ওয়াসিম কামাল লিবিয়া থেকে
বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশার ১৮ মার্চ ২০২৫ তারিখে লিবিয়ার মাননীয় ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব তাহের আল-বাউর-এর সাথে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া) এবং দূতাবাসের মিনিস্টার (রাজনৈতিক) উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের শুরুতে উভয় পক্ষ লিবিয়া-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে পরস্পরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তাঁরা এই সম্পর্ককে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং দুই দেশের সরকার ও জনগণের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় ও বিস্তৃত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে উভয় পক্ষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে দুদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ফরেন অফিস কনসালটেশন সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়ে একমত হয়। এ প্রেক্ষিতে মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাবিত খসড়া স্মারকের প্রতি লিবিয়া ইতোমধ্যে সম্মতি প্রদান করেছে। স্মারকটি দ্রুত চূড়ান্ত করতে উভয় পক্ষ একযোগে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। এই সমঝোতা স্মারক ভবিষ্যতে দুদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করতে এবং নতুন নতুন সহযোগিতার ক্ষেত্র সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মান্যবর রাষ্ট্রদূত বৈঠকে লিবিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের সার্বিক কল্যাণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে লিবিয়া সরকারের সহযোগিতা ও বিশেষ সুদৃষ্টি কামনা করেন। বিশেষ করে তিনি লিবিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে কর্মরত বাংলাদেশি পেশাজীবীদের দীর্ঘদিন ধরে বেতন বিলম্বের কারণে সৃষ্ট দুর্দশার কথা উল্লেখ করেন। তিনি এই সমস্যা দ্রুত সমাধানে লিবিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ প্রেক্ষিতে মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশি পেশাজীবীদের ধৈর্য্য ও নিষ্ঠার প্রশংসা করেন এবং বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে দ্রুত সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।
এছাড়া বৈঠকে লিবিয়ায় অনিয়মিত অভিবাসন সংকট নিয়ে আলোচনা হয়। রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ সরকারের অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং এই বিষয়ে লিবিয়া সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি লিবিয়ায় বাংলাদেশি নাগরিকদের অপহরণ, মুক্তিপণের জন্য নির্যাতন এবং কর্মরত কর্মীদের অনাকাঙ্ক্ষিত আটকের ঘটনা বন্ধে লিবিয়া সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
বৈঠকের শেষ পর্যায়ে মান্যবর রাষ্ট্রদূত লিবিয়ায় বিপদগ্রস্ত ও মানবপাচারের শিকার বাংলাদেশি নাগরিকদের আইওএম, দূতাবাস এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে খুরুজ নিহায়ী-এর জন্য জরিমানা মওকুফ এবং একইসাথে দুখুল ও পুলিশ রিপোর্টসহ বিভিন্ন কাগজপত্র থেকে অব্যাহতি প্রদানের জন্য লিবিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা কামনা করেন। মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিবিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিকদের কল্যাণে মান্যবর রাষ্ট্রদূত উত্থাপিত বিষয়গুলো দ্রুত সমাধানে লিবিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করবে বলে আশ্বস্ত করেন।