★ বার্তাসম্পাদক,মো:রফিকুল ইসলাম লাভলু।
করোনা মহামারির ভয়াল থাবায় দুই বছর থমকে ছিল সারা দেশ।কঠোর লকডাউন,সীমিত লকডাউন আর বিধিনিষেধসহ নানা নিয়মের বেড়াজালে অন্য সব কিছুর মতো টানা দুই বছরের ঈদও ছিল বিবর্ণ,নিষ্প্রাণ।তবে,ভাইরাসের শক্তি কমে জীবন-যাত্রায় স্বাভাবিকতা ফিরে আসায় দুই বছর পর উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে এবারের ঈদ।উৎসবের রঙে সেজেছে দেশ।বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে সর্বত্রই।শপিং মল থেকে ফুটপাথের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়ের পাশাপাশি লঞ্চ,ট্রেন ও বাস স্টেশনগুলোতেও উপচে পড়া ভিড়।ঈদের পোশাক কিনে দিয়ে পরিবারের মানুষকে খুশি করার পাশাপাশি নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার জন্যও লক্ষ্য করা যাচ্ছে প্রতিযোগিতা।সারা দেশেই এখন প্রাণের জোয়ার বইছে।খোলা থাকছে রাজধানীর সব পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র।খোলা থাকছে জাতীয় জাদুঘর,ফ্যান্টাসি কিংডম,নন্দনপার্ক,ড্রিম হলিডে ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ দেশের সব সমুদ্র সৈকত।আর দুই বছর বন্ধ থাকার পর ফের ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতীয় ঈদগাহ ও শোলাকিয়ায় অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহে।সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতিও চলছে।
জাতীয় ঈদগাহ: দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করে থাকেন।দেশের প্রধান ঈদের জামাতটিও অনুষ্ঠিত হয় এ ঈদগাহেই।রাজধানীতে ঈদ করা বাসিন্দাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতেও থাকে জাতীয় ঈদগাহ।যার কারণে এ ঈদগাহ নিয়ে মানুষের আগ্রহটা একটু বেশিই।করোনা শেষে দুই বছর পর জাতীয় ঈদগাহে ফের ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে মানুষের আগ্রহটা এখন জাতীয় ঈদগাহকে ঘিরেই।নামাজের জন্য ঈদগাহকে প্রস্তুত করার লক্ষ্যে বর্তমানে দিনরাত কাজ করছেন শ্রমিকরা।কেউ বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরি করছেন আবার কেউ ত্রিপল টানার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
শোলাকিয়া ঈদগাহ: দীর্ঘ দুই বছর পর ফের ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ শোলাকিয়ায়।ঈদগাহ প্রস্তুত করার লক্ষ্যে শোলাকিয়া ময়দানে বর্তমানে দিনরাত কাজ করছেন নির্মাণশ্রমিকরা।কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, আজকের মধ্যে প্রস্তুতি শেষ হয়ে যাবে।সকাল ১০টায় শুরু হবে ঈদের জামাত।এতে থাকছে চার স্তরে নিরাপত্তা।করোনা মহামারির কারণে টানা দুই বছর বন্ধ থাকার পর এবার ঈদজামাত অনুষ্ঠিত হবে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়।দেশের প্রাচীন ও বৃহত্তম ঈদগাহ শোলাকিয়ায় এবার অনুষ্ঠিত হবে ১৯৫তম ঈদজামাত।শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদের জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন।কিছু বিধিনিষেধ মেনে ঈদগাহে যেতে হবে মুসল্লিদের।ঈদজামাতের জন্য ঈদগাহের প্রস্তুতিও নিয়েছে ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসন।ইতোমধ্যে ঈদগাহের দাগকাটা,মিম্বর ও বেষ্টনী দেয়ালে রং করা, ওজুখানা তৈরি,টয়লেটে পানিরব্যবস্থা,মাইকের জন্য বিদ্যুতের লাইন বসানোসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।ঈদগাহের সার্বিক প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে ঈদগাহ পরিদর্শনও করেছেন।জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শামীম আলম জানান,ঈদজামাত অনুষ্ঠানের জন্য এখন প্রস্তুত শোলাকিয়া।এবারের জামাতে কিছু বিধিনিষেধের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান,জায়নামাজ ও মাস্ক ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে মাঠে প্রবেশ করা যাবে না।নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা থাকবে।পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম(বার)জানান,শোলাকিয়া ঈদগাহ চারস্তরের নিরাপত্তা বলয়ে ঢাকা থাকবে।ঈদজামাত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে চারটি ড্রোন ক্যামেরা,বাইনোকুলারসহ পাঁচ প্লাটুন বিজিবি,র্যাব,পুলিশসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য মোতায়েন করা হবে।মাঠে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার এবং সিসি ক্যামেরা দ্বারা পুরো মাঠ মনিটরিং করা হবে।পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন থাকবে।ছয়টি অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম এবং ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট সার্বক্ষণিক মোতায়েন থাকবে।বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটসহ পুলিশের কুইক রেসপন্স টিমও প্রস্তুত থাকবে।দূরের মুসল্লিদের সুবিধার্থে ঈদের দিন কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রুটে‘শোলাকিয়া এক্সপ্রেস’নামে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।শোলাকিয়ায় ঈদজামাতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলিমীন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।উল্লেখ্য,২০১৬সালের ৭জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে আজিম উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে।এতে পুলিশের দুজন কনস্টেবল আনসারুল হক ও জহিরুল ইসলাম,স্থানীয় গৃহবধূ ঝর্ণা রানী ভৌমিক ও আবির রহমান নামে এক জঙ্গি নিহত হন।জঙ্গি হামলার পর থেকেই প্রতি বছর ঈদের দিন শোলাকিয়ায় বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বিনোদন কেন্দ্র: রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোর তদারকিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন জানান,করোনা শেষে দুই বছর পর দেশ আবার স্বাভাবিক হওয়ায় এবার ঈদের দিন থেকেই বিনোদন কেন্দ্রগুলো খোলা থাকবে।শিশুপার্ক,শ্যামলী শিশুমেলা,আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডম ও নন্দন পার্ক, নরসিংদীর ড্রিম হলিডে,জাতীয় জাদুঘর,সোহরাওয়ার্দী উদ্যান,রমনা পার্ক,বোটানিক্যাল গার্ডেন,চিড়িয়াখানা, শিল্পকলা একাডেমি,ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবার,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভো থিয়েটার,সামরিক জাদুঘরসহ সব বিনোদন কেন্দ্রে ভিড় লক্ষ্য করা যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা।ঈদের ছুটিতে বিনোদনপিপাসু মানুষদের একটা অংশ বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে ভিড় জমান।করোনার কারণে দুই বছর অনুরাগীদের ভালোবাসা থেকে দূরে ছিল সাগরকন্যা। এবারের উৎসবমুখর ঈদে সাগর ফের তার প্রিয়দের কাছে পাচ্ছে।বিভিন্ন বিশ্বস্ত সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, পর্যটকদের বরণে সাগর এলাকার সব প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।