আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে(ইভিএম)ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন-ইসি।গতকাল ইসির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।নির্বাচন ভবনে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে বিকালে এ সভা হয়।সভা শেষে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন,কমিশন সব বিষয় আমলে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী সংসদ নির্বাচনে অনূর্ধ্ব ১৫০আসনে ইভিএমে ভোট করবে,অন্যান্য সুবিধা প্রাপ্তি সাপেক্ষে তা করা হবে।তিনি বলেন,কমিশনের সিদ্ধান্ত পেলে প্রকিউরমেন্টে যাব।এখন ইসির হাতে দেড় লাখ ইভিএম আছে।এগুলো দিয়ে ৭০-৭৫আসনে ভোট নেওয়া যাবে।এর চেয়ে বেশি আসনে ভোট করতে হলে ইভিএম কিনতে হবে।এখন থেকে সে উদ্যোগ নেওয়া হবে।প্রয়োজনে ইভিএম কেনার জন্য নতুন প্রকল্প নেওয়া হবে।রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতার বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব বলেন,ইসি অভ্যন্তরীণভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।ডিটেইলস বিষয় এখানে আসেনি।সিদ্ধান্ত হয়েছে অনধিক ১৫০আসনে করবে।ন্যূনতম একটিও হতে পারে।সর্বোচ্চটা জানানো হলো।ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,সংসদের মোট সাধারণ আসন ৩০০,২০১৮সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়া হয়েছিল।বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের হাতে দেড় লাখ ইভিএম রয়েছে,যা দিয়ে৭০-৭৫আসনে ভোট গ্রহণ সম্ভব।১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করতে হলেও আর এক থেকে দেড় লাখ ইভিএম কিনতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।আগামী বছরের ডিসেম্বর বা ২০২৪সালের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে কমিশন।এ ক্ষেত্রে আগামী বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি তফসিল ঘোষণা হতে পারে।রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে ইভিএম নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারার’বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়ার এক দিনের মাথায় ১৫০আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো কমিশন সভায়।রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে পাওয়া প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা ও ইসির মতামত’সংক্রান্ত সারসংক্ষেপে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে সোমবার বলেন,ইভিএম ব্যবহারে দলগুলোর আপত্তি ও সমর্থন দুই-ই রয়েছে।সার্বিক বিষয়ে এখনো স্থির কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি ইসি।রাজনৈতিক দল ছাড়াও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিচার-বিশ্লেষণ করে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে ইসি ভিন্নভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের জানানো হবে।নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০আসনেই ইভিএমে ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়েছিল।বিএনপি ইসির সংলাপে অংশ না নিলেও ইভিএমকে কারচুপির যন্ত্র’ বলে অভিযোগ করে আসছে।জুলাইয়ে ইসির নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে ২২টি দল ইভিএম নিয়ে মতামত দিয়েছিল।সংলাপে জাতীয় পার্টিসহ ১৪টি রাজনৈতিক দল ইভিএম নিয়ে সংশয় ও সন্দেহের কথা বলেছে।৯টি দল সরাসরি ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দিয়েছে।সংলাপে ইভিএমে ভোট চেয়েছে আওয়ামী লীগসহ চারটি দল।কয়েকটি দল শর্ত সাপেক্ষে ইভিএমের পক্ষে বলেছে।তবে বিএনপিসহ ৯টি দল ইসির সংলাপ বর্জন করে,তারাও ইভিএমের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন,বিগত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০আসনে দেশে ভোট কেন্দ্র ছিল ৪০হাজার ১৮৩টি।ভোটকক্ষ ছিল ২লাখ ৭হাজার ৩১২টি।এ প্রক্রিয়ায় ভোট গ্রহণ করতে প্রতি ভোটকক্ষের জন্য একটি ইভিএম প্রয়োজন হয়।যান্ত্রিক ত্রুটি বিবেচনায় রেখে প্রতি কেন্দ্রের জন্য মোট কক্ষের অর্ধেকসংখ্যক ইভিএম অতিরিক্ত সংরক্ষণ করা হয়।তবে প্রতি বছর ২দশমিক ৫শতাংশ হারে দেশে ভোটার বাড়ছে এবং পাঁচ বছরে প্রায় ১২দশমিক ৫০শতাংশ ভোটার বাড়তে পারে।এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও ভোটকক্ষের সংখ্যাও বাড়বে আগামী সংসদ নির্বাচনে।ইসির প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনে ১৫০আসনে ভোট গ্রহণের জন্য আড়াই থেকে ৩ লাখের বেশি ইভিএমের প্রয়োজন হবে।২০১৮সালের ৩০ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।আর প্রথম সংসদ অধিবেশন বসে ২০১৯সালের ৩০জানুয়ারি।সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ প্রথম অধিবেশন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর।সে হিসেবে ২০২৪সালের ৩০জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ।নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংবিধানে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০দিনের কথা বলা হয়েছে।সে হিসেবে ২০২৪সালের ৩০জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০দিনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।