লেখক: মাওলানা: সুলাইমান আহমদ
ভূমিকা:
কোরবানী ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা হিজরী বছরের যুলহিজ মাসে আদায় করা হয়। এটি হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর আত্মত্যাগ ও তাওয়াক্কুলের স্মরণ। আল্লাহ বলেন:
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
“তোমার প্রতিপালকের জন্য সালাত আদায় করো ও কোরবানী করো।” (সূরা কাউসার: ২)
কোরবানীর ফযীলত
রাসূল (সা.) বলেন:
ما عمل آدمي من عمل يوم النحر أحب إلى الله من إهراق الدم…
“যুলহজের ১০ তারিখে মানুষের সর্বোত্তম কাজ হলো কোরবানী করা।”
(سنن الترمذي، رقم: ١٤٩٣، وقال: حديث حسن غريب)
كُتِبَ لَهُ بِكُلِّ شَعْرَةٍ حَسَنَةٌ
“প্রত্যেক পশমের বিনিময়ে কোরবানিদাতার জন্য এক একটি নেকি লেখা হয়।”
(مسند أحمد، رقم: ٢٣٠٥৭)
কোরবানীর হুকুম (মাযহাবে হানাফি):
হানাফি মাযহাব মতে কোরবানী ওয়াজিব। যার উপর কোরবানী ওয়াজিব—
শর্তসমূহ:
১. মুসলমান হওয়া
২. বালেগ ও আকলবান্দ হওয়া
৩. মুক্ত (গোলাম নয়) হওয়া
৪. নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া (ঈদের তিন দিন সময়কালে)
৫. মুকীম (মুসাফির না হওয়া)
دليل:
قال الإمام الكاساني:
الأضحية واجبة على الموسر عندنا وهو قول أبي حنيفة
(بدائع الصنائع، ج٥، ص٧٠)
নিসাব কী?
নিসাব হলো—স্বর্ণ, রূপা, নগদ অর্থ, বাণিজ্যিক পণ্য বা প্রয়োজনাতিরিক্ত মাল-মত্তা যার মূল্য ৬১২.৩৬ গ্রাম রূপা বা সমমূল্যের সম্পদের মালিক হওয়া।
কোরবানীর পশুর বয়স ও শর্ত:
হানাফি মাযহাব অনুযায়ী:
ছাগল/ভেড়া: এক বছর পূর্ণ
গরু/ষাঁড়: দুই বছর পূর্ণ
উট: পাঁচ বছর পূর্ণ
دليل:
قال النبي ﷺ:
لا تذبحوا إلا مُسِنَّةً، إلا أن يعسر عليكم فتذبحوا جذعة من الضأن.
(صحيح مسلم، رقم: ১৯৬৩)
কোরবানীর সময়:
যুলহিজ্জার ১০ তারিখ ঈদের নামাযের পর থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
دليل:
قال الإمام السرخسي:
ووقت الأضحية من بعد صلاة العيد إلى غروب شمس يوم النحر والثاني والثالث
(المبسوط، ج ١٢، ص ৯)
কোরবানীর গোশতের হুকুম:
তিন ভাগে ভাগ করা সুন্নত: আত্মীয়, গরিব, নিজে।
গরিব-মিসকিনদের দেওয়া সওয়াবের কাজ।
গোশত বিক্রি করা হারাম।
حديث:
من باع جلد أضحيته فلا أضحية له
“যে ব্যক্তি কোরবানির চামড়া বিক্রি করে, তার কোরবানী হবে না।”
(المستدرك للحاكم، رقم: ৭৫৩৫)
নারীদের উপর কোরবানী:
যদি কোনো নারীর কাছে স্বর্ণ, রূপা বা সম্পদ নিসাব পরিমাণ থাকে—তাহলে তার ওপরও কোরবানী ওয়াজিব হবে, যদিও তিনি গৃহিণী হন বা উপার্জনক্ষম না হন।
উপসংহার:
কোরবানী শুধু পশু জবাই নয়, বরং আল্লাহর আদেশে ত্যাগ, তাকওয়া ও আনুগত্য প্রকাশের প্রতীক। আল্লাহ বলেন:
لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ التَّقْوَىٰ مِنكُمْ
(সূরা হজ: ৩৭)