লালমনিরহাট আদিতমারীতে অবৈধ ইটভটার বিষাক্ত ধোয়ায় শত,শত কৃষকের প্রায় ৪শত হেক্টর বোরো ধানের ফসল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।সোমবার(১৮নভেম্বব)ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জমির ফসল প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
অভিযোগে জানাগেছে,সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের কর্ণপুর গ্রামে অবস্থিত অনুমোদনহীন টু-স্টার ও এইচবি নামে দুটি অনুমোদনহীন অবৈধ ইটভাটার বিষাক্ত ধোয়ায় আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের গন্ধমরুয়া গ্রামের সিংগীমারী দোলায় এলাকা ও পার্শ্ববর্তি সদর উপজেলার কর্নপুর দুই উপজেলার দুটি গ্রামের প্রায় ৪০০বিঘা জমির বোরো ধান,ভুট্টাসহ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।এমন কি সুপারি গাছ ও বাঁশের ঝাড় পর্যন্ত মরে যাচ্ছে।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ধান গাছ তাজা থাকলেও শিষে কোন প্রকার ধান নেই মরে চোছা হয়ে গেছে।
গন্ধমরুয়া এলাকার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ফজলু মিয়া জানান,এ বছর অন্যর কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে দেড় এক জমিতে বোরো ধান করেছি।ধানের শিষ বাহির হয়েছে কিন্তু আমার জমির পাশে দুটি অবৈধ ইট ভাটার বিষাক্ত গ্যাসের কারনে আমার পুরো ধান ক্ষেত পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।এখন আমি আমার পরিবার নিয়ে কিভাবে দিনযাপন করব ভেবে পাচ্ছিনা।আমি সরকারের কাছে বিচার চাই এবং ক্ষতি দাব করেন।একই এলাকার কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন,এই অবৈধ দুটি ইট ভাটবিষাক্ত গ্যাসের কারনে আমার ২একর ৬৯শতক জমির ধানসহ শত,শত কৃষকের ধান একেবারে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।আমার সংসার একমাত্র কৃষি কাজের উপর নির্ভশীল সেটাতো শেষ হয়ে গেছে(এলা মুই বিবি ছাওয়া নিয়ে কুটে যাইম বাহে-কি যে খামো এখন পথের ভিক্ষারী হয়ে গেছি)তিনি অবৈধভাবে ইট ভাটার মালিকের বিরুদ্ধে আইননানুক ব্যবস্থাসহ ক্ষতিপুরনের জোড়ালো দাবী করেন।এদিকে অভিযোগ দাখিলের পর মঙ্গলবার(১৯নভেম্বর)বিকেলে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে গতকাল মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের দায়িত্বে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মহেশ চন্দ্র রায় সরেজমিনে এসে ক্ষতিগ্রস্ত আসল কৃষকের নাম ও পরিমান তালিকা করেন।এ ব্যাপারে তিনি আরও বলেন ইটভাটার গ্যাসের কারনে ধানের ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি প্রাথমিক ধারনা করেন।অবৈধ ইটভাটা টু স্টার ব্রিকসের মালিক সেলিম হায়দারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি।
রংপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মেজ-বাবুল-আলম বলেন,লালমনিরহাট সদর উপজেলার কর্ণপুর গ্রামে টু স্টার ব্রিকস নামে কোন ইটভাটার অনুমোদন নেই। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে শিঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে।উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিআর সারোয়ার ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ফসলের ক্ষতির আবেদন পাওয়ার কথা সত্যতা স্বীকার করে বলেন,এ বিষয়ে কৃষি অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।তারা সরেজমিনে গিয়ে সঠিক কৃষকের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপন করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে দিলে পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের নিকট দাখিল করা হবে।
এদিকে মঙ্গলবার(১৮নভেম্বর)সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের কর্নপুর এলাকার শতাধিক ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষতিপুরনের দাবিতে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা রবিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পযর্ন্ত জিরামপুর এলাকায় লালমনিরহাট-মোগলহাট সড়ক অবরোধ করেন।এসময় ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।রাস্তার উপর বসে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
পরে সেখানে পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা মাসুম ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুদ্ধ কৃষকদের শান্ত করেন।তিনি ক্ষতিগ্রস্থ ফসলের ক্ষেত পরিদর্শন করে কৃষকদের ক্ষতিপুরন পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
দৈনিক তোকদার নিউজ ডট কম।