সোহেল রানা রাজশাহী বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান
মহামারী করোনার কারণে দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছরের বেশী সময় বন্ধ থাকার পর অবশেষে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগের জন্য সোনামসজিদ ও গেদে বর্ডার খুলে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুটি বর্ডারই লোক পারাপারের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, রাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার মনোজ কুমার যোগদানের পরই দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা গুরত্বপূর্ণ দুটি বর্ডার খুলে দেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেন। এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার থেকে সোনামসজিদ ও গেদে বর্ডার খুলে দেওয়া হয়।
তবে সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন ইনচার্জ জাফর ইকবাল জানান, এখনো ইমিগ্রেসন চালু হয়নি। শিগগিরই ঘোষণা দিয়ে ইমিগ্রেশন চালুুু করা হবে। এরপর আনুষ্ঠানিক পাসপোর্ট ও ভিসাধারী লোক পারাপার শুরু হবে।
জানা গেছে, দুটি সীমান্ত রাজশাহী বিভাগের মানুষের সবচেয়ে সুবিধাজনক এবং অর্থনৈতিকভাবেও সুবিধাজনক। এটি বন্ধ হওয়ার কারণে এ দেশের রোগীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। সোনামসজিদ স্থলবন্দরটি দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে যাত্রী চলাচল বন্ধ থাকায় আমদানিকারক-রফতানিকারকরা তাদের দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে চরম অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছিলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ার পর ভারত যাওয়ার ক্ষেত্রে সবধরনের ভিসা চালু হয়। খুলে দেওয়া হয় দুই দেশের বেশ কয়েকটি ইমিগ্রেশন রুট। কিন্তু বন্ধ থাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন রুট। গুরুত্বপূর্ণ এই রুট বন্ধ থাকায় রাজশাহী অঞ্চলের বাসিন্দাদের বহুপথ ঘুরে বিমানে অথবা বেনাপোল দিয়ে ভারতে যেতে হচ্ছিলো।
অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বৃহস্পতিবার খুলে দেওয়া হলো গুরুত্বপূর্ণ দুটি বর্ডার। এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ বর্ডাল খুলে দেওয়ায় দুই পারের যায়ায়াতকারীরা ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে আমাদের চাপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সুনির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ না থাকলেও ১২ মার্চ বৈকাল তিনটায় ভারতীয় সহকারি হাই কমিশনার মনোজ কুমার সোনা মসজিদ ইমিগ্রেশন উপস্থিত হয়ে যাত্রী চলাচলের উদ্বোধন করবেন এবং পরদিন থেকে জনসাধারণের জন্য বন্দরটি পুনরায় খুলে দেয়া হবে। অন্য একটি সুত্রের দাবী আগামী ১৫ মার্চ জনসাধারণের চলাচলের জন্য এ রুটটি খুলে দেয়া হবে।
ভারতীয় ইমিগ্রেশন পরিচালক সুরেন্দার কুমার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয় ২ দেশের যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার কথা বিবেচনা করে সে অনুযায়ী ভারতের গেদে ও সোনামসজিদের বিপরীতের ভারতের মাহদিপুর ইমিগ্রেশন সেন্টার ২টি পুনরায় চালু করা হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয় শিথিলকরণ সময়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের জারি করা স্বাস্থ্য কোভিড প্রোটোকল মেনে চলা সাপেক্ষে ইমিগ্রেশন খোলা থাকবে। সেসাথে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বাস্থ্য কর্মীকে কোভিড মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য অনুরোধ করা হয়।
সেইসাথে যারা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভিসা পেয়েছেন তাদের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক ও বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রক দ্বারা জারি করা স্বাস্থ্য প্রোটোকল সহ সমস্ত বিদেশীদের বাধ্যতামূলক বায়োমেট্রিক তালিকাভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এ ব্যাপারে সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন অফিসার এস আই জাফর ইকবাল ভারতীয় সহকারী কমিশনারের আগমনের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তারা লিখিত ভাবে এখনও কোন আদেশ না পেলেও বিভিন্ন মাধ্যমে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ ইমিগ্রেশন সেন্টারটি চালু হচ্ছে বলে জানতে পেরেছেন।
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার এ্যান্ড কমার্সের পরিচালক আব্দুল ওয়াহেদ জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের নির্বাচনের আগে তার প্রথম প্রতিস্রুতি ছিল এ এলাকার ব্যবসায়ী ও যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে সোনামসজিদ ইমিগ্রেশনটি পুনরায় চালু করা।
আর এজন্য তিনি সহ জেলার সাংসদরা চেষ্টার পর এবং ভারতের মালদা, সোনামসজিদ ও ঢাকায় একাধিক বৈঠকের পর ভারতীয় সহকারী কমিশনারের ৩ দফা ইমিগ্রেশন সেন্টার পরিদর্শন শেষে কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া গেল। এজন্য তিনি তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
এর আগে কোভিড পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হবার প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১৪ মার্চ সোনামসজিদের বিপরীতে ভারতের মাহদীপুর ও গেদে এ দুইটি ইমিগ্রেশন বন্ধ করা