নিজস্ব প্রতিবেদক

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিনা আক্তার এর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও প্রকল্পের কাজ না করে অর্থ আত্মসাতের প্রতিবাদে মানববন্ধন চলাকালীন বাঁধা দিয়েছেন বলে জানান বিক্ষুব্ধরা।

শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে বাঁধা দেওয়ায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান করিমগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরে আলম রাসেল।

তিনি বলেন, সকাল ১১ টার দিকে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচিতে হটাৎ করে ইউএনওর দেহরক্ষী আনসার বাহিনীর সদস্যরা বাঁধা দিলে আমরা সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি। আমরা মব সৃষ্টি করতে রাস্তায় নামিনি, নেমেছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে।

প্রায় তিন শতাধিক নারী পুরুষ মানববন্ধন থেকে অভিযুক্ত ইউএনওর বিচার দাবি করেন। তারা অনতিবিলম্বে তাকে করিমগঞ্জ থেকে বদলির জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করবেন বলে জানিয়েছেন।

সাবেক কাউন্সিলর সুমন মড়ল বলেন, ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর তাহমিনা আক্তার করিমগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদানের পর থেকেই উপজেলার প্রতিটি সেক্টরকে অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন। কোন নিয়ম নীতি অনুসরণ না করে টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই করেছেন কোটি টাকার কাজ। এছাড়া কাজ না করে বা অর্ধেক কাজ করেন আত্মসাত করেছেন প্রকল্পের টাকা।

উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি বজলুর রহমান বলেন, পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনে তিনি পৌর নাগরিকদের সাথে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন শুরু থেকেই। পৌরসভার নিজস্ব সিএনজি স্ট্যান্ড না থাকলেও কোন রকম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করে অবৈধভাবে ইজারা প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। জনৈক ব্যবসায়ির সাথে বছরে ৫ লাখ টাকা প্রদানের চুক্তি সম্পাদনের প্রক্রিয়া প্রায় চুড়ান্ত হওয়ার সময় সংবাদ কর্মী ও রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপে তা বন্ধ করা হয়। এরপর পৌরসভায় নিয়োগ বাণিজ্য থেকে হাতিয়েছেন প্রায় ৬০ লাখ টাকা।

সাবেক মহিলা কাউন্সিলর বেদেনা আক্তার বলেন, করিমগঞ্জ পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের
ওসমান মিয়ার বাড়ি হইতে আলমগীর হুজুরের বাড়ি পর্যন্ত ২৭৮ মিটার ড্রেইন। আশুতিয়াপাড়া মেইনরোড হইতে আবুল কাশেম এর বাড়ি হইতে বাবুলের দোকান পর্যন্ত ৩০০ মিটার ড্রেইন না করেই অর্থ লোপাট করেছেন। ১ বছর ধরে রোড লাইট বন্ধ,
পানি সংযোগ নেই, প্রায় ১২/১৩ শত টিসিবি কার্ডদারীদের মালামাল দেয়া হয় না। পৌরসভা কতৃর্ক বিভিন্ন প্রত্যায়নের ফি ২০ ও ৫০ টাকার স্থলে ২০০, ৩০০, ৫০০ ও ১০০০ করলে বাড়ছে না নাগরিক সেবা।

জুলাই অভ্যূত্থানের পর সারাদেশে ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রভাব কমলেও ইউএনওর কারণে এখনও করিমগঞ্জে তা বহাল রয়েছে। ফ্যাসিবাদী ইউপি চেয়ারম্যান ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের সাথে আঁতাত করে উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সুতারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন পরিষদের কোন মিটিং এ মাসের পর মাস উপস্থিত না হয়েও বহাল তবিয়তে চেয়ারম্যান পদে আসীন রয়েছেন কেবল অবৈধ লেনদেনের সম্পর্কের কারণে। প্রকল্পের টাকায় ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবদের প্রমোদ প্রণোদনা দিয়েছেন। চেয়ারম্যানগণ ঢাকা থেকে কক্সবাজার, কক্সবাজার থেকে ঢাকা বিমান ভ্রমণ প্যাকেজসহ তিন দিন-তিন রাত দামী রিসোর্টে থেকেছেন। সুইমিংপুলে সাঁতার কেটে জনগণকে বিজয় চিহ্ন প্রদর্শন করেছেন।

কোনো ধরনের টেন্ডার ছাড়াই সরকারি প্রকল্পের কাজ পছন্দের লোকদের মাঝে বিলি বন্টন করছেন। সরকারি বরাদ্দের ৩০-৪০ শতাংশ কমিশন বাণিজ্য, ঘুষ-দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, বেনামি একাউন্টের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা স্থানান্তর করেন। টিআর, জিআর, কাবিখা, এডিপি, এলজিএসপিসহ উপজেলা পরিষদের সরকারি বরাদ্দে নানা অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতা ও প্রকাশ্য ঘুষ বাণিজ্য করছেন।

গণমাধ্যমকর্মীরা বিভিন্ন প্রকল্পের তথ্য চেয়েও পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা করিমগঞ্জ ইউনিটের সভাপতি হাবিবুর রহমান বিপ্লব। অনিয়ম ও দুর্নীতি ঢাকতে তথ্য গোপন করছেন এবং কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতা করলে তাৎক্ষণিক বদলি করছেন।