1. admin2@kalernatunsangbad.com : admin : Admin
  2. admin@kalernatunsangbad.com : Khairul Islam :
বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১১:০৬ অপরাহ্ন

আমি কি ভাবে লেখক হয়ে ওঠলাম?

  • প্রকাশ কাল বুধবার, ২৮ মে, ২০২৫
  • ১৬ বার পড়েছে

অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগম

সত্যিই তো ,কি ভাবে আমি লেখক হয়ে ওঠলাম। কোন দিন তো স্বপ্নেও ভাবিনি, আমি লেখক হবো।আমি কি প্রকৃত অর্থে লেখক হতে পেরেছি।নিজেকে প্রশ্ন করে সে উত্তরও খোঁজে পাই না। কেউ কেউ করে আমাকে নিয়ে মশকড়া। রসায়ন বিঞ্জানে অনার্স, মাস্টারস (জাবি) করে, বাংলায় লেখক হওয়ার দুঃসাহস দেখায়। শিশু শিক্ষায় পিএইচ.ডি (জাবি) করার পরও বাংলার বানান বিভ্রাট থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। সে আবার লেখক বলে নিজেকে জাহির করে।তারপরও আমার লজ্জা হয় না, লিখতে থাকি।

সেই ২০০০ সাল থেকে শুরু করে কাগজ কলম পিষে ২০২৫ এ এসে দাঁড়িয়েছি। জন্ম দিয়েছি ২৩ টি কাব্য,প্রন্ধ,গল্প গ্রন্থের,গবেষণা পত্রও যুক্ত করেছি। জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রায় ২০০ টি বিশ্লেষণ ধর্মী প্রবন্ধ আমাকে সম্পৃদ্ধ করেছে। কলমকে করেছে গতিশীল।টক ঝাল মিস্টিতে ঠাসা বহু স্বাদের লেখা যুক্ত করেছে সাহিত্য জগতে।

“আটই ফাগুন” ছিলো আমার প্রথম একটি কবিতা।এরপর গদ্য, ছড়া, পদ্য,প্রবন্ধ,গবেষনা পত্র,ইত্যাদি কত রঙেই না সাজিয়েছি সাহিত্য ভান্ডারকে।

অজ পাড়া গায়ে জন্ম আমার। বিরুপ পরিবেশ ও দারিদ্রতার সাথে লড়াই করে বেড়ে ওঠা। সাংস্কৃতিক কোন পরিমন্ডলই ছিল না চারপাশে। হাতে তুলে কলম কবি সত্ত্বার জন্ম হবে হৃদয়ে, তা কোনদিন কল্পনাও করিনি।

শিশু বয়সে শুনেছি―আয় আয় চাঁদ মামা, ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো, ঐ দেখা যায় তাল গাছ, ঐ আমাদের গাঁও, ছোট নদী―চলে বাঁকে বাঁকে―ইত্যাদি আরো কতো কবিতার পক্তি। নিজেও গায়ের পথে প্রান্তরে দৌড়াদৌড়ি করেছি আর মুখে মুখে এই পক্তিগুলি উচ্চারণ করে অফুরন্ত আনন্দ অনুভব করেছি।
বাল্য পাঠে পড়েছি―সদা সত্য কথা বলিবে, সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেন ভালোভাবে চলি; আরো কতো নীতি বাণী।

মেয়ে শিশু হলেও , সৎ পথে চলা, সত্য কথা বলার চরিত্রটি আত্মস্থ করেছিলাম। বড় লোক ধান্ধাবাজদের বিলাসিতা দেখে মনটা খাটো হয়ে যেতো। বাবার পরিশ্রম, বুদ্ধি,মেধা ,আর মায়ের জীবন যুদ্ধ দেখে নিজেও মর্মব্যথায় দগ্ধ হতাম। দারিদ্রতার অন্ধকার কুটুরি থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখতাম বই খাতা ও কলম যুদ্ধে। ব্যর্থ হইনি। সাজিয়েছি সমগ্র পরিবারটিকে নামী-দামী ফুলদানীর ফুল সজ্জায়। হাতে পায়ে রাখিনি কাদার গন্ধ, গরিবী দুঃখের অশান্তি।

আমি প্রসঙ্গ ক্রমে―ছোটবেলা থেকেই সকল কাজে ছিলাম পারদর্শি। কিশোরগঞ্জ সরর্যূবালা সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে যখন পড়ি, স্কুল কতৃপক্ষ দেয়াল পত্রিকা প্রকাশের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে লেখা আহ্বান করে। একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষ্যে প্রকাশিত ম্যাগাজিনটির জন্য “আটই ফাগুন” শিরোনামে একটি কবিতা লিখে ছিলাস, যা ঐ দেয়াল পত্রিকায় জায়গা করে নিয়েছিল। সেটি আমার বা কারো সংগ্রহে রাখার প্রয়োজন বোধ করিনি। সেই প্রথম জীবনে কবিতা লিখার অনুভূতি আজো আমাকে পুলকিত করে।

পড়াশুনার মাঠে গোল দিতে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সিঁড়ি পাড়ি দেই। অবুঝ বয়সে জড়িয়ে পড়ি প্রেমে অতঃপর বিয়ে। ছয় মাসের শিশু সন্তান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফেকেট মাথায় নিয়ে সংসারে প্রবেশ করি। অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টা করেও বিসিএস পরীক্ষায় কৃর্থকার্য হতে পারিনি। থেমে যাইনি বেসরকারী কলেজে বিনা বেতনে চাকুরি করতে থাকি। অবসর সময়ের ফাঁকে ফাঁকে কলম পিষে কিছু লেখার চেষ্টা করি।

বন্দি হই সংসার জীবনের জটিল কঠিন যুদ্ধের বেড়া জালে। নিজেকে পোড়াই, আবার হাড়ি পাতিল সাজাই―এ ভাবেই স্বামীর সংসারে দুইটি ছেলে সন্তান কে নিয়ে নির্বাক চাঁদের মত হয়ে যাই একাকী পাথর মূর্তি।। মনের টুকরো কথা এখানে ওখানে ডায়রীতে সাজাতে থাকি। চোখ তুলে আকাশ দেখি আর সংসারের কুট কৌশলের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকি। নারী জীবনের অবমূল্যায়ন, অসহায়ত্ব কাঁধে তুলে মনের ঘরে কালো অধ্যায় রচনা করি।নারীর পক্ষে কিছু বলার ও লিখার জন্য নিজেকে তৈরী করি।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪র্থ/৫ম শ্রেণীতে যখন পড়ি পাশের বাড়ির ভাবীকে দেখেছি―অমানুষিক ভাবে অত্যাচারিত হতে। পান থেকে চুন খুসলেই পিঠে ওঠে আসতো ঝাড়ু–, লাঠি। পিঠুনী খেয়ে পায়খানা―প্রস্রাবে ডুবে যেতো। কেউ এগিয়ে আসতো না। তার মাথায় লম্বা চু’ল ছিলো । চু’ল বেধে বাঁশে ঝুলিয়ে লাঠি দিয়ে পিঠাতো। সে দৃশ্য মনে হলে আজো চোখ ভরে য়ায জলে। তখন থেকেই পুরুষবিদ্ধেষী মনোভাব মনের ঘরে দানা বাঁধতে শুরু করে।

এতো যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে,ভাবী পেটের সন্তান ফেলে রেখে চলে যায় বাবার বাড়ি। আর ফিরে আসেনি। ছোট বেলায় বুঝতে না পারলেও সংসার জীবনে প্রবেশ করে হাড়ে হাড়ে টের পাই না না দুর্ভুগের বিড়ম্বনা। অতঃপর নারীবাদী কলম যুদ্ধে নামি।

বাংলাদেশের প্রত্যেক নারীর ভাগ্যেই প্রায় একই রকমের দুর্দশার তিলক যুক্ত। সংসারের নানা রঙে সিক্ত হই, সোনালী স্বপ্ন উড়াই। দুইটি ছেলে সন্তানকে বুকে তুলে শান্তির জগৎ খুঁজতে থাকি।

চারদিকের নারী নির্যাতনের অসহনীর দুশ্চিন্তার ক্রিয়া, প্রতিক্রিয়া ও প্রগতির তথ্য চিত্র দেখি ও দুঃখে কষ্টে রক্তাক্ত হই। কার কাছে কি বলবো? পূর্ণিমা রাতে চাঁদের সাথে কথা কই একাকী, মনের ঘরে জমা করি না না জঞ্জাল। বেশী কষ্ট হলে বাতরুমে দাঁড়িয়ে চোখের জল পানিতে মিশিয়ে দেই। কখনও কষ্টগুলো ঠাণ্ডা পানিতে মিশিয়ে গলায় ঢেলে হজম করে ফেলি। নিজেকে তৈরী করি কলম ষোদ্ধা হিসেবে।ধর্ষন,নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী দীক্ষা নেই।গদ্যে,পদ্যে,ছড়ায়, গল্পে তু্লে ধরি মর্মব্যথা।

এমনি এক ক্রান্তিকালে নারী লেখকের একটি ছড়ার চটি বই আমার হাতে ওঠে আসে। ছড়া লেখক হলুদ বাটনার প্যাচাল সেদ্ধ করে ছড়ার বুননে।সেখান থেকেই কলম পিষার যাত্রা শুরু করি।ছোট ছোট কথার মালা সাজাই।ছন্দ তালের অভিঞ্জতা না থাকলেও সুখ দুঃখের উত্তাপ ঢালতে থাকি কল্প কথায়।

লিখতে লিখতে না কি লেখক হওয়া যায়। অবচেতন মনেই কবিতার পর প্রবন্ধ লেখায় হাত দেই।” বিঞ্জানের এ যুগেও সত্য মিথ্যার দুষ্ট চক্র ” এই শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখে ফেলি। প্রবন্ধটি ৮ অক্টোম্বর ২০০০ সালে দৈনিক খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

এরপর আমাকে দাবিয়ে রাখে কে? দৈনিক সংবাদ,দৈনিকজনকন্ঠ,দৈনিক সমকাল,দৈনিক মুক্তকন্ঠ,দৈনিক বাংলা বাজার ইত্যাদি জাতীয় দৈনিকে প্রতি সপ্তাহেই ৩/৪ টা কলাম প্রকাশিত হতে থাকে।

শেয়ার করুন

অন্যান্য সংবাদসমূহ


প্রযুক্তি সহায়তায় BTMAXHOST