অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগম
মানব জাতি সৃস্টির উষা লগ্ন থেকেই নারী পুরুষ উভয়েই যৌন ক্ষুধা নিবারণ করে আসছে যে কোন নারীকে ধর্ষণ করে। আদি কালে সামাজিক বা রাস্ট্রীয় কোন বিধি বিধান বা পারিবারিক বন্ধন ছিলো না। যে কোন পুরুষ যে কোন নারীকে ধর্ষণ করতে পারতো।এ কারণেই নারীর গর্ভের সন্তানটি কোন পুরুষের বীর্ষ থেকে জন্ম নিয়েছে তা নির্ধারন করা যেতো না।
সবচেয়ে মুশকিল ছিলো –সন্তানের পিতা কে, পৈতৃক সম্পতির মালিকানা কে হবে। এই জটিলতা েড়ানোর জন্য অনেক ভেবে চিন্তে পুরুষকে করা হয় অর্থ সম্পদহীন। নারীরা পায় সম্পদের মালিকানা। নারীর গর্ভে যে কয়টা সন্তান জন্ম নিতো,সবাই মায়ের সম্পদ ভাগাভাগি করে নিতো। তখন থেকেই চালু হয় মাতৃন্ত্রান্তিক পারিবারিক জীবন বিধি।
তখন থেকে রাস্ট্রীয়,পারিবারিক, সামাজিক সব কাজই নারীর আদেশে নির্দেশে পরিচালিত হতো।নারীর হুংকারে পুরুষ চলতো বসতো। পুরুষরা ছিলো আয় রোজগারের বাহক। কিন্তু সুচতুর পুরুষরা নারীর এই দন্ড মুন্ডের শাসন বেশী দিন মানতে চায়নি। তারা উল্টে দেয় নারীতান্ত্রান্তিক বিধি বিধান।প্রবতর্ন করে পুরুষতান্ত্রীক সমাজ ব্যবস্থা।তখন থেকেই নারীর ভাগ্যে নেমে আসে অত্যাচার, নির্যাতন,ধর্ষন,অবিচার, অবহেলা ইত্যাদি দুর্যোগের ঘন ঘটা।
নারীকে পৌঁছে দেয় চৌকাঠের আড়ালে,করে গৃহ বন্দি,সূর্য দেখাও নিযিদ্ধ হয়ে যায়,হয় অধিকার হারা।প্রগতিশীল আমরা বলছি — ক্ষমা করো নারী। তোমরা এখন ধর্ষন নয় গণ ধষর্ণের শিকার হও। মুক্ত বাতাসে রাস্তা ঘাটে, বাসে চলা ফেরা করতে পারো না স্বাধীন ভাবে।স্বামী কে বেঁধে রেখে, পেটের সন্তানের সামনেও ধর্ষণ করে। নিজের মা এবং আপন বোন ছাড়া কেউ নিরাপদ নয় ধর্ষকের কুদৃষ্টি বা লালসা থেকে। সর্ব উচ্চ বিদ্যাপিঠ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বিবদ্যালয়ে দেখেছি শততম ধর্ষণ করার পর ধর্ষকে মিস্টি বিতরণ করে উল্লাস নৃত্য করতে। ছি এমন ছেলে জন্ম দিয়েছে কে? এই ধর্ষকের লিঙ্গ কর্তনের বিচার হলো না কেন?
মুফতি মামুনুর রশিদ কাসেমী এর ভাষ্য অনুযায়ী যে কোন মেয়ের জন্মের পর পরই বিয়ে দেয়া যায়।পাঠক আমাদের দেশের বিধি অনুসারে বিষয়টি বলেন — How much funy. তিনি আরো বলেন — মেয়েদের রক্ত স্রাব হওয়ার সাথে সাথে বিয়ে দেয়া জায়েজ।আমাদের দেশে মেয়েকে বিয়ে দিতে হলে ১৮ বছরের উপরে রয়স হতে হবে।কাসেমি সাহেব আরো বলেন -বিয়ের ব্যাপারে ছেলে আর মেয়ের বয়সের ব্যবধান বেশী হওয়াটা কোন দোষের ব্যাপার নয়। ৫০ বছরের বৃদ্ধ ৭/৮ বছরের মেযেকে বিয়ে করতে পারবে।
আজ কাল এই সমস্ত কারণেই চারিদিকে ধর্ষণের মহামারি বা মহোৎসব চলছে। এ কারণেই কোন বাবাই ধর্ষকের হাত থেকে মেয়েকে রক্ষা করতে পারছে না।
আমরা দুঃখিত ও অপারগ, না মা, না মেয়ে তোমাদেরকে ধর্ষণের মত নির্দয় অপরাধ থেকে রক্ষা করতে পারছি না। আদি কালে যুদ্ধে পরাজিত হলে বিজিতরা পরাজিতদের সুন্দরী মেয়েদেরকে ধরে নিয়ে আসতো ধর্ষণ কাজে ব্যবহার করার জন্য।রাজা বাদশরা ছিলো বড় ধর্ষক। তাদের বাড়ীতে ছিলো সুন্দরী মেয়েদেরকে বাঈজীশলায় বন্দি করে রাখার সুব্যবস্থা।যখন ইচ্ছা তাদেরকে পতিতা হিসেবে ধর্ষণ করতো।
আমরা ১৯৭১ এ দেখেছি কি জগন্য ভাবে মেয়েরা ধর্ষিত হয়েছে।দুঃখিত আমরা, যুগে যুগে মা বোন তোমাদেরকে ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারছি না।যতই সভ্যতা উন্নত হচ্ছে ততই নানা কায়কায় এর প্রবণতা বাড়ছে। আজকাল শুধু ধর্ষণ করছে না, ধর্ষনের পর গলা টিপে বা আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলছে। হায় জগন্যতম নিষ্ঠুরতা। এই বিষয়টি নিয়ে সবার ভাবা উচিৎ।প্রতিটা মেয়েই তো আমাদের কারো না কারো রক্তে গড়া নিষ্পাপ মানুষ।
বৈধ ও অবৈধ দুই ধরনের ধর্ষণই মানব জীবনকে করে পরিতৃপ্ত। প্রথম মানব সন্তান আদম জন্মের পর উদভ্রান্তের মত চলাফেরা করছিলো।তার শান্তির জন্যই হাওয়াকে প্রেরণ করা হয়।অতর যৌন সঙ্গমের পর পৃথিবীর অমিয় স্বাধ উপলদ্ধি করে।
বৈবাহিক একটা বিধি প্রচলিত রয়েছে। একটা মেয়েকে একটা ছেলের সাথে আত্মীয় স্বজন মহাধুম ধামের সাথে বিয়ে দেয় ধর্মীয় বিধি মোতাবেক –এটাকেই বলে বৈধ বিয়ে ও বৈধ ধর্ষণ। কেউ যদি জোড় করে কোন নারীকে ধর্ষণ করে,তবে তা হবে অবৈধ ও দন্ডনীয় অপরাধ।
লেখকঃ
কবি, প্রধান উপদেষ্ঠা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা।