অনলাইন ডেস্ক মোঃ রফিকুল ইসলাম লাভলু বিভাগীয় স্টাফ রিপোর্টার রংপুর বিভাগ।
সারা দেশে সাংবাদিকদের প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনসহ ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার চার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা তিন দিনের মধ্যে প্রত্যাহার করার দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়া, জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর পদত্যাগ দাবি করা হয়। বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের (বিএমএসএফ)-এর উদ্যোগে গতকাল ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ সারা দেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক ও নিউজটোয়েন্টিফোরের সিইও নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি সান সম্পাদক ইনামুল হক চৌধুরী, বাংলানিউজের সম্পাদক জুয়েল মাজহার, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাংবাদিক সাইদুর রহমান রিমনসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে ৫০০ কোটি টাকার মানহানি মামলা করা হয়। চট্টগ্রামের আদালতে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক এ মামলা করেন।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বিএমএসএফের প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আবু জাফরের সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবু জাফর সূর্য, বিএমএসএফের যুগ্ম সম্পাদক আনিসুল লিমন, ঢাকা জেলা উত্তরের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি নাসির উদ্দীন পল্লব, ঢাকা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সমবায় সমিতির পরিচালক জয়নাল আবেদীন, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী সোহেলী পারভীন, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ।
সমাবেশে সাংবাদিক নেতা আবু জাফর সূর্য বলেন, বিপদে পড়লে সবাই সাংবাদিকদের কাছে আসেন। রিপোর্ট পক্ষে গেলে সাংবাদিকরা ভালো, বিপক্ষে গেলে খারাপ। বিপক্ষে গেলেই মামলা-নির্যাতন শুরু হয়। এটা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। স্বাধীনতার পক্ষে, শোষণের বিরুদ্ধে, সমতার জন্য সাংবাদিকদের লেখনী চলবে। কোনো অপশক্তি সাংবাদিকদের সাহসী লেখনী বন্ধ করতে পারবে না। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও সুশাসনের পাহারাদার এই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা মামলা আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে। মিথ্যা মামলা করার জন্য প্রকাশ্যে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। নইলে লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সভাপতির বক্তৃতায় আহমেদ আবু জাফর বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশে সব উপজেলায় একযোগে এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ চলছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না। তিন দিনের আলটিমেটাম শেষে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি মহাজোটকে ম্যানেজ করে এখন এমপি হয়েছেন, জাতীয় সংসদের হুইপও হয়েছেন। তিনি অবিলম্বে হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর পদত্যাগ দাবি করেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে মামলা করায় দেশের স্বনামধন্য সম্পাদক ও রাষ্ট্রীয় স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও উদ্বেগের বিষয়। এ ধরনের মামলা স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের (বিএমএসএফ) উদ্যোগে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা কায়সার ইকবাল চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাবেক দফতর সম্পাদক এম এ আশরাফ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জোনায়েদ হাসান, কক্সবাজার জেলা সদস্য আবদুল হাকিম, আবদুল আওয়াল মুন্না, রিয়াজ উদ্দিন, নাছির উদ্দীন, ফয়েজ আহমেদ পলাশ প্রমুখ। বক্তারা বলেন, বিভিন্ন সময় সাংবাদিকরা মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করতে পরিকল্পিতভাবে এই মামলা করা হয়েছে। কোনো মামলা দিয়ে সাংবাদিকদের কলম থামিয়ে রাখা যাবে না। বক্তারা অনতিবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
বরিশাল: নগরীর সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে মানববন্ধনে বরিশাল সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাসুদ রানার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কাজী মিরাজ মাহমুদ, সাংবাদিক ইউনিয়ন বরিশালের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরন, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও নিউজটোয়েন্টিফোরের স্টাফ রিপোর্টার রাহাত খান, বাংলানিউজের স্টাফ রিপোর্টার মুশফিক সৌরভ। বক্তারা বলেন, মামলা-হামলা দিয়ে সাংবাদিদের কণ্ঠরোধ করা যাবে না।
ময়মনসিংহ: নগরীর ফিরোজ জাহাঙ্গীর চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম বিএমএসএফের ময়মনসিংহের সভাপতি শিবলী সাদিক খান। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুজ্জামান আরজুর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সাইদুর রহমান বাবুল, সাধারণ সম্পাদক বদরুল আমীন প্রমুখ। তারা মিথ্যা মামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানান।
কুষ্টিয়া: শহরের থানার মোড়ে সমাবেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে হাসিবুর রহমান রিজুর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন নূরুন্নাহার সীমা, মুকুল খসরু প্রমুখ। বক্তারা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, মামলা, নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। করোনা দুর্যোগেও সাংবাদিকরা হয়রানি ও নির্যাতন থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।
নওগাঁ: শহরের মুক্তির মোড়ে নওজোয়ান মাঠের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বিএমএসএফের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মোফাজ্জল হোসেনের সভাপতিত্বে খোরশেদ আলম, গোলাম রসুল, বরুণ মজুমদারসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা এ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান।
ঝিনাইদহ: জেলা প্রেস ক্লাবের মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ঝিনাইদহ প্রেস ক্লাবের সভাপতি এম রায়হান, সাংবাদিক এম সাইফুল মাবুদ, আজাদ রহমান, দেলোয়ার কবির, ফয়সাল আহমেদ, কে এম সালেহ, শাহানুর আলম, শামীমুল ইসলাম শামীম, শেখ রুহুল আমিন, এম সাইফুজ্জামান তাজু। তারা সাংবাদিকদের নামে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। নোয়াখালী : নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে বিএমএসএফ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আকবর হোসেন সোহাগ, সংগঠনের জেলা শাখার নেতা এ আর আজাদ সোহেল, নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের সাবেক সম্পাদক জামাল হোসেন বিষাদ, সাংবাদিক আবু নাছের মঞ্জু, সোহাগ আরেফিন, অ্যাডভোকেট নূর হোসেন মাসুদ বক্তৃতা করেন। বক্তারা মিথ্য এ মামলা দ্রুত প্রত্যাহার না করলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন।
সাভার: সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেন সাংবাদিক সোহেল রানা, মোহাম্মদ ইয়াসিন, নাজমুল হুদা, ইউসুফ আলী খান, এম এ হান্নান চৌধুরী, আহমেদ জীবন, বাবুল আহমেদ, শম্ভুচন্দ্র সরকার, মৃদুল ধর ভাবন, এম ডি হাফিজুর রহমান, সোহাগ হাওলাদার, নাসিম খান, নূর হোসেন, নাসিমা আক্তার আশা প্রমুখ। বক্তারা বলেন, সাংবাদিকদের নামে মামলা-হামলার বিরুদ্ধে দেশের সংবাদকর্মীরা সোচ্চার রয়েছেন। সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে তারা বদ্ধপরিকর।
ভালুকা: উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধনে সাংবাদিক নেতারা মামলা প্রত্যাহারে তিন দিনের আলটিমেটাম দেন। বিএমএসএফের ভালুকা উপজেলা সভাপতি সফিউল্লাহ আনসারীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সবুজের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন, ভালুকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন তরফদার, সাংবাদিক আবুল বাশার শেখ, আল আমিন, খোরশেদ আলম জীবন, মর্জিনা আক্তার মনি প্রমুখ।
বাউফল: পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা পরিষদের মূল ফটকের সামনে অতুল চন্দ্র পালের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে প্রধান অতিথি ছিলেন হারুন অর রশিদ। মানববন্ধন শেষে প্রতিবাদ সমাবেশে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং সারা দেশে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করাসহ ১৪ দফা দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন শিবলী সাদিক, জিতেন্দ্র নাথ রায় প্রমুখ।
কলাপাড়া: স্থানীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে মানববন্ধন ও সবাবেশে হারুনর রশিদ মুক্তার সভাপত্বিতে বক্তব্য রাখেন কলাপাড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি হুমায়ুন কবির, মিজানুর রহমান, এসকে রঞ্জনসহ অনেকে। বক্তারা স্বনামধন্য সম্পাদক ও সাংবাদিকদের মিথ্যা মামলার আসামি করায় তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
পটুয়াখালী: পটুয়াখালী প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্বপন ব্যানার্জি ও সাধারণ সম্পাদক জালাল আহমেদ এক বিবৃতিতে বলেন, এ ধরনের মামলা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অশনিসংকেত। এটা আমাদের সাংবাদিকতার জন্য কারোরই কাম্য নয়। নেতারা দায়েরকৃত মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ জানিয়ে তা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানান।
বিডি// নিজস্ব প্রতিবেদক দৈনিক তোকদার নিউজ.কম এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ,তথ্য,ছবি,আলোকচিত্র,রেখাচিত্র,ভিডিওচিত্র,অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।