সঞ্জিত চন্দ্র শীল
হোসেনপুর( কিশোরগঞ্জ): আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে ছুরি, চাপাতি,দা,নারিকেল কোরানিসহ অন্যান্য দেশীয় লোহার জিনিসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় কামারেরা। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে রাত দিন এক করে এসব হাতিয়ার তৈরিতে তারা নির্ঘুম রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন।
জানা যায়, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে দা, চাপাতি ও ছুড়ির চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ফলে, কামারদের কাজের ব্যস্ততা এতোই বেড়ে যায় যে, তাদের যেন দম ফেলানোর সময় থাকে না। স্থানীয় কর্মকার মোঃ হেলাল, আল-আমিনসহ অনেকেই জানান,বছরের অন্য সময়ের চেয়ে কোরবানী ঈদে তাদের আয় রোজগারও হয় বেশি। প্রতিটি উন্নত মানের ধারালো দা বিক্রয় হয় ৩০০-৫০০টাকা, কোরবানীর ছুড়ি ৫০০-৮০০ টাকা, পশুর হাড় কাটার জন্য চাপাতি ২৫০-৬০০ টাকা, চামড়া ছাড়ানোর চাকু ১৫০-২৫০ টাকা, নারিকেল কোরানি ১০০-২০০ টাকা, মাংস কাটার বটি ২৫০-৩০০ টাকা, আরো অন্যান্য কৃষি উপকরণে ধানকাটার কাঁচি, বটি ,লাঙ্গলের ফলাসহ অন্যান্য তৈজসপত্রও ভালো দামে বিক্রয় হয়।
সরেজমিনে দেখা যায় ,উপজেলার জিনারী ইউনিয়নের কামারপাড়া, হাজিপুর বাজার, নতুন বাজার, পোস্ট অফিস মোড়, রামপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের হাট বাজারে এখন পুরোদমে পশু জবাইয়ের ছুরি, চামড়া ছাড়ানোর চাকু, নারিকেল কোরানি, মাংস কাটার চাপাতিসহ বিভিন্ন লোহার তৈরি জিনিসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছেন কামারেরা। সুত্রমতে,হোসেনপুর উপজেলার আড়াইবাড়িয়া ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক কর্মকার সরাসরি নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের নিখুঁত কাজের সুনামের জন্য পাশের ময়মনসিংহের গফরগাঁও,নান্দাইল এবং পাকুন্দিয়ার লোকজনও ছুটে আসেন হোসেনপুর। কেননা তাদের পেশাগত আচরণও মুগ্ধ করে সবাইকে। শত পরিশ্রমের মাঝেও হাসি মুখে কথা বলে ক্রেতাদের মন জয় করার কারণে অনেকেই খুশি মনে তাদের কিছু বাড়তি টাকা দিতেও দ্বিধাবোধ করেন না। উপজেলার আড়াইবাড়ীয়া গ্রামের কয়েকজন কর্মকার জানান, এমনিতে সারা বছর কাজকর্ম অনেক কম থাকে। এর মধ্যে কয়দিন পর পর লোহার দাম বেড়ে যায়। এতে তারা বেকায়দায় পড়েন। ভালো চালান থাকলে আগে থেকে লোহা কিনে রাখতে পারলে ভালো লাভ পাওয়া যেতো বলেও বেশ কয়েকজন জানান। পশু জবাই থেকে শুরু করে মাংস তৈরির কাজে প্রয়োজনীয় ওইসব হাতিয়ার চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। তাই ঈদের পূর্বেই কোরবানির পশু জবাই কাজের হাতিয়ার সংগ্রহে কামারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন স্থানীয় কসাই, কৃষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ। এ সময় দ্বীপেশ্বর পোস্ট অফিসের মোড়ে কামার প্রদীপ চন্দ্রও সবুজ, হাজিপুর কামার পাড়ার বাসিন্দা বরূন, রামপুর বাজারের মানিকসহ অনেকেই জানান, ঈদে দা, চাপাতিওছুড়ির ব্যাপক চাহিদা থাকায় আমাদের কাজের ও ব্যস্ততা বেশি। তবে বাজারে আমদানিকৃত হাতিয়ার আসায় আমাদের তৈরি হাতিয়ারের চাহিদা বহুগুণে কমে গেছে। ফলে পূর্বপুরুষদের এই পেশা ধরে রাখা দুষ্কর হবে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
সম্পাদক ও প্রকাশক- খায়রুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক - সোহেল রানা
সম্পাদকীয় কার্যালয়- ৫২২ আইনুল্লাহ স্কুল রোড, স্বল্পমারিয়া, বএিশ, কিশোরগঞ্জ।
০১৯১২৫৫০৭২৭,০১৭২৪৫৭৪২১৭
Copyright © 2025 কালের নতুন সংবাদ. All rights reserved.