ঘড়ির কাঁটা তখন ভোর ৪টা ৩০মিনিট ছুঁইছুঁই।নিস্তব্ধ রাতের নীরবতা ভাঙে রংপুর পুলিশ লাইন্সের গেটে কনস্টেবল পদে চাকরিপ্রার্থী আর তাদের অভিভাবকদের পদচারণায়। নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় আছেন তারা।
অবশেষে সব উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে বুধবার(৩০মার্চ)ভোর সাড়ে চারটার দিকে রংপুর জেলার পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের ফলাফল ঘোষণা করেন।এ সময় নিয়োগ কমিটির সদস্য ও রংপুর জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ফলাফল ঘোষণার সময় উপস্থিত প্রার্থী ও অভিভাবকরা যোগ্যতার ভিত্তিতে মাত্র ১২০টাকায় বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ পাওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।এসময় নির্বাচিত প্রার্থীরা অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন।
এক প্রার্থী বলেন,আমার বাবা গরীব কৃষক।অনেকেই বলেছিলেন টাকা ছাড়া চাকরি হবে না,কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি।বাংলাদেশ পুলিশ মাত্র ১২০টাকায় চাকরি দেওয়ায় আমার মতো গরীব কৃষকের ছেলের চাকরি হয়েছে। এসময় সেখানে উপস্থিত তার মা-বাবাও ছেলের চাকরির আনন্দে কেঁদে ফেলেন।
অপর এক প্রার্থী বলেন,আজ ভাইভা দেওয়ার পর থেকেই মনে হচ্ছিলো আমি টিকবো।আমার লিখিত পরীক্ষাও ভালো হয়েছিল।অনেকের কাছে নানারকম গুজব শুনে ভয় পেয়েছিলাম আমার হবে কি না।কিন্তু আজ রেজাল্ট পেয়ে আমার সব শঙ্কা দূর হয়েছে।টাকা আর তদবির ছাড়া যে সরকারি চাকরি হয়,বাংলাদেশ পুলিশ তার প্রমাণ।
বাদ পড়া প্রার্থীদের একজন বলেন, ভাইভায় না টিকে খারাপ লাগছে।কিন্তু যে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হয়েছে,তাতে আর আক্ষেপ নেই।এভাবেই যদি সব চাকরির নিয়োগ হয় তবে প্রার্থীদের আর দালাল বা প্রতারকদের খপ্পরে পড়তে হবে না।চাকরি পেতে টাকা বা তদবির লাগবে না।
বাংলাদেশ পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য রংপুর জেলার ৮০টি আসনের বিপরীতে প্রায় দুই হাজার ৮০০প্রার্থী অনলাইনে আবেদন করেন।এবারের নিয়োগ পরীক্ষা ৩টি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়।
আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর যোগ্য প্রার্থীরা প্রথম ধাপে গত ১২থেকে ১৪মার্চ শারীরিক যোগ্যতা যাচাই ও মাঠ পরীক্ষায় অংশ নেন।পরে সেখান থেকে ৬৭৫জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়ে দ্বিতীয় ধাপে গত ২০মার্চ লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন।সেখান থেকে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে লিখিত পরীক্ষায় খাতা মূল্যায়নের পর ২৫৯জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন।পরবর্তীতে তৃতীয় ও চূড়ান্ত ধাপে গত ২৯মার্চ ২৫৯জন প্রার্থীর মধ্য থেকে মৌখিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষার মাধ্যমে সার্বিক মূল্যায়নে সাধারণ ও বিভিন্ন কোটায় ৮০জনকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়।