সাইফুল্লাহ সাইফ :
অন্যকে ভালো করার দায়িত্ব আমরা না নেই! বরং প্রত্যেককেই চেষ্টা করি নিজে ভালো হতে। বদলানোটা নিজেকে দিয়েই শুরু করতে হয়,তবেই না বদলাবে পরিবার, সমাজ আর রাষ্ট্র। সত্যিই আমাদের ভালো মানুষ হয়ে উঠাটা ভীষণ দরকার। কেননা, ‘দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য অথবা প্রাণ থাকলে প্রাণী হয়, মন না থাকলে মানুষ হয়না।’শিক্ষা হলো ব্যক্তির অন্তর্নিহিত সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশের অব্যাহত অনুশীলন। তবে শিক্ষিত হওয়ার চেয়েও ভালো মানুষ হওয়া যে খুব বেশি প্রয়োজন এতে সন্দেহ নেই। দিন দিন যে হারে শিক্ষিত সংখ্যা হার বাড়ছে কিন্তু সুশিক্ষিত সংখ্যা বাড়ছে কি সেই হারে? সুশিক্ষিত বা ভালো মানুষ হওয়ার জন্য যে মানবীয় গুনাবলী, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ এর সমন্বয় প্রয়োজন, সেই প্রক্রিয়া কতটুকু অব্যাহত আছে? পৃথিবীর সবদেশের দুর্নীতিবাজ বা বড় অপরাধীদের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখবেন সংখ্যাটা অশিক্ষিত বা নিরক্ষর মানুষের চেয়ে শিক্ষিতরাই বেশি। শিক্ষা শুরু হয় পরিবার থেকে এবং বিকশিত হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। কোনো এক বিষয়ের উপর শিক্ষা তাকে জ্ঞানী করছে, দক্ষ করছে। কিন্তু এর সাথে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা না থাকলে সে কোনদিন ভালো মানুষ হতে পারে না। মনুষ্যত্ব না থাকলে বাস্তবিক এই শিক্ষা সমাজ বা মানুষের কল্যাণে কাজ করে না। তখন নৈতিকতা ও মূল্যবোধহীন শিক্ষিত মানুষ অতি মাত্রায় আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে, অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসা থাকে না, কারো উপকারে এগিয়ে আসেনা, মানবতার কথা চিন্তাতেও আসেনা। ন্যায়-অন্যায়, ঠিক-বেঠিক, ভাল মন্দ এই চেতনা যখন শিক্ষিত মানুষের থাকবেনা, তখন দেশে সুনাগরিক ও সভ্য সমাজ গড়ে উঠার কল্পনা করা যাবেনা। যদি আমরা শিক্ষক পরিবার নৈতিকতা, মূল্যবোধ ধারণ ও লালন করি এবং প্রতি ক্লাসে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ নিয়ে কিছু সময় আলোচনা করি, অভিভাবকরা ছেলে মেয়েদের মানবিক গুনাবলি বিকাশে যতœশীল হলে কেবল তখন শিক্ষিত জাতির সাথে ভালো মানুষের সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করা যায়। শুধুমাত্র সন্তানদের ভালো রেজাল্ট করার দিকে নজর না দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনার পাশাপাশি উত্তম চরিত্র ও মনুষ্যত্বের দিকে অধিক মনোযোগী হওয়া উচিত। বাবা-মা দের সন্তানদের সময় দিতে হবে,তাদের খেয়াল রাখতে হবে যেনো অসৎ ও খারাপ কাজে নিজেকে না জড়াতে পারে। পরিশেষে বলবো, সততা, মানবকিতা, মনুষত্ব, বিবেককে জাগ্রত করে মিথ্যা, অসততা পরিহার করে, যে কোনো পেশায় নিয়োজিত হোক না কেন তার ঐ পেশার প্রতি শতভাগ শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা থেকে মানুষের সেবা করা উচিত। প্রকৃতপক্ষে আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত,ব্যক্তি স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে মানুষের মতো মানুষ হওয়া। ভালো মানুষ হওয়া।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক,সাপ্তাহিক শুরূক