আবু সায়েম মোহাম্মদ সা’-আদাত উল করীম
নানাবিধ দুর্নীতির অভিযোগে জামালপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আনিসুজ্জামানের ( গামা) বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ জামালপুর জেলা বারের আইনজীবীগণ। গত ৩১ নভেম্বর তার সাথে নিয়োগ পাওয়া ৫০ জন পিপি এপিপি অপসারণ চেয়ে আইন মন্ত্রনালয়েও আবেদন দিয়েছেন। বিএনপি সমর্থিত এই পিপিকে জাতীয়তাবাদি আইনজীবি ফোরাম থেকে সরিয়ে দিতে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অভিযোগ জানানো হয়েছে। আদালতের ৫০ জন আইনজীবী পরিস্কার ভাবে জানিয়েছেন তাঁরা আর বর্তমান পিপির সাথে কাজ করবেন না।
৬মে মঙ্গলবার বেলা ৩টায় জামালপুর জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনের দ্বিতীয় তলায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জেলা দায়রা ও চিফ জুডিশিয়াল আদালতের আইনজীবীরা৷
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জিপি এডভোকেট আলহাজ্ব এস এম তৌফিকুল ইসলাম বাদশা।
বক্তব্যে তিনি বলেন, আনিসুজ্জামান পিপি নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে দুর্নীতি ও বিভিন্ন জায়গায় পদের অপব্যবহার করে আসছে। সম্প্রতি বকশীগঞ্জ থানার ওসির সাথে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কথপোকথন ভাইরাল হয়। যেখানে আইনজীবীদের মান ক্ষুন্ন হয়।
গত ১৩ নভেম্বর পিপি হিসাবে যোগদানের পর থেকে জামালপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আনিসুজ্জামানের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারের দোসর আওয়ামীলীগ দলীয় আসামীগণদের জামিন করে দেওযার চুক্তি এবং বিভিন্ন থানায় মামলা নেয়া ও না নেয়া কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আদালতের ৫০ জন আইন কর্মকর্তা এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতৃবৃন্দ অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, আনিসুজ্জামান পিপি হিসাবে যোগদানের পর থেকে স্বৈরাচারের দোসর আওয়ামী লীগ দলীয় আসামীদের জামিন করে দেওয়ার জন্য চুক্তি নেন। তার জুনিয়র ও বন্ধু আইনজীবীদের মাধ্যমে জামিনের আবেদন করিয়ে থাকেন। কোর্টে আসামীদের বিরুদ্ধে শুনানী চলাকালে আসামীর পক্ষের আইনজীবীকে জামিনের বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করার জন্য কানে কানে পরামর্শ দেন। যা উপস্থিত আইনজীবীরা প্রত্যক্ষ করেন।আদালতের বিজ্ঞ বিচারক তাকে রাষ্ট্রপক্ষে তার বক্তব্য উপস্থাপন করার জন্য বললে সে নমনীয়তা প্রকাশ করেন।
তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা নেয়া এবং না নেয়ার সুপারিশের অভিযোগ রয়েছে। যা পিপি পদে থেকে সম্পূর্ণ বেমানান।
তিনি গত ১মে একটি মামলা রেকর্ড করার জন্য বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার(ওসি) সাথে আপত্তিকর ভাষায় কথাবার্তা বলেন। এক পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাকে যে ভাষা সম্বাোধন করেছেন তাতে আদালতে সকল আইনজীবীদের সম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে।
পিপি আনিসুজ্জামানের আচার আচরণ, কথাবার্তা আপত্তিকর। সে প্রায় সময় সিনিয়র আইনজীবীদের সর্ম্পকে বিরূপ ও অসৌজন্যমূলক মন্তব্য করেন। এছাড়া সহকারি পাবলিক প্রসিকিউটরদের তুচ্ছ তাচ্ছিল করেন।
এই সব অভিযোগে আনিসুজ্জামানকে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) পদে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন বিধায় তাকে এই পদ থেকে অপসারণের দাবি করা হয়েছে।
সেসব কারণে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর ৪ মে তাকে অপসারণ চেয়ে আবেদন করেছেন আইন কর্মকর্তারা। এছাড়াও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকেও অব্যাহতি চেয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আবেদন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এডভোকেট গোলাম নবী এবং জেলা আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রিশাদ রেজওয়ান।
তবে তার বিরুদ্ধে অনাস্থার বিষয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আনিসুজ্জামান বলেন, তারা একটা হিংসা থেকে এই কার্যক্রম চালাচ্ছে। আপনারা ইতিমধ্যেই দেখেছেন জামালপুর জেলা দায়রা জজ এবং চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রট আদালতে পিপি এপিপি তালিকা প্রকাশ হয়েছে। প্রকাশ হবার পর দেখা যায়, জামালপুর বার অঙ্গনে ১০ থেকে ১৫ জন আইনজীবী সিনিয়র আইনজীবী বারের সভাপতি, সাধারন সম্পাদক, জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ তারা একটি মানববন্ধন করে আমাকে পিপি মেনে নিতে চায় না।
তার বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগের নেতাদের জামিনের বিষয়ে বলেন, এধরণের কথা মিথ্যা। বরং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এডভোকেট গোলাম নবী মির্জা আজমের সাথে মামলার ৪ নাম্বার আসামী গ্রুপ ক্যাপ্টেন শফিকুল ইসলামের পক্ষ নিয়ে তিনি নিজে জামিন শুনানী করেছেন। তার তো পক্ষে নেয়ার কথা না। এছাড়াও একজন এপিপি তারা উকালতনামায় স্বাক্ষর করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী জামিন করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমি এখন অফিস থেকে শুরু করে সবজাযগা নিরাপত্তায়হীনতায় ভুগছি। আমি ডিসি এসপি কে বলেছি আমাকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য।