রানা রাজশাহী
মোবাইল নং 01792118745