স্টাফ রিপোর্টার
সারের ভরা মৌসুমে ডিলার সাব ডিলারগন যার যেমন ইচ্ছা তেমনি দামে সার বিক্রয় করছে সুনামগঞ্জের শাল্লায়।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫০ কেজির বস্তা ১২০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বাধ্য হয়ে সার কিনতে হয় কৃষকদের।তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাবডিলাররা দাম বাড়াচ্ছে বলে দাবি করেছেন এলাকার কৃষকরা।
শাল্লা উপজেলায় এবার ২১ হাজার ৭১৪ হেক্টর জমিতে বোর ধানের চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাওরে ১৮ হাজার ১৪ হেক্টর ও নন হাওরে ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমি রয়েছে বলে উপ সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা বিভুতোষ চৌধুরী জানান। তবে সারের দাম বৃদ্ধি কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন এমনটি শুনেন তিনি।
বোরো ধানে সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় মাঘ মাসের শুরু থেকেই। উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য চাহিদামত সার সরবরাহও নিশ্চিত করা হয়েছে দাবি করেছে কৃষি বিভাগ। চাহিদা মিটিয়ে রবিবার পর্যন্ত কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী এ উপজলায় সারের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে ।
তার পর ও প্রত্যন্ত এই এলাকায় কিছু সার বিক্রেতারা বলছে সার আসছে না, নৌকা আসে না পর্যাপ্ত সার নেই। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বস্তা প্রতি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দরে সার বিক্রয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। কৃষকরা বলেছেন, সার বিক্রেতাদের সঙ্গে উপজেলা কৃষি অফিসের লোকজন জড়িত থাকায় সাব ডিলারা আমাদের মতো কৃষকদের কোন কথাই শুনতে চায় না । তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী চড়া দামে বিক্রয় করছে সার। বাদ্য হয়ে অসহায় কৃষকগন চড়া দামেই সার কিনতে হচ্ছে।
আনন্দপুর, শাসখাই, বাজার সহ বেশ কয়েকটি বাজারে বেশ কদিন ধরে
৫০ কেজি ইউরিয়া সারের বস্তা ১৪০০ থেকে ১৪৫০ টাকায় বিক্রয় করা হচ্ছে। বিসিআইসি ডিলার পয়েন্ট থেকেই ১৩৩৭ টাকার সার ১৪৩০ টাকায় বিক্রয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকার কৃষকরা। এছাড়া ১০৫০ টাকা দামের এমওপি সার ১১৪০ টাকায় কিনেছেন বলেও দাবি তাদের ।
শাসখাই বাজারের ৫ নম্বার ওয়ার্ডে ডিলার বাদল চন্দ্র দাস বলেন আমি সাধ্যমত দাম কম রাখার চেষ্টা করি। তবে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি জানান একই ওয়ার্ল্ডে ৬ নম্বার ওয়ার্ডের ডিলার কি করে সার বিক্রি করে জানিনা।
মৌরাপুর গ্রামের কৃষক শিশু সরকার, আনন্দপুর গ্রামের কৃষক বকুল দাস, নওয়াগাঁও গ্রামের মাখন লাল দাস জানালেন, সারের দাম অধিক কিন্তু ডিলারকে দাম বেশি কেন জানতে চাইলে তারা নানা রকমের অজুহাত দেখায়। তবে কৃষি অফিসের লোকজন সহযোগীতা ব্যতিত চড়া দামে ডিলারগন সার বিক্রি করার সাহস পেতনা। কৃষকরা এসব অসৎ লোকজনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তাঁরা দাবী জানান।
শাল্লার নাইন্দা গ্রামের কৃষক প্রবোদ দাস বললেন, শাল্লা সদর, আনন্দপুর, শাসখাই ও প্রতাপপুর বাজারে ইউরিয়া সার এখন ১৪২০ থেকে ১৪৫০ টাকা বস্তার নীচে কেউ—ই বিক্রয় করছে না। এখানকার বিক্রেতাদের বেশিরভাগই সাবডিলার। তিনি জানালেন, এমওপি সার অনেক কৃষক কিনেছেন ৫০ কেজির বস্তা ১১২০ টাকায়।
এই উপজেলার রামপুরের কৃষক রেবতি দাস বললেন, আনন্দপুর বাজারের ডিলার রঞ্জিত রায়’র দোকান থেকে বৃহস্পতিবার সকালেও ৩০ টাকা কেজিতে ইউরিয়া সার কিনেছেন তিনি। সে হিসাবে বস্তার দাম হয় ১৫০০ টাকা।
নওয়াগাঁও গ্রামের বড় কৃষক মাখন লাল দাস অবশ্য জানিয়েছেন, প্রথমে আনন্দপুর হতে ৫ বস্তা ইউরিয়া সার কিনেছি ১৪০০ টাকা করে। ৪ বস্তা এমওপি সার কিনেছি ১১০০ টাকা করে। দাম বেশি হওয়ায় পরে ভেড়াডহরের বিসিআইসি ডিলার রঞ্জিত কুমার বৈষ্ণবের কাছ থেকে ৩০ বস্তা সার ১৩৪০ টাকা করে কিনেছেন। তবে তিনি বলেন সকল ডিলারগন লাল সালু কাপড়ে সারের মূল্য লিখে টঙ্গিয়ে দেয়ার কথা কিন্তু কোন ডিলার সেই কাজটি করছেনা। ফলে সারের সঠিক দাক কত কৃষকরা জানতেই পারছেনা। তাই বাদ্য হয়েই অধিক দামে সার কিনছে কৃষকরা।
শাল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রবীণ রাজনীতিবিদ কৃষক আব্দুস ছাত্তার জানিয়েছেন, শাল্লায় ৫০ কেজির ইউরিয়া সার ১৪২০ টাকা বস্তা বিক্রয় হতে তিনিও শুনেছেন।
জেলা সিপিবি’র সভাপতি অ্যাড. এনাম আহমদ বললেন, কেবল শাল্লায় নয় জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ—পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানিয়েছেন, সারের সরবরাহের কোন কমতি নেই। কেউ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি বা এ ধরণের প্রচার করার অপচেষ্টা করলে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সার অতিরিক্ত দামে বিক্রয়েরও কোন সুযোগ নেই। ডিলার পয়েন্টে লাল সালু টাঙানো হয়েছে। লাল সালু যেখানে টাঙানো সেখানে কোন কৃষক যাবার পর দাম বেশি চাইলে, ওই ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী কৃষি বিভাগের কর্মীদের এই বিষয়ে এই সময়ে আরও বেশি সতর্ক করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।