সাজন আহম্মেদ পাপন
কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্পের বাউন্ডারিতে থাকা ৪ শতাধিক রডের গ্রিল উধাও হয়ে গেছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকা। এতো গ্রিল উধাও হয়ে যাওয়ার পরও নিশ্চুপ রয়েছে কতৃপক্ষ। সচেতন মহলের অভিযোগ, শুধুমাত্র প্রশাসনের উদাসীনতার জন্যই এমন ঘটনা ঘটেছে।
সরজমিনে নরসুন্দা সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্পের কাচারি বাজার ব্রিজ থেকে বড়বাজার মাছমহল ব্রিজ পর্যন্ত দেখা যায় নদের দুপাশের প্রায় ৪ শতাধিক বাউন্ডারিতে থাকা গ্রিল উধাও হয়ে গেছে। জানা গেছে, ২০১৪ সালে উদ্যোগ নেওয়া নরসুন্দা সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১১০ কোটি টাকা। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভা যৌথভাবে কাজটি করে। প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০১৬ সালে। প্রকল্পের টাকা নিয়েও লুটপাটের অভিযোগ ছিল।
অন্যদিকে নরসুন্দা নদের পাড়ের ওয়েক ওয়েতে অধিকাংশ সড়কবাতি না থাকায় সন্ধ্যার পর এখানে দেখা যায় ভুতুড়ে অন্ধকার। আলো না থাকার সুযোগে ছিনতাই হচ্ছে হরহামেশা। মাদকের আখড়া হিসেবেও ইতিমধ্যে পরিচিতি লাভ করেছে স্থানটি। সন্ধ্যার পর লোকজন ভয়ে এ ওয়াকওয়ে দিয়ে যাতায়াত করেন না।
পৌরবাসী খায়রুল, ফায়জুল, জুয়েল, রনি, আজিজুল রিয়াদ, সাকিব বলেন, কিশোরগঞ্জ পৌর কতৃপক্ষের উদাসীনতা ও পৌর কর্মচারীদের কর্মক্ষেত্রে অবহেলার কারণে সরকারি সম্পদ উধাও হয়ে গেছে। এটাকে আমরা উধাও বলবো না। এটাকে সুস্পষ্ট চুরি বলে আখ্যায়িত করব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি না থাকায় চোরদের একটি সিন্ডিকেট নির্ভয়ে এসব চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিশোরগঞ্জ পৌরসভার একাধিক কর্মকর্তা জানান, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকেই এসব গ্রিল চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা। পৌর কতৃপক্ষের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও অবগত করেনি। এর কারণ হলো নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করে প্রকৌশলীরা নিজেদের পকেট ভারি করতে পারবে।
কিশোরগঞ্জ পৌরসভার সচিব সৈয়দ শফিকুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। এ বিষয়ে আমি কোনো কিছু জানি না।
কিশোরগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটি এলজিইডি বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু আমাদের বুঝিয়ে দেয়নি। আমি সরজমিনে পরিদর্শন করতে যাবো। তারপর বিষয়টি নিয়ে আমাদের পৌর প্রশাসকের সাথে কথা বলবো।
কিশোরগঞ্জ এলজিইডি'র নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ এনায়েত কবির বলেন, প্রকল্পটি এলজিইডি বাস্তবায়ন করে। পরে তা কিশোরগঞ্জ পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করা হয়। আমাদের দায়িত্ব ছিলো বাস্তবায়ন করে দেয়ার আমরা তা করেছি। এই প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদের।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণেই নেশাগ্রস্ত ছেলেরা বাউন্ডারিতে থাকা গ্রিলগুলো চুরি করে নিয়ে যায়। কারও পর্যবেক্ষণ নেই, কেউ দেখেও দেখে না। দায়িত্ব পালনে পৌরসভা উদাসীন। এখানে সড়কবাতি নেই। পাহারাদারও নেই। যে কারণে এগুলো চুরি হয়ে যাচ্ছে। আমাদের জন্য তা খুব দুঃখজনক ব্যাপার।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম ভূঞা বলেন, আমি নতুন এসেছি এ থানায় । আপনার মাধ্যমে বিষয়টি শুনলাম। এ বিষয়ে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে কথা বলতে কিশোরগঞ্জের ডিডিএলজি ও পৌর প্রশাসক জেবুন নাহার শাম্মীর মোবাইল ফোনে বার বার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে তাঁর কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্পাদক ও প্রকাশক- খায়রুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক - সোহেল রানা
সম্পাদকীয় কার্যালয়- ৫২২ আইনুল্লাহ স্কুল রোড, স্বল্পমারিয়া, বএিশ, কিশোরগঞ্জ।
০১৯১২৫৫০৭২৭,০১৭২৪৫৭৪২১৭
Copyright © 2025 কালের নতুন সংবাদ. All rights reserved.