নূর আহাম্মদ পলাশ
কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে বোরো মৌসুমের শুরুতেই তীব্র সার সংকট, কালোবাজারির অভিযোগ
কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে বোরো মৌসুমের শুরুতেই ভয়াবহ সার সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদার তুলনায় প্রায় অর্ধেক সার বরাদ্দ পাওয়ায় বোরো ও ভুট্টা আবাদ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। প্রয়োজনীয় ইউরিয়া ও অন্যান্য সার না পেয়ে অনেক কৃষক চড়া দামে বাজার থেকে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন, ফলে উৎপাদন খরচ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, বিসিআইসি ও বিআরডিসি সংশ্লিষ্ট কিছু ডিলার কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করছে। একই সঙ্গে বিএডিসির উন্নত মানের ধান বীজেরও তীব্র সংকট রয়েছে, যা হাওরের প্রধান ফসল বোরো উৎপাদনকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
সময়মতো সার ও বীজ না পাওয়ায় জমি প্রস্তুত ও চারা রোপণে বিলম্ব হচ্ছে। এতে চলতি মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
এদিকে, সার সংকটের মধ্যেই মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোর ইউনিয়নে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে সার পাচারের একটি ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাত আনুমানিক ১১টার দিকে একটি ব্রিজের নিচে দীর্ঘক্ষণ একটি মালবোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে ট্রাকচালক চাকার বেয়ারিং ভেঙে যাওয়ার কথা বললেও ট্রাকে কী মাল রয়েছে বা কোথায় নেওয়া হচ্ছে এসব প্রশ্নের কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি। পরে ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবতাব উদ্দিন ভূয়াকে ঘটনাস্থলে ডাকা হলে তাকে দেখে ট্রাকচালক ও তার সহযোগী পালিয়ে যায়।
স্থানীয়দের সহায়তায় ট্রাকের ত্রিপল খুলে দেখা যায়, এতে ৮০ বস্তা সরকারি সার রয়েছে। কেওয়ারজোর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাসুদ মিয়া অভিযোগ করে বলেন, এলাকায় ডিলার থাকা সত্ত্বেও কৃষকরা নিয়মিত সার পায় না তাহলে এসব সার কোথায় যাচ্ছে, সেটাই বড় প্রশ্ন।
সাবেক চেয়ারম্যান আবতাব উদ্দিন ভূয়া জানান, তিনি বিষয়টি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। পরে কৃষি কর্মকর্তা ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সারগুলো জব্দ করে একটি দোকানে সংরক্ষণ করেন। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, অজ্ঞাত কারণে ট্রাক, চালক ও সহযোগীদের জব্দ না করেই ছেড়ে দেওয়া হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওয়াবাইদুল ইসলাম খান অপু বলেন, মালিক শনাক্ত না হওয়ায় সারগুলো জব্দ করা হয়েছে। উপজেলা সার বণ্টন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসব সার সরকার নির্ধারিত মূল্যে প্রান্তিক কৃষকদের কাছে বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হবে।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লিয়াকত আলী জানান, কৃষি কর্মকর্তা ও ইউএনওর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম আব্দুল্লাহ বিন শফিক বলেন, জব্দকৃত সার ৪০ জন প্রান্তিক কৃষকের মাঝে সরকারি মূল্যে বিতরণ করা হবে। তিনি ট্রাক ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
স্থানীয় কৃষকদের দাবি, এটি একটি সংঘবদ্ধ কালোবাজারি সিন্ডিকেটের কাজ। তারা অবিলম্বে দোষীদের আইনের আওতায় এনে হাওরাঞ্চলের কৃষকদের ন্যায্যমূল্যে সার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক- খায়রুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক - সোহেল রানা
সম্পাদকীয় কার্যালয়- ৫২২ আইনুল্লাহ স্কুল রোড, স্বল্পমারিয়া, বএিশ, কিশোরগঞ্জ।
০১৯১২৫৫০৭২৭,০১৭২৪৫৭৪২১৭
Copyright © 2025 কালের নতুন সংবাদ. All rights reserved.