সোহেল রানা রাজশাহী জেলা
প্রতিনিধি
ফসলি জমিতে পুকুর খননের সংবাদ সংগ্রহের জের ধরে সাংবাদিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে স্থানীয় সন্ত্রাসী নান্নু মোল্লাসহ তার সহযোগীরা। ওই হামলায় গুরুত্বর আহত হয়েছেন সমকালের গুরুদাসপুর প্রতিনিধি নাজমুল হাসান নাহিদ (২৮)। তাকে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
বুধবার (৪ জানুয়ারী) সন্ধ্যার দিকে উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের দুর্গাপুর স্লুইচগেট মসজিদের কাছে ওই হামলার শিকার হন নাজমুল। অভিযুক্ত নান্নু মোল্লা পৌর সদরের চাঁচকৈড় বাজার পাড়া মহল্লার নাছির মোল্লার ছেলে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মো. অক্সিন জানান, আহত সাংবাদিক নাজমুলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। তার বুকের দুইটি হাড় ভেঙ্গে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
ঘটনার দিন বুধবার সকালে গুরুদাসপুর প্রেসক্লাবের সদস্যরা পুকুর খননের সংবাদ সংগ্রহের জন্য দুর্গাপুরের হাঁড়িভাঙ্গা বিলে যান। সেখানে তিনি ওই সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন। সেখানে ১৫ বিঘা সরিষার জমিতে পুকুর খনন চলছিলো। ওই পুকুর খননের সংবাদ ফেসবুকে প্রচার করেন সাংবাদিকরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পুকুর খননকারীরা সাংবাদিকদের প্রাণনাশের হুমকি দেন এবং নাজমুলের উপর হামলা চালান।
সংবাদকর্মীরা জানান, ওসি ও এসিল্যান্ডের উপস্থিতিতে থানা ও উপজেলা প্রশাসন পুকুর খনন কাজে ব্যবহৃত একটি এক্সকেভেটর জব্দ করেন নান্নু মোল্লার পুকুরের পাশে। এসময় গুরুদাসপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহে গেলে নান্নু মোল্লা (৪৫) ও তার ছোট ভাই নহর মোল্লা (২০), জুয়েল মোল্লা (২৮), মো. সুমনসহ (৩০) অন্তত ১০ জনের একটি দল তাদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এসময় ঘটনাস্থলে সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. মেহেদী হাসান শাকিল ও গুরুদাসপুর থানার ওসি মো. আব্দল মতিন উপস্থিত ছিলেন বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। তবে সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও গুরুদাসপুর থানার ওসি ওই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আমরা মোবাইল কোর্ট নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। সাংবাদিকরা চলে যাওয়ার পর হামলার শিকার হন বলে লোকমুখে শুনেছি।
আহত সাংবাদিক নাজমুল বলেন, দুর্গাপুর মসজিদের সামনে তারা প্রায় ১০ জন সংবাদকর্মী সংবাদ সংগ্রহের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। এসময় নান্নু মোল্লাসহ অন্তত ১০জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সাংবাদিকদের ওপার হামলা চালান। তাকে সড়কে ফেলে এলোপাতারিভাবে পিটিয়ে যখম করেন। এসময় ইত্তেফাকের রাশিদুল, মোহনা টেলিভিশনের মিজানুর রহমান, এশিয়ান টেলিভিশনের মেহেদী হাসান তানিম, আমার সংবাদের আব্দুস সালাম, সংবাদের শাকিল আহমেদ, আজকের দর্পনের জুয়েল হাসান টিপু, বাংলাদেশের খবরের আবু হেনা মোস্তফা কামালকেও লাঞ্চিত করা হয়।
সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনায় চলনবিল প্রেসক্লাবের সভাপতি কালের কন্ঠের প্রতিনিধি আলী আক্কাছ প্রতিবাদ জানিয়ে দোষিদের বিচার দাবি করেন।
গুরুদাসপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি যুগান্তরের গুরুদাসপুর প্রতিনিধি দিল মোহাম্মদ জানান, ‘গুরুদাসপুর উপজেলা জুড়ে কৃষি জমিতে পুকুর খননের মহোৎসব চলছে। সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন। ওই হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি জানিয়েছেন তিনি।’
নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, গুরুদাসপুরে কোনো পুকুর খনন হবেনা। সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়টি পুলিশের।
নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান মুঠোফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।