ঝালকাঠীর সুগন্ধা নদীতে যাত্রীবাহি লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কতজন নিখোঁজ রয়েছেন তার সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারছে না জেলা প্রশাসন। তবে এ পর্যন্ত ৭ থেকে ৮ জন ব্যক্তি জেলা প্রশাসনের কাছে তাদের স্বজন না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। তারা নদীর তীরে এবং হাসপাতালে ভিড় করছেন। জীবিত কিংবা মৃত যে কোনো অবস্থায় নিখোঁজ স্বজন ফেরত চান তারা।
মা ও ছোট বোনকে নিয়ে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে পটুয়াখালীর মীর্জাগঞ্জের দেউলি গ্রামে ফিরছিলেন জিসান সিকদার রনি। রাতে লঞ্চের দ্বিতীয় তলার ডেকে ঘুমিয়ে ছিলেন তারা। হঠাৎ লঞ্চের ইঞ্জিনরুটে বিকট শব্দে তাদের ঘুম ভাঙে। মুহূর্তের মধ্যে ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় লঞ্চ। পুরো লঞ্চে ডাকচিৎকার আর আগুনের লেলিহান শিখা। কোথাও দাঁড়াতে পারছিলেন না তারা। প্রাণে বাঁচতে মা আর বোনকে নিয়ে লঞ্চের ছাদে যাবার সময় তাদের (বা ও বোন) সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান রনি। কিছুক্ষণ খুঁজে মা ও বোনকে না পেয়ে নিজের প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপ দেন রনি। পরে নদী তীরবর্তী লোকজন যখন তাকে টেনে তোলেন তখন অনেকটা সংজ্ঞাহীন রনি। আহত রনিকে ভর্তি করা হয় শের-ই বাংলা মেডিকেলে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মা ও বোনের জন্য শুধুই বিলোপ করছেন রনি।
একইভাবে এ দুর্ঘটনার পর বড় ছেলে না পেয়ে পাগলপ্রায় বরগুনা বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া গ্রামের গীতা রানী। অগ্নিকাণ্ডের পর দুই ছেলেকে নিয়ে ছোটাছুটি করে দুই ছেলেকেই একপর্যায়ে হারিয়ে ফেলেন তিনি।শেষ পর্যন্ত ছোট ছেলে প্রত্যয়কে (৬) খুঁজে পেলেও বড় ছেলে স্বপ্নীলকে (১৪) হারিয়েছেন তিনি। স্বপ্নীল বুকাবুনিয়া গ্রামের সঞ্জিব চন্দ্র হালদারের ছেলে।হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে পুড়ে যাওয়া লঞ্চে এবং ঝালকাঠী সদর হাসপাতালে খুঁজে না পেয়ে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেলে খুঁজতে এসেছেন গীতা রানী।কিন্তু সেখানেও বড় ছেলের সন্ধান না পাওয়ায় হাসপাতালের বারান্দায় বুকফাঁটা আর্তনাদ করতে থাকেন তিনি।
গীতার স্বামী সঞ্জিব চন্দ্র হালদার ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। থাকেন ঢাকার উত্তরায়।গত বৃহস্পতিবার দুই ছেলে স্বপ্নীল আর প্রত্যয়কে নিয়ে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের ডেকে গ্রামের বাড়ি ফিরছিলেন গীতা।
তিনি জানান, রাত ৩টার দিকে তার বড় ছেলে স্বপ্নীল প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে লঞ্চের টয়লেটে যায়। তখন ইঞ্জিন রুমে বিকট শব্দ হয় এবং পুরো লঞ্চে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ডেকের লোকজন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে। এতে বড় ও ছোট ছেলে দুইজনকেই হারিয়ে ফেলেন তিনি। লোকজনের ধাক্কায় কীভাবে লঞ্চের বাইরে নেমেছেন তাও বলতে পারছেন না তিনি। কয়েক ঘণ্ঠা পর ছোট ছেলে প্রত্যয়কে খুঁজে পেলেও বড় ছেলে স্বপ্নীলের সন্ধান পাননি তিনি।
ঢাকার উত্তরা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৯ম শ্রেণির ছাত্র স্বপ্নীল। লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তাদের মতো অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। স্বজনরা তাদের সন্ধানে নদীর তীরে, পুড়ে যাওয়া লঞ্চে এবং বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজাখুজি করছেন। তাদের অনেকেই স্থানীয় প্রশাসনের কাছে নিখোঁজ স্বজনদের নাম তালিকায় দিয়েছেন।
তবে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজদের কোনো তালিকা নেই বলে জানিয়েছেন ঝালকাঠীর জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী। ওই দুর্ঘটনায় কতজন নিখোঁজ হয়েছেন তার কোনো সঠিক হিসাবও তার কাছে নেই। তবে ৭ থেকে ৮ জন ব্যক্তি মৌখিকভাবে তাদের স্বজন নিখোঁজের কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনকে।
এদিকে ওই লঞ্চের ৩ তলা থেকে লাফিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বেঁচে গেলেও আহত হয়েছেন বরগুনার বামনার মো. নোমান ও তার স্ত্রী ইমা। এ ছাড়া পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুসাইন মোহাম্মদ আল-মুজাহিদ এবং তার স্ত্রী উম্মুল ওয়ারাও ওই লঞ্চের ছাদ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। এতে উম্মুল ওয়ারার পা ভেঙে যায় এবং আল-মুজাহিদও আহত হন। এ ছাড়া শতাধিক যাত্রী বিভিন্নভাবে আহত ও দ্বগ্ধ হয়েছেন।
উপরের লেখাটি মূল খবরের একটি সারাংশ যা tokdernews.com থেকে প্রদত্ত। মূল খবরের লেখক বা tokdernews.com এই সারাংশের সঠিকতার দায় বহন করে না।